বিএফআরআইর নতুন মহাপরিচালক ড. জুলফিকার আলী

পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. মো. জুলফিকার আলী বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে যোগদান করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) তিনি যোগদান করেন। 

এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। মহাপরিচালক পদে যোগদানের আগে ড. জুলফিকার আলী একই ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে সদর দপ্তরের গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারে সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রপ্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ড. জুলফিকার আলী বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব স্ট্যার্লিং থেকে ফিশ নিউট্রিশন ও ফিড টেকনোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ফিশারিজ ইন ফিশারিজ টেকনোলজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান এবং ১৯৮৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ফিশারিজ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮০ সালে নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৮২ সালে রংপুরের কারমাইকেল সরকারি কলেজ উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।

ড. জুলফিকার আলী ওয়ার্ল্ড ফিশ-বাংলাদেশের জাতীয় পরামর্শক হিসাবে ভূমিকা রাখেন। তিনি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় জাতীয় পরামর্শক, মৎস্য খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। 

দেশের ‘মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০’ এবং ‘মৎস্যখাদ্য বিধিমালা ২০১১’ প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন ড. জুলফিকার আলী। মৎস্য অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল গবেষণাগারে খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি, দেশে মৎস্য চাষে ব্যবহৃত ফিড এডিটিভস ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি বিষয়ে জরিপ এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদনে সারা দেশে ১২০ বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারিগরি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবলকে প্রশিক্ষণ দেন। 

ড. জুলফিকার আলী বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্যের ফরমুলেশন, খাদ্য প্রয়োগ কৌশল এবং খামার উপযোগী স্বল্পমূল্যের মৎস্য খাদ্য তৈরির পিলেট মেশিন উদ্ভাবন করেন। মৎস্য ও চিংড়ির মানসম্মত, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২০০৪ সালে একটি গাইড বই প্রণয়ন করেন। ‘মৎস্যখাদ্য উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন বিষয়ে প্রতিপালনীয় দিকনির্দেশিকা’ প্রণয়ণে অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. জুলফিকারের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ০৫টি। ইনস্টিটিউটে তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সংখ্যা পাঁচটি। তার গবেষণা মনোগ্রাফের সংখ্যা (বুকলেট, লিফলেট ও বুলেটিন) ৩৫টি। তিনি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এস শিক্ষার্থীদের আটটি থিসিসের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দুটি পিএইচডি থিসিস মূল্যায়ন করেন। তিনি বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গর্ভনরসেরও সদস্য।   

ব্যক্তিজীবনে তিন সন্তানের জনক ড. জুলফিকার আলী। তার সহধর্মিনী নাজমুন নাহার (নিপু)। ড. মো. জুলফিকার আলী ১৯৬৫ সালের ২৫ জুন নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ডা. মোঃ আবুল কাশেম এবং মাতার নাম এফতারা বেগম। 

ড. জুলফিকার আলী ১৯৮৯ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্রের মৎস্য খাদ্য এবং পুষ্টি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।