প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩ ২১:১৮ পিএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:১৭ পিএম
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় কলেজ থেকে ঘুরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ নানান দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে সারাদেশের তিনদিনের কর্মবিরতি চলছে। বুধবার (১১ অক্টোবর) শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে বন্ধ ছিল সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে বন্ধ ছিল ক্লাস ও পরীক্ষা।
এই কর্মবিরতির ফলে বিভিন্ন দপ্তর-উপ-দপ্তরেও বন্ধ ছিল সকল কর্মক্রম। ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছাড়াও শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সকল ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, এবং দাপ্তরিক সকল কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র সরকারি কলেজ নয়, বরং দেশের সকল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি টিটি কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, সকল শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, নায়েম, ব্যানবেইসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা এ কর্মসূচিতে পালন করেছেন।
ঢাকা কলেজে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো শ্রেণিকক্ষই খোলা হয়নি। বিভাগগুলোতে শিক্ষকদের উপস্থিতি নেই। কর্মচারীরাও আসছেন ঢিমেতালে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থী। ক্লাসরুম বন্ধ দেখে তাদের অনেকেই গ্যালারির সামনের করিডোর, প্রশাসনিক ভবন, বিজয় চত্বর, পুকুর পাড় এবং ক্যাফেটেরিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে হাঁটতে দেখা যায়।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেও আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো আশ্বাস পাইনি। কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। আজকের কর্মসূচি পালনের পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, দেশে বিভিন্ন ক্যাডারগুলোর মধ্যে এক ধরনের ডিসক্রিমিনেশন (বৈষম্য) রয়েছে। যেটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সংবিধান পরিপন্থি বিষয়। কেননা সংবিধানের স্পষ্ট বলা রয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রাপ্য হবেন। প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নির্ধারণের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু আমরা শিক্ষা ক্যাডারে একটি ভিন্ন চিত্র দেখেছি। অন্য অনেক ক্যাডারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য বিরাজ করছে। কিন্তু এই বৈষম্যগুলো নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বৈষম্যগুলো দূর করতেও বলেছেন। আমরা দেখেছি এই নির্দেশনা অমান্য করে বৈষম্য দূর করার বদলে দিন দিন বরং বৈষম্য বাড়ছে।
তিনি আরও বলে, আমাদের মনে হচ্ছে প্রশাসন যন্ত্রে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী-দেশবিরোধী চক্র বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য এই বৈষম্য তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কারণ পেশাজীবীদের মধ্যে যদি বৈষম্য থাকে তাহলে সেখানে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষা ক্যাডারে নতুনরা আগ্রহ হারাচ্ছে। এখানে যারা নতুন করে আসেন তারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসেন। কিন্তু তারা এসে যখন দেখেন এই সার্ভিসে বহু ধরনের বৈষম্য রয়েছে। তখন তারা এতে অংশগ্রহণের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন এবং অনেকেই এখান থেকে চলে যান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এ পরিচালক বলেন, শুধুমাত্র বৈষম্য নয় বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন, মর্যাদার প্রশ্ন। এমন পরিবেশে আমাদের নতুন সহকর্মীরা হতাশ হচ্ছেন। ৮/১২ বছরেও একটা পদোন্নতি হচ্ছে না। ১৫-১৮ বছরেও দ্বিতীয় পদোন্নতি হচ্ছে না। বছরের পর বছর পদোন্নতিহীন থেকে সমাজে, পরিবারে নিগৃহীত অবস্থায় তাদের বিদায় নিতে হচ্ছে। আমাদের ১৬ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ২৬-২৭ বছর হয়েছে এখনো সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এমন করে পুরো শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এটি আমরা হতে দিতে পারি না। সেজন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করেছি এবং আগামী তিনদিন পালন করব। শুধু কলেজ নয় বরং সকল অফিসেও কিন্তু এটি পালিত হচ্ছে।