ফয়সাল খান
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম
ঢাকার দয়াগঞ্জে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। প্রবা ফটো
১২ বা ১৩ বছর বয়স হবে সজলের (ছদ্মনাম)। খুব সকালে তার সমবয়সি ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সজল তখন রাজধানীর টিকাটুলীতে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে। তবে সে নিজে পরিচ্ছন্নতাকর্মী না। এই কাজ তার মা অরুনার। মা দুই দিন ধরে অসুস্থ। মায়ের শরীর খারাপ থাকলে তাকে ঝাড়ু হাতে তুলে নিতে হয়। সজলকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাসে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে আলাপকালে অসুস্থ পরিচ্ছন্নতাকর্মী অরুনা বলেন, ‘আমাদের কোনো ছুটি নেই। প্রতিদিনই কাজ করতে হয়। কাজ না করলে বেতন হয় না। অসুস্থ হলে বা অন্য কোনো কাজ থাকলে ছেলের হাতে ঝাড়ু তুলে দেন।’
শুধু সজলই নয়, বাবা-মায়ের পরিবর্তে ঝাড়ু হাতে তুলে নেয় এমন হাজারো শিশু-কিশোর। ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে বাবা-মাও তাদের দক্ষ করে তোলার জন্য এ কাজে উৎসাহিত করেন। কেননা পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে চাকরি পেলে আবাসন নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকে না। প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর ধলপুর ও টিকাটুলীতে এমন ৮-১০ জন শিশু-কিশোরের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের অনেকেই স্কুলেও যায়। পড়ালেখা করে অন্য ছেলেমেয়েদের মতো বেড়ে উঠতে চায়। কেউবা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নও দেখে।
কিন্তু সেই স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আবাসনের চিন্তা। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে সব বাদ দিয়ে কীভাবে ঝাড়ুদার হওয়া যায় সেই স্বপ্নই দেখে সুইপার কলোনির বেশিরভাগ শিশু-কিশোর। বুঝতে শেখার পর তাদের বাবা-মাও সন্তানদের মন-মগজে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হওয়ার লক্ষ্য ঢুকিয়ে দেন। কেননা সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে একটি চাকরি পেলে এই পল্লীতে মাথা গোঁজার জায়গা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তা না করে অন্য কোনো পেশায় গেলে যেকোনো সময় উচ্ছেদের ঝুঁকি থেকে যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানকার ছেলেমেয়েদের প্রধান সমস্যা পরিচয় বিড়ম্বনা। স্কুল-কলেজে ভর্তি হলে নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে খোদ বন্ধুদের কাছেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাদের। আবার অসম্মানের ভয়ে কন্যাশিশুদের পড়াশোনায় অনীহা দেখা যায় অভিভাবকদের। বেশিরভাগ মেয়ের বাল্যবিবাহের প্রচলনও আছে এসব পল্লীতে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ঢাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মূলত ধলপুর, গোপীবাগ, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ ও গাবতলী এলাকার বিভিন্ন পল্লীতে বসবাস করেন। এসব এলাকায় তাদের আলাদা পল্লী রয়েছে। যা স্থানীয়দের কাছে ‘মেথর পট্টি’ বা ‘সুইপার কলোনি’ হিসেবে পরিচিত। তবে এখানে কারও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো জায়গা নেই। সরকারি জায়গায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে বসবাস করছেন তারা। এর মধ্যে তেলেগু, হরিজন ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। তারা সংস্কৃতি, পেশা এবং অর্থনৈতিক কারণে অন্য জায়গায় বসবাস করতে পারেন না।
ধলপুরে প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বসবাস। যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন তেলেগু সম্প্রদায়ের এসব মানুষ। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সেখানকার বাড়িঘর উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় তেলেগু কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট সোসাইটির সদস্য সচিব ইউকে নন্দম জয়ের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আমাদের কর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা করবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা যেহেতু এ দেশের নাগরিক তাই আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করাও সরকারের দায়িত্ব। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে থাকা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু একটু থাকার জায়গার কারণে অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। পড়াশোনা করলেও যে তারা ইচ্ছামতো পেশা বেছে নিতে পারে না। ভালো চাকরি করতে গেলেও নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’
