আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমানের অভিমত
ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭ এএম
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। প্রবা ফটো
বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় গত সোমবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তার কাছাকাছি দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে। আরও ঘনীভূত হয়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে মিগজাউম
এই সুস্পষ্ট লঘুচাপটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ক্রমান্বয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সাগরের পরিবেশ এটির অনুকূল হওয়ায় তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এর নাম হবে মিগজাউম। এটি মিয়ানমারের দেওয়া নাম।’
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আগে ঘূর্ণিবায়ুকে পাঁচটি ধাপ পেরোতে হয়। প্রথমে ঘূর্ণিবায়ু তৈরি হয়। ঘূর্ণিবায়ুর পরবর্তী ধাপ লঘুচাপ। লঘুচাপের পর সৃষ্ট হয় সুস্পষ্ট লঘুচাপ। এটি পরে নিম্নচাপ ও নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড়ের ধাপগুলো সম্পর্কে আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ধাপগুলো নির্ধারণ করা হয় বাতাসের গতিবেগের ওপর ভিত্তি করে। এখানে চারটি ধাপ ধরা হয়। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হলে তাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হলে তাকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হলে তাকে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এবং ২২০-এর পর থেকে যত ওপরের দিকেই যাক না কেন তাকে সুপার সাইক্লোন হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
এবারে সৃষ্ট ঘূর্ণিবায়ুটি কবে মিগজাউমে রূপ নিতে পারেÑ তা জানতে চাইলে আব্দুর রহমান খান বলেন, গভীর নিম্নচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে গভীর নিম্নচাপ পেরিয়ে এটি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বিভিন্ন মডেল বলছে সাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে মেঘমালা জমা হচ্ছে। নভেম্বরে যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়, তা সাধারণত বাংলাদেশের ওপর আঘাত হেনে থাকে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে বাংলাদেশের উপকূলে কতটুকু আসবেÑ তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বছরে কয়টা ঘূর্ণিঝড় হবে তা নিশ্চিত নয়
গত পাঁচ দশকে বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কতটা বেড়েছেÑ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘উত্তর ভারত মহাসাগরে বছরে সাধারণত ৫ থেকে ৬টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এ বছর হয়েছে তিনটি। সামনে আরেকটি হতে পারে। এটি নিশ্চিত নয় যে, বছরে কয়টা ঘূর্ণিঝড় হবে। এমন বলা যাবে না যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। এক বছরের সঙ্গে আরেক বছরের পরিবেশগত পার্থক্যকে ঠিক জলবায়ু পরিবর্তন বলা যায় না। জলবায়ুর পরিবর্তন সাধারণত ৩০ বা ৪০ বছরের মধ্যে পরিবেশে সংঘটিত পরিবর্তনের পার্থক্য।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উপায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক সচেতন। আমাদের তথ্যগুলো খুব দ্রুত গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্মার্টফোনের কল্যাণে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। আর আমরাও তথ্য দেওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়েছি। বর্তমানে অন্তত ১৫ দিন আগে তথ্য দেওয়া যাচ্ছে। এতে মানুষের প্রাণহানি কম হওয়ার পাশাপাশি কৃষি ফসলেরও ক্ষতি কমে যাচ্ছে।’
সাগর ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহকারীদের জন্য আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ আছে কি নাÑ জানতে চাইলে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘আমরা বুলেটিনের মাধ্যমে তাদের সচেতন করতে পারি। এ ছাড়া আমাদের তেমন জনশক্তি নেই যে তাদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করব।’