× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্রয়াদেশে ভাটা, কমছে তৈরি পোশাক রপ্তানি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১১:২৩ এএম

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। তাতে সেখানকার বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে কমেছে পোশাক বিক্রি। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেওয়ায় এখন কমতে শুরু করেছে পোশাক রপ্তানি। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে ধারাবাহিকভাবে কমেছে পোশাক রপ্তানি। জুনে নিট এবং ওভেন মিলে যেখানে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। 

পোশাক কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় এখন তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। সামনে এটি আরও অনেক কমে যাবে। নতুন করে ক্রয়াদেশ না পাওয়ার কারণে এরই মধ্যে দেওয়া ক্রয়াদেশের পোশাক রপ্তানি শেষ হলে আগামী ফেব্রুয়ারি, মার্চের দিকে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে দেখা দেবে গভীর সংকট। 

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে ক্রয়াদেশে লাগাম টানতে শুরু করেছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যে দেওয়া ক্রয়াদেশ পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে এখন নতুন ক্রয়াদেশও পাওয়া যাচ্ছে না।’ 

গত কয়েক মাসে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমছে বলে তিনি জানান। রাকিবুল আলম আরও বলেন, ‘অর্ডার না থাকার কারণে এখন পোশাক কারখানা মালিকরা সব মিলিয়ে খুব সংকটে আছেন। এটি ধারাবাহিকভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সামনে আমাদের জন্য খারাপ একটি সময় অপেক্ষা করছে। সামনে পোশাক কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। মূল ধাক্কাটা আসবে ফেব্রুয়ারি থেকে। এখন ক্রয়াদেশ যে কমতেছে সেটি পেমেন্ট আসবে তিন মাস পরে। তখন মূলত রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। একদিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ৩৫ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে ক্রয়াদেশ না থাকার কারণে তখন বন্ধ হয়ে যাবে অনেক কারখানা।’

দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সরাসরি জড়িত বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোনে অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলো থেকেও বিদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। 

তৈরি পোশাক রপ্তানির মাসিক ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড ডিকলারেশন প্রতিবেদন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডের পণ্য রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় রপ্তানি আদেশ স্বল্পতায় গত অক্টোবরে রপ্তানি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস এবং সম্প্রতি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অপরদিকে পোশাকের সিএম (কাটিং অ্যান্ড মেকিং চার্জ) প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে রপ্তানি ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রয়াদেশ পিছিয়ে যাওয়ায় পণ্য রপ্তানি হবে নির্ধারিত সময়ের পরে। অর্থও আসবে দেরিতে। আগে থেকে উৎপাদন সূচি নির্ধারিত থাকায় অন্য ক্রয়াদেশের পোশাক তৈরির সুযোগ নেই। এ কারণে কারখানাগুলো সামনে আর্থিক সংকটে পড়বে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পোশাক কারখানা মালিকরা যেই আশঙ্কার কথা বলছেন, সেটি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এ বছর পোশাক রপ্তানি কমছে। চলতি বছরের গত পাঁচ মাসের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা গেছে এই সময়ের মধ্যে দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। 

পোশাক রপ্তানিতে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করা হয়। গত কয়েক মাসে বন্ড সুবিধায় তৈরি পোশাকের কাঁচামাল বুকিংও কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। 

বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তৈরি পোশাক রপ্তানির গত পাঁচ মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ থেকে নিট এবং ওভেন দুই ধরনের পণ্য রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ থেকে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৪ হাজার ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর জুলাইয়ে রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৯৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের মাসে ৯১ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়ে আগস্টে দেশে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৪ হাজার ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর আবার পোশাক রপ্তানি কমতে থাকে। ৪২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি বেড়ে সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৬১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর রপ্তানি আরও ৪৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে সর্বশেষ অক্টোবরে দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগের দুই বছরের তুলনায়ও সর্বশেষ অক্টোবরে দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে নিট এবং ওভেন মিলে দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৫৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৩ হাজার ৬৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে সর্বশেষ চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে গত দুই বছরের তুলনায় এবার অক্টোবরে দেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৩৯৬ এবং ৫১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশে পোশাক রপ্তানি কমেছে। জুনে যেখানে ইপিজেড থেকে পণ্য রপ্তানি হয় ২১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে সর্বশেষ অক্টোবর মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে সেপ্টেম্বরে ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর কিছুটা বেড়ে আগস্টে রপ্তানি হয় ১৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘নানা কারণে এখন রপ্তানি কমছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা। এর কারণেই এখন বিদেশি ক্রেতারা ধীরে চল-নীতিতে যাচ্ছেন। যে কারণে কিছু কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশ হয়তো কমছে। তবে আমরা আশা করছি, এটি খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না।’

শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি সমন্বয় করা কারখানা মালিকদের জন্য অনেক কঠিন হবে। বেড়ে যাওয়া খরচ যদি ক্রেতাদের কাছ থেকে সমন্বয় করা না যায়, তাহলে পোশাক কারখানাগুলো লোকসানের মুখে পড়বে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা