× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৩০০ কোটি টাকা পাওনা রেখে এখন সমিতি বন্ধে চিঠি

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০০:৪৪ এএম

আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২৩ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে ওই তদন্ত চলমান অবস্থাতেই গত ৫ মে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে সমিতিটির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আবেদন করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। সমবায়ের তদন্ত কমিটি ‘দুর্নীতিবাজদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে তাকসিম এ খানের এমন কর্মকাণ্ডকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছেন কমিটির নেতারা। কর্মচারীদেরও অভিযোগ, ‘দুর্নীতিবাজদের’ বাঁচাতে এমডি সমিতি বন্ধের পাঁয়তারা করছেন।

১৯৭৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য ৩ হাজার ২১৩ জন। সমিতিটিতে ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এরই মধ্যে গত ৫ মে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সমিতির ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ এনে নিবন্ধন বাতিল ও কার্যক্রম বিলুপ্ত করতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব বরাবর আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক মো. আহসান কবীরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্ত শেষ করে সম্প্রতি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি ও ওয়াসার এমডির চিঠির একটি কপি প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে এসেছে।

নিবন্ধন বাতিল হলে বেহাত হবে সমিতির ৬৮ কোটি টাকা 

তদন্ত দলের রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছে, নিবন্ধন বাতিল হলে সমিতিটির ৬৮ কোটি টাকা বেহাত হতে পারে; পাশাপাশি সাধারণ সদস্যরা বঞ্চিত হবেন তাদের অধিকার ও প্রাপ্য থেকে। রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, ‘সমবায় সমিতি আইন ২০২১ (সংশোধিত ২০০২ ও ২০১৩)’-এর ৪৯ (১)(ঙ) ধারায় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা সমবায় অফিস পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে তদন্ত দলের দুজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তারা জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ওয়াসার এমডির চিঠিতে যা আছে

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব বরাবর দেওয়া ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা জেলা সমবায় অফিস থেকে বিভিন্ন বছর ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী সমিতির অডিট করা হয়েছে। অডিটে আর্থিক বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন ব্যয় করা, পিপিআই প্রকল্পের আর্থিক হিসাব না দেওয়া, অডিট রিপোর্টে সংশোধনী দাখিল না করাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমিতি কোনো নির্দেশনা পালন করেনি। 

চিঠিতে বলা হয়, সমিতির একটি বিশেষ খাত হচ্ছে পিপিআই প্রকল্প। এ খাতে ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার সম্পৃক্ততা ছিল। এ আয় ও ব্যয় সম্পর্কে সমবায় অডিট দল কখনোই অডিট করার সুযোগ পায়নি। সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির কারণে অডিট ছাড়াই এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। থানা সমবায় অফিস অডিট করে গেছে; কিন্তু এ অনিয়মের জন্য ব্যাখ্যা তলব, শাস্তি প্রদান ও সমিতির নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

জেলা ও থানা সমবায় অফিস কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিলে সমিতির প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা তছরুপ হওয়া থেকে রক্ষা পেত। 

চিঠিতে মন্তব্য করা হয়, অডিট নির্দেশনা না মেনে সমিতির বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপের কারণে এর নিবন্ধন বাতিল করে কার্যক্রম বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া সঙ্গত। তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তদন্তকালে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে, ওয়াসা কর্মচারী সমিতির সাধারণ সদস্যদের বঞ্চিত করে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য আর্থিক বিধি না মেনে কয়েকশ কোটি টাকা তছরুপ করেছেন।

‘ওয়াসার কাছে সমিতির পাওনা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা’

এদিকে তদন্ত দলের কাছে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যায় ঢাকা ওয়াসার কাছে সমিতির এখনও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘সমিতির উপ-আইন মতে ঢাকা ওয়াসায় স্থায়ী/নিয়মিত ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সমিতির সদস্য হওয়ার যোগ্য। চুক্তিভিত্তিক হিসাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এ ধরনের অন্য পদে নিয়োগ পাওয়া কেউ এ সমিতির সদস্য নয়। এমনকি আইনত সদস্য হওয়ার যোগ্যও নয়। সমবায় আইনমতে, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে এ সমিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালানো কিংবা সমিতির কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া আইনত অবৈধ।’ কমিটির সদস্যরা আরও বলেন, ‘সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির গত নির্বাচনে বাধা দেওয়া, ব্যাংক হিসাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর নিপীড়নমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নির্বাচন করার অপরাধে বিভাগীয় মামলা, সাসপেন্ডসহ পিআরএলে যাওয়ার দেড় মাস পর সমিতির সম্পাদককে ব্যাকডেটে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন করার অপরাধে বিভাগীয় মামলা তদন্তে প্রমাণ করতে না পেরে ঢাকা ওয়াসার এমডি এখন সমিতির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে পত্র দিয়েছেন।’

তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি তদন্ত দলের কাছে জানায়, ‘প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত আছেন ২০০৯ সাল থেকে। অপরদিকে পিপিআই প্রকল্প চালু হয় ১৯৯৭ সালে। ওয়াসায় যোগ দেওয়ার দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর তাকসিম এ খানের মনে হলো এ সমিতিতে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, তা-ও আবার প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর। বিষয়টা রহস্যজনক নয় কি?’

এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত বুধবার তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি সমবায় অধিদপ্তরের তদন্ত দলও তার বক্তব্য নিতে পারেনি। 

এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজনে গত ৯ জুলাই তাকসিম এ খানের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন তদন্ত দলের সদস্যরা। এ সময় তারা এমডির কাছে জানতে চান, তথ্য-উপাত্তের জন্য চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না। এমডি তদন্ত দলের আহ্বায়কের ফোন নম্বর সংরক্ষণ করেন এবং পরে জানাবেন বলেন। কিন্তু পরে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সরকার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘উনি (তাকসিম এ খান) তো আমাদের সদস্যই না। সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আবেদন করার কোনো এখতিয়ার তার নেই। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন। কর্মচারীদের স্বার্থ বাদ দিয়ে দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে সমিতি বন্ধের পাঁয়তারা করছেন।’

অভিযোগ তদন্তে দুদকের দুই টিম

এদিকে ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুটি টিম গঠন করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে উপপরিচালক এসএম আখতার হামিদ ভূঁইয়া অনুসন্ধান করছেন কর্মচারী সমিতির ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি। এ কমিটির অন্য সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান।

দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন অন্য একটি টিম পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধরবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের ১ হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের ১ হাজার কোটি টাকা, গুলশান বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা