ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:২৮ এএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত মনিটরিংয়ের কথাও জানানো হয়েছিল। এসব মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ে প্রায় ১২টি অধিদপ্তর ও সংস্থা থাকলেও শুধু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেই বাজারে অভিযান ও মনিটরিং করতে দেখা যাচ্ছে। বাকিদের কোনো অভিযান চোখে পড়ে না।
নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন ছাড়াও রয়েছে র্যাব ও জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম। বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবিধার জন্য করা হয়েছে আলাদা আইন। তার মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রথমবারের মতো ডিম প্রতিটি ১২ টাকা করে ৪৮ টাকা হালি, আলু ৩৫-৩৬ এবং পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তার আগে তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতিমাসে রান্নার জ্বালানি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দামও ঠিক করে দিচ্ছে। এসব পণ্যের কোনোটিই সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে না।
ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, শুক্র থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চার দিনে ২৫২টি বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ১৮ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের এখনও ১৭টি জেলায় কর্মকর্তা নেই। আমাদের সহকারী পরিচালকের তিনটি পদ ফাঁকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত শনিবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় আলুর হিমাগার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আজ মঙ্গলবার বগুড়া জেলায়, আগামীকাল রংপুর ও পরশু নীলফামারী জেলায় আলুর হিমাগার পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হবে। আশা করি, এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ আলুর দাম ৩৪ বা ৩৫ টাকার কাছাকাছি চলে আসবে।
ডিমের খুচরা দোকানে অভিযান চালাচ্ছেন, কিন্তু বড় কোম্পানির বা বড় প্রতিষ্ঠানে অভিযান নেই কেনÑ এ বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিমে মাত্র ৫০ পয়সা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আর ডিমের চেয়ে আলুটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই আলুর হিমাগারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সহকারী বাণিজ্য পরামর্শক মো. রিফাত হাসান বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাঠে কাজ করছে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কারা বাজার তদারকিতে আছে তা জানা নেই।
তিনি বলেন, আজ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হবে। আজকে বাড্ডায় তিনি অভিযান পরিচালনা করবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী খামারিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ডিমের দাম খামার পর্যায়ে সাড়ে ১০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি আছে, তাই ডিমে সংকট হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে বাজার তদারকিতে দেখা যাচ্ছে না কেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ উৎপাদন করা। সেই কাজ করছি। তা ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। তবে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব আমাদের নয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাসুদ করিমকে মোবাইলে ফোন করলে পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ-১) প্রণব কুমার সাহা বলেন, বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলায় বাজার কমিটিসহ অন্য অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেনÑ যাতে সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্যগুলো বিক্রি করা হয়।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল হাসনাত জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মো. মাহমুদুল হাসান জানান, তারা মূলত অত্যাবশ্যকীয় ১১টি পণ্যের দাম দেখে থাকেন। এসব যদি আমদানি করা হয়, তাহলে কত দাম পড়বে? ভ্যাট, ট্যাক্স কী হবেÑ সেটির একটি হিসাব কষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় নিজস্ব চিন্তার আলোকে সিদ্ধান্ত দেয়। বর্তমানে যেমন চিনি ও তেলের মূল্যটি কী হবেÑ তা নির্ধারণে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।