প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১৭ পিএম
শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি : ফোকাস বাংলা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ সব ধরনের অনিয়ম রুখে দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সিইসি হুঁশিয়ার করেছেন– ভোট কারচুপি বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল এবং প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নাগরিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগের দিন শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এসব কথা বলেন। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ৩০০ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘২২ মাস আগে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করেছি। আগ্রহী সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, সিনিয়র সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ ও মতবিনিময় করেছি। তাদের মতামত শুনেছি। সুপারিশ জেনেছি। আমাদের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছি। নির্বাচনে অনাগ্রহী নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকেও সংলাপে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমন্ত্রণে তারা সাড়া দেয়নি। নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। এখন কেবল ভোটগ্রহণ শুরুর অপেক্ষা। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরনের অনিয়ম-অনাচার প্রতিহত করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভোটারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘ভোট আপনার, ভোটপ্রদানে কারও হস্তক্ষেপ বা প্ররোচনায় প্রভাবিত হবেন না। কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হলে অবিলম্বে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করবেন। প্রিসাইডিং অফিসার যেকোনো মূল্যে যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বাধ্য। প্রিসাইডিং অফিসারকে সহায়তা করতে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট কাছাকাছি অবস্থান করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল– সহিংস পন্থা পরিহার করে কেবল শান্তিপূর্ণ পন্থায় জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাবে। এতে জনমনে আস্থা সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের ঘোষিত হরতাল-অবরোধের মধ্যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা দৃশ্যমান। বিভিন্ন যানবাহন, ট্রেন, ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে। নির্দোষ, নিরীহ, নিষ্পাপ শিশু, নারী, পুরুষের মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এসব ঘটনায় কারা দায়ী– সেটি আমাদের বিবেচ্য নয়। তবে নাশকতা ও সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। অলঙ্ঘনীয় সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণকে অনুরোধ করছি– আপনারা সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন।’