× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রেনেড হামলায় আহত মাহবুবা

মৃত ভেবে আমাকে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল

দীপক দেব

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০২ এএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:০০ এএম

মৃত ভেবে আমাকে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল

‘২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভা শেষ হওয়ার সময় নেত্রী (শেখ হাসিনা) জয় বাংলা বলার পর জয় বঙ্গবন্ধু বলতেও পারেননি, সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ শুনতে পেলাম; সে সময় আমার কানে ভেসে আসতে থাকল আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও এমন আর্তনাদ। কিন্তু কিছু দেখতে পারছিলাম না, চারদিক কেমন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। হঠাৎ আমার বুকের মধ্যে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কী যেন হলো। আমি রাস্তার ওপরে পড়ে গেলাম।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত হওয়ার পর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী মাহবুবা পারভীন এভাবেই হামলার ঘটনার কথা তুলে ধরেন।

সে সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা মাহবুবা পারভীন সাভার থেকে এসে কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। সাভার বাজারের পাশে বসবাসকারী মাহবুবা ওই দিনও বাড়ি থেকে কর্মসূচিতে এসেছিলেন। হামলার ভয়াবহতা যেসব চিত্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে ফুটে উঠেছিল, তার একটি এই মাহবুবা পারভীনের। ঘাড়ে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় অন্যদের সঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। ২১ আগস্টের সেই বর্বর হামলার বর্ণনার কথা প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেছেন মাহবুবা পারভীন। সাভারের নিজ বাড়িতে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়রা মৃত ভেবে বারান্দায় ফেলে রেখেছিলেন উল্লেখ করে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘সেদিন হাসপাতালের বয়রা আমাকে মৃত ভেবে বারান্দায় রেখে যায়। কিন্তু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের আশিসদা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনার পর ওয়ার্ডবয়দের জিজ্ঞেস করেন আমার বোনটা কোথায়, যাকে কিছুক্ষণ আগে এখানে রেখে গেলাম। তখন ওয়ার্ডবয়রা ওনাকে জানায়, বারান্দায় একটা রক্তাক্ত মহিলার লাশ পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আশিসদা সেখানে গিয়ে আমাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে আমাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘আমার দেহটা নাকি নিথর অবস্থায় ছিল, দেখে মৃত মনে হয়েছিল। তখন ডা. কনককান্তি বড়ুয়া দাদাকে আমাকে দেখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তখন হাসপাতালে যারা চিৎকার, আহাজারি করছিল, কনকদা তাদের আগে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন আমাকে মৃত মনে করে। কিন্তু আশিসদার পীড়াপীড়িতে আমার হাত ধরে যখন কনকদা বোঝার চেষ্টা করলেন, তখন বুঝলেন আমার দেহে প্রাণ আছে। আমাকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেন।’

মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘যে মুহূর্তে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে খবর পৌঁছায় যে আমি মৃত্যুপথযাত্রী, তখন তিনি আফম রুহুল হককে ডেকে আমাকে দেখতে বলেন। রুহুল হক আমাকে দেখে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তাকে কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব না। তখন আমার নেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন তাকে বোর্ড বসাতে বলেছিলেন। পৃথিবীর যে রাষ্ট্র এই মাহবুবাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়, সেখানেই তাকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মাহবুবার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। ওরা তো আমাকে মারতে চেয়েছিল, ওরা তো মাহবুবাকে মারতে চায়নি। এরপর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের পিকে ব্যানার্জি আমাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হলে ভারতে পাঠানো হয়।’

মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর সাভার স্বেচ্ছাসেবক লীগের বা আওয়ামী লীগের কেউ তার খোঁজ নেয়নি। এখনও কেউ তার খোঁজ রাখে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজখবর নেন। এ কারণেই এখনও বেঁচে আছি, না হলে কবেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতাম। তিনি আমাকে চলার জন্য এককালীন ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছেন। এরপর আবারও গণভবনে ডেকে ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। পাশাপাশি থাকার জন্য মিরপুরে ১ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন।’

মাহবুবা পারভীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘শরীরে ১ হাজার ৮০০ স্প্লিন্টার নিয়ে কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছি। টানা পাঁচ বছর হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেছি। হুইলচেয়ারে বসেই মিছিল-মিটিংয়ে গেছি। এখনও ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। কিন্তু আজ আমাদের কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে আমাদের জন্য চেয়ার রাখা হয় না।’

বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘এ ঘটনার প্রধান আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি জানাই। আজ অনেকেই এ বিচারের রায় কার্যকর দেখার আগেই মারা গেছেন। তাই বেঁচে থাকতেই এ বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে চাই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা