× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টাঙ্গাইল-২ আসন

বিতর্কিত ছোট মনিরের আসনে মাঠ গোছাচ্ছেন তিন নেতা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ০০:১২ এএম

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৫:১২ পিএম

 সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল। প্রবা ফটো

সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল। প্রবা ফটো

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-২ আসনের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে নৌকার টিকিট পেতে এলাকায় ও কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। ছোট মনির ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের ক্ষমতার দাপটে টটস্থ নির্বাচনী এলাকার মানুষ। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা চাইছেন, একজন ভালো নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাক। কেন্দ্রেও এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। 

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নির্বাচনী হাওয়া বইছে।

২০১৮ সালে ছোট মনির টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধের একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। চুরি থেকে শুরু করে হত্যা-ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে মামলাও চলছে। 

এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অভিযোগের অন্ত নেই। দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে পাওয়া যায় না বললেই চলে। এমন প্রেক্ষাপটে টাঙ্গাইল-২ আসন আওয়ামী লীগের এবার ভালো প্রার্থী পেতে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।

ছোট মনিরের আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত তিনজনের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেনÑ ভূঞাপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ও প্রতিরোধযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ও ব্যবসায়ী খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল এবং গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু।

সম্ভাব্য এই তিন প্রার্থীই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা নৌকার টিকিট পাবেন। আর ছোট মনির বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তারও আশাবাদ টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র আবারও তাকেই বেছে নেবে। 

ছোট মনিরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ছোট মনিরের বিরুদ্ধে বড় বড় অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের হুমকি এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন আমিনুল ইসলাম আমিন নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

আওয়ামী লীগের আরেক নেতা আমিনুল ইসলাম নিক্সন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সুমন ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন ছোট মনির। তিনি আলোচিত নিক্সন হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী। পাশাপাশি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মির্জা আসিফ মাসুদসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য কয়েকজনের নামও বলেছেন সুমন। এই বক্তব্য-সংবলিত সুমনের একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়। 

বড় মনির ধর্ষণ মামলায় বর্তমানে কারাগারে। ১৭ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়, যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই কিশোরী একটি সন্তানেরও জন্ম দিয়েছেন। 

শুধু খুন-ধর্ষণের অভিযোগই নয়, ছোট মনির ও বড় মনিরের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগও রয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্পের তার চুরির মামলায় বড় মনির কারাগারে যান এবং ছোট মনির দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে বড় মনির জামিন পেয়ে বিদেশে চলে যান।

২০১৩ সালের দিকে দেশে এসে পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন তারা। পুলিশকে হাত করে জেলার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দখল নেন। ২০১৭ সালে হঠাৎ সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য প্রচার শুরু করেন ছোট মনির। মনোনয়ন পাওয়ার আগে ছোট মনির নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে তানভীর হাসান থেকে দাপুটে ‘ছোট মনির’ বনে যান তিনি। 

হঠাৎ করে বিদেশ থেকে দেশে এসে সংসদ সদস্য হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে ছিলেন না। তাদের নিজের পক্ষে ভেড়াতে না পেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বহু নেতাকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন ছোট মনির। অনেক নেতাকর্মীকে নিজের লোক দিয়ে মারধর করে এলাকা ছাড়িয়েছেন তিনি।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থাপনা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সিএনজি অটোরিকশা, বাস-ট্রাক থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে ছোট মনিরের বিরুদ্ধে।

টিআর, কাবিখা, কাবিটা বরাদ্দের টাকা অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলক ভেঙে তার নিজের নাম প্রতিস্থাপন করার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ছোট মনিরের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। 

ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ ত্রাণ দিতে যাওয়ার সময় গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠে ছোট মনিরের বিরুদ্ধে।

সম্ভাব্য তিন প্রার্থী মাঠে

টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত পথসভা ও মতবিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। মাসুদ ভূঞাপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

১৯৭৫ সালে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করে পরবর্তী সময়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকালে নির্যাতিত হন ও তিন বছর কারাভোগ করেন তিনি। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে। ১৯৮০ সালে কারামুক্ত হয়ে ইব্রাহিম খাঁ কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ভূঞাপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে ভূঞাপুর থানা যুবলীগের সভাপতি এবং একই বছর থানা আওয়ামী লীগের যুববিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। 

রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার বাবা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থসচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান খান ছিলেন টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য। ছেলে হিসেবে বাবার সংসদীয় আসনে ফিরতে চান রোমেল। তিনি ২০১৮ সালে টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। তবে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে এবার তিনি আশাবাদী। তার বোন অপরাজিতা হক বর্তমানে টাঙ্গাইলে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে রোমেলকে সঙ্গে নিয়ে তার বোন বিশেষ বিশেষ দিনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে রোমেলের সুসম্পর্ক আছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।

গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু এর আগেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। তিনি ১৯৭৮ সালে করটিয়া সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগে ইউনুস ইসলামের অবদান অনেক। তিনি গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ঝাওয়াইল ও ধোপাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণে অবদান রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি গোপালপুরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি গোপালপুর-ভূঞাপুরকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে ১২ দফা নিয়ে জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তিনি ঝাওয়াইল ও ধোপাকান্দি ইউনিয়নে পথসভা, উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রচার চালাচ্ছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা