× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেখ হাসিনা নির্বাচনে হারলে অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হবে

ফ্রন্টলাইনের প্রতিবেদন

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০০:৫৮ এএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১২:১০ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি রাজনৈতিক সংকট থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে। এই সংকট আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলের পরিসর সীমিত করে দিয়েছে এবং রাজনৈতিক বিরোধী, বিশেষ করে ইসলামি মৌলবাদের পোশাকধারীদের উৎসাহিত করছে। ভারতের দ্য হিন্দু গ্রুপের সাময়িকী ফ্রন্টলাইনে গতকাল রবিবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকার সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং ভারত-বিরোধী মনোভাব মোকাবিলায় একমাত্র নির্ভরযোগ্য বন্ধু। ভারত যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় বড় শক্তি হিসেবে স্বীকৃত, তারপরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় সে অবস্থানকে গুরুতরভাবে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে চীন। দেশটির স্বার্থ এবং পদচারণা অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে।   


ঠিক এ সময়টিতেই যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের প্রশাসন বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের পশ্চাদপসারণ’ ঠেকানোর জন্য এবং অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়াও র‌্যাবের বেশ কয়েকজন অবসারপ্রাপ্ত এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তার ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আধাসামরিক বাহিনীটির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সহায়তার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতি এবং বিরোধীদের দমন করে নিজ কর্তৃত্ব বজায় রাখার অভিযোগও উঠেছে। সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সবসময়ই অবাধ এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো তার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে সব রাজনৈতিক দল নির্ভয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।     
বাইডেন তার আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের নাম সরিয়ে দিয়েছেন। অথচ সেখানে ভারত ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মে মাসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বৈঠকে ওয়াশিংটন সফর করেছেন শেখ হাসিনা। সে সময় তাকে এড়িয়েও গেছে বাইডেন প্রশাসন।

শেখ হাসিনা একবার সংসদে বলেছেন, আমেরিকা বিশ্বের যে কোনো সরকারে পতন ঘটাতে পারে, বিশেষ করে সেটি যদি মুসলিম রাষ্ট্র হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থান তার বিরোধীদের উজ্জীবিত করেছে। বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে সমাবেশ ও বৈঠক করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলানো ইসলামি সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে উৎসাহিত অনুভব করছে।

শেখ হাসিনার আমলে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধপরাধের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। দেশটির শীর্ষ আদালত সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করেছে এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বাধা দিয়েছে।

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র


প্রায় এক দশক ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা আস্থা ও ভরসার এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন যা দুই দেশ এবং অঞ্চলের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করেছে।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ভারত। কিন্তু পরবর্তী কয়েক দশকে সে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেকটাই পড়তির দিকে ছিল। অনেক শাসকগোষ্ঠী ভারত বিরোধী বাহিনীকে বাংলাদেশের অঞ্চল ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উৎসাহিত করেছে। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সে সম্পর্ক আবার স্থিতিশীল হয়, ভারত বিরোধী উপাদান বিদায় নেয় সেখানে থেকে। কিন্তু বাইডেনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নতুন দিল্লি এবং ঢাকা।

শেখ হাসিনার আমলে অর্থনৈতিক রূপান্তর


শেখ হাসিনা যে দেশটির অর্থনীতিকে রূপান্তর করে দিয়েছেন তা ব্যাপকভাবেই স্বীকৃত। ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশের গত দশকে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশ। বেশির ভাগ দক্ষিণ এশিয় প্রতিবেশীর চেয়ে তাদের সামাজিক সূচকও ভালো।  তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এবং চীনের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দুই দেশই সেখানে নিজ প্রভাব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। লাইন অব কন্ট্রোলে ভারত ও চীনের উত্তেজনা সে অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের এতে এসে দাঁড়ানো পরিস্থিতিকে আরও প্রতিকূল করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বীতা বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলছে।

চীন আসছে কাছে


বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন চীনকে শেখ হাসিনার আরও কাছে নিয়ে এসেছে। জুনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করি সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা প্রশ্নে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে দ্বিমুখী বিপদে পড়ে গেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমশ ভালো হতে থাকা সম্পর্কের জেরে প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছে যে তারা শেখ হাসিনা সরকারের হয়ে বাইডেন প্রশাসনের ওখানে হস্তক্ষেপ করবে।
ভারত ভীত যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার না থাকলে তাদেরকে বৈরী শাসনের মুখোমুখি হতে হবে। চীন বিএনপির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে চীনের সুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শেখ হাসিনার বিরোধিতা করার পেছনে মূল কারণ চীনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের বিষয়টি, কথিত গণতন্ত্রের পশ্চাদপসারণ নয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ  


ভৌগলিক অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। ঢাকাকে ফ্রিগেট এবং সামরিক যান বহনকারী বিমান দিয়েছে তারা। জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি অ্যাগ্রিমেন্ট এবং অ্যাকিউজেশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট নামের দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় তারা বাংলাদেশের সঙ্গে। তবে বাংলাদেশ এতে সময় নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে ওই চুক্তিগুলোর বদৌলতে দৃঢ় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং প্রতিরক্ষার সঙ্গে জড়িত বাণিজ্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যেও সহযোগিতা বাড়বে।


তবে পালিওয়ালের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন মনে করছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে চীন। মার্কিন প্রশাসন মনে করছে, চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বিএনপি।
তবে অনেকের মতেই শেখ হাসিনা যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে বাংলাদেশ অনেক বছর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কষ্ট করবে এবং আরও একবার সন্ত্রাস ও মৌলবাদী বাহিনীর উর্বর ভূমি হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগের প্রস্থান শুধু ভারতের জন্য নয় গোটা অঞ্চলের জন্যই উদ্বেগ তৈরি করবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা