× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মশার ওষুধ আমদানিতে ষোলো আনাই জালিয়াতি

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১০:৪১ এএম

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৩ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল মাজেদ ২০২২ সালের ৩০ জুলাই অবসর-পরবর্তী ছুটিতে যান। অথচ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মশার ওষুধ বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমাদানিতে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট যে লাইসেন্স জমা দিয়েছে, সেখানে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ওই কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। তা ছাড়া মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া লাইসেন্সের নানা অসঙ্গতি পাওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও স্থানীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত সোমবার তারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের কাগজপত্র সঠিক কি নাÑ তা যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেয়। গত মঙ্গলবার সেই চিঠির জবাবে বেশ কিছু গরমিল পাওয়ায় মামলাটি করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বাকিবিল্লাহ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার বন্দর থানায় মামলাটি করেন। এতে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট বিটিআই আমদানিতে কাস্টমসে যে কাগজপত্র দাখিল করেছে, সেগুলো নকল বলে অভিযোগ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, লাইসেন্স জালিয়াতির অভিযোগে মার্শাল অ্যাগ্রোভেটসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই আমরা মামলা করেছি। 

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের নির্বাহী পরিচালক নাসিরউদ্দিন আহমদেকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেনÑ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিশ্বনাথ কর্মকার, মো. জাকির হোসেন ও জাকির হোসেনের সহাযোগী শহিদুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির অজ্ঞাতনামা পরিচালকরা। 

অভিযোগে বলা হয়, গত ২৬ জুলাই মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চীন থেকে পাঁচ টন বিটিআই আমদানি করে; যা স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ করে খালাস করা হয়। কিন্তু তারা সে সময় লাইসেন্সসহ যে কাগজপত্র দাখিল করেছে, তা তাৎক্ষণিক যাচাই করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যাচাইয়ের সেই সুযোগ ছিল না। নথিগুলো প্রমাণের জন্য সোমবার কাস্টম হাউস থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে একটি চিঠি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সেই চিঠির জবাব পেলে বেশ কিছু গরমিল পাওয়া যায়। 

কীটানশক নিবন্ধনের সনদে আমদানির লাইসেন্সে নম্বর ২৭ উল্লেখ করা হয়। কাস্টম হাউস যাচাই করে দেখেছে, লাইসেন্সটির দ্বিতীয় পাতায় Annexure-A এর ২৯ নং ক্রমিকের বালাইনাশকটির ব্র্যান্ড নাম বিটিআই, রেজিস্ট্রেশন নং- এপি-০৬৩৪, কীটনাশকের বর্ণনামূলক নাম : ব্যাসিলাস থুরিংয়েনসিস (সক্রিয় উপাদান)।

ওই দপ্তরের নথিপত্র ও বালাম বহি মোতাবেক আমদানি লাইসেন্স নম্বর ২৭-এর ২৯ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত বালাইনাশকটির ব্র্যান্ড নাম Koradex 50 SP, রেজিস্ট্রেশন নং- এপি ০৬৩৪, কীটনাশকের বর্ণনামূলক নাম : সাইরোমাজিন (সক্রিয় উপাদান)।

কীটনাশক নিবন্ধনের লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, ওই দপ্তরে সংরক্ষিত নথিপত্র ও বালাম বইয়ের সঙ্গে পাঠানো নিবন্ধন সনদের গরমিল রয়েছে। কীটনাশক নিবন্ধনের লাইসেন্স ২০/১০/২০২২ সঠিক নয়। এতে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ গত ৩০ জুলাই থেকে অবসর-পরবর্তী ছুটিতে রয়েছেন। যার ফলে ১০ অক্টোবর লাইসেন্সে তার স্বাক্ষর করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রকৃতপক্ষে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) ৭৯তম সভায় অনুমোদিত বালাইনাশক ‘Koradex 50 SP (Cyromazine) AP-6034’ এর নিবন্ধন সনদে তৎকালীন পরিচালক জেডএম সাব্বির ইবনে জাহান স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি। এমন অবস্থায় সরকারি দপ্তরে মিথ্যা ও জাল দলিলাদি দাখিল করার দায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা গতকাল রাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিটিআই জালিয়াতি নিয়ে কাস্টম হাউস থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা তা মামলা হিসেবে রুজু করেছি।

এর আগে জালিয়াতির অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করে ডিএনসিসি। সোমবার রাতে ওই মামলায় নাসির উদ্দিন ও মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ছাড়াও চীনা নাগরিক লি কিয়াংকে আসামি করা হয়। তা ছাড়া দরপত্র যাচাই কমিটিতে থাকা সাবেক একজন কর্মকর্তাসহ তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দিয়েছে সংস্থাটি। 

দেশে যখন এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ হু হু করে বেড়েই চলছে, ঠিক এই মুহূর্তে মশার ওষুধ আমদানিতে জালিয়াতির ঘটনা অবাক হওয়ার মতো। জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়ায় এত পরিমাণ জালিয়াতি ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে; যেখানে জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সিটি করপোরেশন ছাড়াও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। 

গত ৭ আগস্ট ডিএনসিসি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিল, সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল থেকে মশা মারতে পাঁচ টন বিটিআই আমদানি করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লি কিয়াং নামে এক বিদেশি নাগরিককে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ও বিটিআই বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, লি কিয়াং বিটিআই বিষয়ে ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। 

কিন্তু বিটিআই রপ্তানির বিষয়টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি অস্বীকার করে। একই সঙ্গে লি কিয়াংও তাদের কোনো প্রতিনিধি নয় বলে জানায়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে চিঠি দেয় ডিএনসিসি। সেই চিঠির জবাবে চীনের ‘শানডং গানন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সামনে আনে বিটিআই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট। কিন্তু এর সঙ্গেও বেস্ট কেমিক্যালের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই বলে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে তারা জোর দিয়ে এটিও বলেছে, ‘আমরা কারও কাছে পাঁচ টন বিটিআই বিক্রি করিনি। সুতরাং এই পাঁচ টন বিটিআই কোনোভাবেই বেস্ট কেমিক্যাল সরবরাহ করেনি।’ 

বিভিন্ন সময় সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। তবে এসব বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করেও মর্শাল অ্যাগ্রোভেটের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের বক্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে ফোন-এসএমএস করাসহ তাদের অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা