প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২১ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৫ পিএম
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক। প্রবা ফটো
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে কারাগারগুলোতে কয়েদি বন্দির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হাজতি রয়েছে। কয়েদি (দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি) আছে ২০ হাজারের মতো। ৫৫-৬০ হাজারের মতো আছে হাজতি (বিচার চলমান মামলার বন্দি আসামি)।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) কারা অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
কারাপ্রধান আনিসুল হক বলেন, ‘কারাগারগুলোতে বন্দিদের খাদ্যতালিকায় বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি বিষয়ে বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে হস্তশিল্প থেকে শুরু করে পোশাক কারখানার কাজও শেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন্দি যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যায়, তখন তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এ ছাড়াও ঝুঁকি ও সময় বিবেচনায় দেশের পাঁচটি কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।’
দেশের সব কারাগার সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুতসময়ের মধ্যে দেশের ৬৮ কারাগারকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি করা হবে। ইতোমধ্যে ৩৮টি কারাগারকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে কারা অধিদপ্তর থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। কারাবন্দিদের সেবা বাড়ানোর জন্য পাঁচ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে নির্মাণ করা হয়েছে কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি ও বিশেষায়িত কারা হাসপাতাল কেরানীগঞ্জে বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কারাগারে দুটি বড় বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। এতে করে বন্দি ও দর্শনার্থীরা দেখতে পারছে– কার জামিন হলো এবং বিভিন্ন নির্দেশনা। এই ডিসপ্লেকে জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমও বলা যেতে পারে।’
ডান্ডাবেড়ি বিতর্ক নিয়ে কারাপ্রধান বলেন, ‘ডান্ডাবেড়ি পরানো কারা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাতে হয় না। পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে।’
কারাগার নিয়ে একটা ভুল ধারণা আছে উল্লেখ করে কারাপ্রধান আরও বলেন, ‘যেমন আয়নাবাজি সিনেমার মতো একজনের সাজা অন্যজন খেটে দিতে পারে। বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটানো এখন আর সম্ভব নয়। এনটিএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। একজন বন্দি যখন জেলখানায় প্রবেশ করে তখন তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিস ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এন্ট্রি করা হয়। সুতরাং কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে।’
কনডেম সেল নিয়ে তিনি বলেন, ‘কনডেম সেল বলতে কিছু নেই। যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাদের কারাবিধি অনুযায়ী আলাদা রাখা হয়। তার মানে এই নয়– বাইরে থেকে যেমনটা সবাই মনে করে, কনডেম সেল মানে ভুতুড়ে জায়গা বা ভিন্ন রকম কিছু। সংশ্লিষ্ট যারাই কনডেম সেল পরিদর্শনে যান তারাই বলেন– বাইরে থেকে কী ভাবতাম আর কী দেখছি। কনডেম সেলেও বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।’
এ সময় কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান, কারা উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (আইন ও অর্থ) আব্দুল কুদ্দুছ, জেপুটি জেলার (স্টাফ অফিসার কারা মহাপরিদর্শক) মো. সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহসভাপতি শাহীন আবুদল বারী, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।