প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২০ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩ এএম
বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। সংগৃহীত ছবি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের দুই ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে দাম্মামগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের ককপিটের কাচে ফাটল ধরা পড়ে। ক্যাপ্টেনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উড়োজাহাজটিকে ঘুরিয়ে ঢাকায় নিরাপদে অবতরণ করানো হয়। ফ্লাইটটি বাতিলের পর রবিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে অপর একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের দাম্মাম পাঠানো হয়েছে।
বিমান সূত্র জানায়, শনিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে দাম্মামের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি। বিজি-৩৪৯ ওই ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ২৮৫ জন ও ক্রু ছিল ১২ জন। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ককপিটের কাচে ফাটল দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ভারতের আকাশসীমা থেকে আবার ঢাকায় নিয়ে আসেন বিমানটি। যাত্রী ও ক্রুসহ সবাই নিরাপদে আছেন। ঢাকায় অবতরণের পর ওই ফ্লাইট বাতিল করা হয়। বিমানের যাত্রীদের ঢাকায় একটি হোটেলে রাখা হয়েছিল।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন তানিয়া রেজা। ককপিটের কাচে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন সেটিকে ঢাকায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফ্লাইটের যাত্রী ও ক্রু সবাই নিরাপদে রয়েছেন। এই ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
বিমানের প্রকৌশল ও উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, উড্ডয়নের পর আকাশে সেটির উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়। বিমান কেনার চার বছরের মাথায় সাধারণত এমন ঘটনা হওয়ার কথা না। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এটা ম্যানুফাকচারিং ফল্ট না অন্য কোনো কারণে হয়েছে- সেটাও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উইন্ডশিল্ড ভেঙে গেলে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরের চাপ কমে গিয়ে সেটি ভারসাম্যহীনতার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে।
জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটা একান্ত টেকনিক্যাল ইস্যু। আমাদের বাংলাদেশের এখানে কারও কিছু করার নেই। উইন্ডশিল্ড কেউ ইচ্ছাকৃত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন না। এ বিষয়ে আপনারা বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বোয়িং স্পেয়ার পাঠায়, এই মুহূর্তে যে উইন্ডশিল্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি পরিবর্তনের জন্য নতুন উইন্ডশিল্ড সিঙ্গাপুর থেকে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
সম্প্রতি আলাস্কা এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ উড়োজাহাজের দরজা মাঝ আকাশে খুলে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল খাতে ঝড় বইছে। ঘটনাটি নিয়ে প্রতিদিনই নিত্যনতুন সংবাদও তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই মডেলের ১৭১টি উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করেছে। এতে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী। এই ঘটনায় বোয়িংয়ের প্রধান ভুল স্বীকার করে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে দরজা খুলে যাওয়ার ঘটনাটির সমাধানের আশ্বাস দিলেও আকাশপথে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও শঙ্কা কাটছে না।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ এর ককপিটের কাচ ফেটে গেলে সেটি মালয়েশিয়ায় গ্রাউন্ডেড করা হয়। একই বছরের আগস্টে দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আরেকটি বোয়িং ড্রিমলাইনার মাঝ আকাশে একই সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটিকে ভারতের আকাশসীমা থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।