ইউকে নন্দমের কথার সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় বৌরসেট্টি তৃনাথের সঙ্গে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবা-মায়ের সঙ্গে দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনিতে বড় হয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও মানসম্মত একটি চাকরি পাননি। যার ফলে মাস্টার্স পাস করেও শহর পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন প্রতিদিন।
আলাপকালে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই মায়ের সহায়ক হিসেবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ইনস্যুরেন্সে কাজ করতে হয়েছে। একজনের অনুরোধে এবং অনেকের সাহায্য সহযোগিতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
তৃনাথ বলেন, ‘আমাদের পল্লীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত হয়ে বেড়ে ওঠার বড় বাধা পরিবেশ ও পরিচয়। ছেলেদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ঝাড়ু হাতে তুলে নিতে হয়। ৮-১০ বছর বয়স হলেই বাবা-মা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে চাকরির জন্য তাদের প্রস্তুত করেন। অনেকেই এ জন্য টাকাও জমান।’
ইউকে নন্দম জয় একটি সরকারি অফিসের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তেলেগু সম্প্রদায়ের নেতা। এরপরও তার ঘর উচ্ছেদের কবল থেকে রেহাই পায়নি। তাৎক্ষণিক কোনো পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। পরে অবশ্য মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের একটি জায়গা দেওয়া হয়। যেখানে অস্থায়ী ঘর করে থাকছেন জয়সহ এ সম্প্রদায়ের লোকজন।
তবে ইউকে নন্দম জয়ের মতো আবাসনের চিন্তা করতে হয়নি সিটি করপোরেশনে কর্মরত ক্লিনারদের। তাদের অনেকেই সিটি করপোরেশনের তৈরি বহুতল ফ্ল্যাটে জায়গা পেয়েছেন। তাদের একজন সাঙ্গু নাথ। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আগে নিজে ঘর তৈরি করে থাকতাম। সিটি করপোরেশন ভেঙে দেওয়ার পর বড় ফ্ল্যাটে দুটি ঘর দিয়েছে। এখানে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই আছি।’
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন আমার চাকরি থাকে তত দিন এখানে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কেউ মারা গেছে কিছুদিন পরই পরিবারকে ঘর ছাড়ার নোটিস দেওয়া হয়। তাই আমরা চেষ্টা করি ছেলে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের এ পদে চাকরি দেওয়ার জন্য।’
ডিএসসিসি অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘উচ্ছেদের পর আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। বাকিদেরও থাকার জায়গা দেওয়া হয়েছে।’
ইট-পাথরের এই নগরীতে নিরাপদে বসবাসের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও নিজেদের সন্তানদের এই চাকরি দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন। সন্তান বড় হলে নিজের কাজে পাঠানোর পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদবির, এমনকি অনেকেই ঘুষ দিয়েও নিজের সন্তানকে এ পদে চাকরি দিতে চান বলে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
স্কুল-কলেজে পরিচয় বিড়ম্বনা
ধলপুর, গোপীবাগ, ওয়ারী ও গাবতলীতে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনেক ছেলেমেয়েই পড়াশোনা করতে চায়। সবাই মেথর বা সুইপার হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চায় না। এ লক্ষ্যে অনেকেই পড়াশোনা করছে। কিন্তু সেখানেও বিড়ম্বনার শেষ নেই।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানরা বলেন, ‘স্কুল-কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে কোথায় থাকো। বাবা-মা কী করে। আমরা সুইপার কলোনির কথা বলি না। বাবা-মায়ের পেশাও গোপন রাখি। কিন্তু একসময় না একসময় সবাই তা জেনে যায়। পরে অনেকেই কটূক্তি করে। আবার কেউ ভিন্ন চোখে দেখে। অনেকেই মিশতে চায় না।’
গাবতলী ক্লিনার কলোনিতে বড় হয়েছেন সরস্বতী দাস। কিছুদিন আগে তার বিয়েও হয়েছে। স্বামী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত। সেই সুবাধে ধলপুরে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তারা। তাই আবাসনের সমস্যা নেই। মূলত এ কারণেই শতপ্রতিকূলতার মধ্যেও সরস্বতী মাস্টার্সে ভর্তি হতে পেরেছেন। পাশাপাশি একটি এনজিওতে চাকরিও করছেন।
আলাপকালে সরস্বতী বলেন, ‘আমাদের কলোনিতে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পেছনে মূল বাধা হলো দরিদ্রতা ও পরিচয়। আমি অনেকের সহযোগিতা নিয়ে পড়ালেখা করেছি।’
তিনি বলেন, এত প্রতিকূলতা অতিক্রম করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। এমনি নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তার ওপর মেয়েদের পড়াশোনা করাতে চাইবে কে!
