× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভারতের চাওয়া উপেক্ষা করা কঠিন হবে

রাজবংশী রায়

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫১ এএম

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫২ এএম

অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান। ফটো সংগৃহীত

অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান। ফটো সংগৃহীত

বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবেশী ভারতের দেওয়া বার্তা দুটি বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সর্বত্রই তোলপাড় চলছে।

রাজনীতি, কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে এখন নানা আলোচনা। ওই বার্তার পক্ষে-বিপক্ষে মতামতও তুলে ধরা হচ্ছে এসব আলোচনায়। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা ওই বার্তা নিয়ে ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ওই বার্তাকে আমলে নিলেও বিএনপি নেয়নি।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে কোনো বিশেষ দল নয়, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং গণমাধ্যমে কী বলা হলো, কী লেখা হলো তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন তারা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, আঞ্চলিক রাজনীতির বিষয়ে এই ভূখণ্ডে ভারত ও আমেরিকার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তাই ভারত আমেরিকাকে কিছু বললে তারা তাদের স্বার্থে বলেছে।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে অতীতে ভারত বড় ভূমিকা নিয়েছে। এবার শুরুতে কিছুটা চুপ থাকলেও এখন সক্রিয় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া বার্তাটি এর প্রমাণ। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের তিন দিক ঘিরে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে সেটি তার জন্য উদ্বেগের। সুতরাং ভারত এটি কখনও চাইবে না। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে ভারতের সহায়তা লাগবে। তাই ভারতের মতামত ছাড়া তার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যুক্তরাষ্ট্রেরও কঠিন হবে। 

আবার অনেকে মনে করেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি২০-এর বৈঠক শুরু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেখানে আসবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে। ভারত জি২০-এর মঞ্চকে আলোচনার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চাইছে। 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তার নজরে আসেনি। আবার ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে কী বার্তা দিয়েছে, তা অফিসিয়ালি জানার সুযোগ নেই। সুতরাং এটি নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। তবে ভারত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। যেসব বন্ধুরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে বা বলছে, তাদের স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সংবিধানের বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়। তারাও এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে এবং মেনে নিয়েছে। সুতরাং শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। এর বাইরে কিছু হবে না। 

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় গত শুক্রবার ‘হাসিনাকে ক্ষতি করলে ক্ষতি সবার, আমেরিকাকে বার্তা’ শিরোনামে এবং জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে ‘শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা ভারতের’ শিরোনামে পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই দুই প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য হলোÑ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশে জামায়াতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সংকটের মুখে পড়বে। জামায়াতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে মন্তব্যগুলো করেছে, তা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে ভারত।

বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনার একটি জায়গায় মিল আছে। সেটি হলোÑ দুটি দেশই নিজেদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত মনে করে, বাংলাদেশে তার সমর্থিত সরকার না থাকলে জঙ্গি কার্যক্রম বাড়তে পারে, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের বাস্তবতা আমলে নিয়ে তারা হয়তো এমনটি ভাবছে। ভারত মনে করে, শেখ হাসিনার বাইরে কোনো সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে তা চীন ও পাকিস্তানের বেশি মিত্র হবে। এটি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। বৈশ্বিক রাজনীতির বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এক ধরনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। চীন ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন চিন্তা আছে। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতকে লাগবে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ লাভবান। সেই লাভের অর্থ দিয়ে তারা চীন-রাশিয়াসহ অন্যদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। কিন্তু চীন যে টাকায় পণ্য সরবরাহ করে, যুক্তরাষ্ট্র তা পারবে না। বাংলাদেশ এখনও অর্থনৈতিকভাবে ততটা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেনি। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া, বাংলাদেশ তার পক্ষে থাকবে। কিন্তু ভারতকে বাইরে রেখে সেটি করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হবে। কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিকল্পনা, বিশেষ করে চীনকে নিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশকে অস্থির করে তুললে ভারতেও অস্থিরতা বাড়বে। সেক্ষেত্রে দুইপক্ষের বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকবে। সুতরাং বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে তা ভারতকে উপেক্ষা করে গ্রহণ করা কঠিন হবে। আর সেটি করতে গেলে দুইপক্ষের জন্যই ক্ষতি হবেÑ এ বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত দিতে চাইছে বলে মনে করেন তিনি। 

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আনন্দ বাজার প্রতিবেদনে যা বলেছে, সেটি সত্য। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত নিজেদের স্থিতিশীলতার কথা বিবেচনায় নেবেÑ এটা স্বাভাবিক। আর সেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে বর্তমান সরকার ছাড়া অন্য কাউকে তার আস্থায় নেওয়া কঠিন। কারণ বিগত সময়ে তাদের আস্থা ভঙ্গ হয়েছে। সুতরাং ভারত এখন আর হয়তো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে ভারতের সহায়তা লাগবে। তাই ভারতের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করে ফেলবেÑ এমনটা মনে করেন না তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভারত বলে আসছে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। ওই প্রতিবেদন সত্যি হলে বুঝতে হবে ভারত কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। 

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সোচ্চার, সেটি কি কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন নয়, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার। তারা কোনো দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। কিন্তু ভারত সরাসরি একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা