এসসিআরএফের প্রতিবেদন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৫:০৩ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৫৯ পিএম
প্রবা ফাইল ফটো
প্রায় এক বছর আগে চালু হয়েছে পদ্মা সেতু। ফলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের নদীপথের ভোগান্তি অনেকটা কমে এসেছে। তবে ভাটা পড়েছে লঞ্চ ব্যবসায়। পদ্মা সেতুর চালুর আগে প্রতিদিন ঢাকা থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলগামী লঞ্চ ছিল ৮০টি। এক বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে লঞ্চ কমেছে ২৫ শতাংশ। আর প্রতিদিন ঢাকা থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লঞ্চযাত্রী ছিল ৫০ হাজার; যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজারে। এই হিসাবে এক বছরে লঞ্চযাত্রী কমেছে ৩৪ শতাংশ।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে নৌ পরিবহন বিশেষজ্ঞ, নৌযান মালিক ও শ্রমিক নেতা, লঞ্চ কর্মচারী, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসসিআরএফ জানায়, আগে ঢাকা থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার যাত্রী। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এসব জেলার মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করে। ফলে নৌপথে যাত্রী ও লঞ্চ-দুটোই কমেছে।
লঞ্চমালিকদের দাবি উল্লেখ করে এসসিআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা চরম সংকটে পড়েছে। তবে এ দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেননি তারা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, লঞ্চ ব্যবসা এখনও লাভজনক। তবে আগের তুলনায় মুনাফার হার কমেছে। প্রতিদিন ৩০-৩৫টি লঞ্চে মাত্র ৫-৬ হাজার যাত্রী ঢাকা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে সরকারি তথ্যমতে, প্রতিদিন অন্তত ৬০টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের বরাত দিয়ে এসসিআরএফ জানায়, গত ১৯ আগস্ট ঢাকা নদীবন্দর থেকে সদরঘাট টার্মিনাল ও পার্শ্ববর্তী ঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ৬২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এর মধ্যে চাঁদপুর অঞ্চলে ২২টি, বরিশাল অঞ্চলে ১০টি, ভোলা অঞ্চলে ১৪টি, পটুয়াখালী অঞ্চলের ৬টি এবং অন্যান্য অঞ্চলের ১০টি লঞ্চ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবসায় মন্দার কারণে মালিকেরা এক বছরে অন্তত ২০টি লঞ্চ ভেঙ্গে যন্ত্রাংশসহ বিক্রি করে ফেলেছেন। এ ছাড়া আরও ছয়টি লঞ্চ ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে উপকূলীয় জনপদসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়েছে। মানুষ সড়কপথে স্বল্পসময়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করছে। এতে ঢাকা ও বরিশালের মধ্যে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমে গেছে লঞ্চের যাত্রীসংখ্যা।
তবে প্রতিবেদনে যাত্রী ও লঞ্চ চলাচল কমে যাওয়ার পেছনে সড়কপথে পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি নাব্যতাসংকট ও ঢাকার যানজটকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যথাযথভাবে নদী খনন ও পলি অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া যানজট বিড়ম্বনায় সদরঘাট টার্মিনালে যেতে বহু মানুষের অনীহার কারণেও লঞ্চের যাত্রী কমে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।