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পড়াশোনার পেছনে অনেক সংগ্রাম রয়েছে। স্কুল বা কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে একটু কিছু হলেই নানাভাবে খোঁটা দিত। তুই তো সুইপার পল্লীতে থাকস। ওদের মেয়ে তুই… ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব খারাপ লাগত, কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল যেকোনো মূল্যে পড়াশোনা করতে হবে।’
এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও সরস্বতীর মতো অনেকেই পড়াশোনা করছেন। গত বছর গোপীবাগে বসবাসরত তেলেগু সম্প্রদায়ের মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ পল্লী থেকে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম কারও ভর্তি হওয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ভর্তি হওয়ার সময়ই সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করেছি। কিন্তু এখনও অনেক বন্ধুর কাছে আমার আসল পরিচয় বলিনি। কেউ জিজ্ঞেস করলে পাশের এলাকা মানিকনগরের ঠিকানা বলি।’
অসম্মানের ভয়ে পড়াশোনায় অনীহা ও বাল্যবিবাহ
ধলপুর ও গোপীবাগে পরিবারের প্রধান এমন ১০-১২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তাদের মূল বক্তব্য কন্যাদের বিয়ে দিতে পারলেই নিজেদের টেনশনমুক্ত মনে করেন। তাই মেয়ে বড় হওয়ার আগেই ভালো ছেলে খুঁজতে থাকেন। তাদের পড়ালেখার ব্যাপারেও তেমন আগ্রহ দেখান না।
একজন অভিভাবকের কথা, ‘সারা দিন কাজ নিয়ে আমরা (বাবা-মা) এখানে, ওখানে থাকি। মেয়ে বড় হয়েছে (বয়স ১২)। পড়াশোনার আর দরকার নেই। এখন ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিব।’
এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘এই কলোনিতে অনেক ধরনের মানুষ আসে। আমাদের সবাই নিচু মনে করে। আমাদের সঙ্গে কোনো অন্যায় হলেও তার বিচার পাব না। তাই মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি পারি বিয়ে দিয়ে দিব।’
ধলপুর সুইপার কলোনিতে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন কৃষ্টিনা। তিনি জানান, তার পরিবারের আগ্রহ ও ইচ্ছার কারণেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন। সমবয়সি অনেক মেয়েকে বাবা-মা পড়তে দেননি। তারা ‘অসম্মানের ভয়ে’ তাদের মেয়েদের ঘরে রেখেছেন। পড়তে গিয়ে অন্য সম্প্রদায় বা অন্য ধর্মের কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আশঙ্কায় অনেক মেয়েকে স্কুলের গণ্ডি না পার হয়েই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনার্সপড়ুয়া তেলেগু সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, যেসব মেয়ে পড়াশোনা করছে না তাদের তেমন কোনো কাজ নেই। তাদের অনেকেই কম বয়সেই নিজ গোত্রের ছেলেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াচ্ছে। ফলে অভিভাবকরাও বাধ্য হচ্ছেন বিয়ে দিতে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলনের (বিডিইআরএম) সাংগঠনিক সম্পাদক ভীম্পল্লী ডেভিট রাজু বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো দলিত সম্প্রদায়ের যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন, তাদের সবাই সরকারি খাসজমিতে থাকেন। কেউ সিটি করপোরেশন আবার কেউ পৌরসভার জমিতে থাকেন। বাবা-মা বয়স্ক হলেই তারা ভয়ে থাকেন। তারা মারা গেলে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এই ভয় থেকেই বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঝাড়ুকে আপন করে নেন। যে কারণে দলিত সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা বড় কিছু হতে পারেন না।’
ফ্ল্যাটে থাকেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীতে বাসাবাড়ির প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজে বেসরকারিভাবে আরও অন্তত ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করে থাকেন। তবে বাসাবাড়ি থেকে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারীরা সিটি করপোরেশনের কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, তাদের তালিকাভুক্ত ৪ হাজার ৯১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫ হাজার ১৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে দুটি সংস্থা।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ১ হাজার ৩২৪টি ফ্ল্যাট পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আছে। আরও প্রায় ৮০০ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাজে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের ছেলেমেয়েসহ পরিবার নিয়ে যাতে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে এজন্য আমরা সব রকম ব্যবস্থা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ৭৮৪টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২টি বেডরুম ও একটি চাইল্ড বেড রয়েছে। তা ছাড়া ১টি করে টয়লেট, বাথরুম, কিচেন ও বারান্দা রয়েছে। যাতে তারা সন্তানদের সুন্দর পরিবেশে বড় করতে পারেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারেন। এ জন্য আমরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে এমন সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’