কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫৭ পিএম
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া এলাকায়। প্রবা ফটো
মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উপস্থিত হন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মুহাম্মদ মাইনুল কবির তাকে এ প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে সীমান্তের চলমান পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মাইনুল কবির।
গত অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশে জান্তার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি জোট। আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি জোটটির তিন সদস্য। আরাকান আর্মি জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
মিয়ানমারের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডুতে জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তীব্র সংঘাত চলছে। সংঘাতে মঙ্গলবার পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশসহ (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্যসহ আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থার মোট ২২৯ জন আশ্রয় নিয়েছে। একই সময়ে মিয়ানমারের অন্তত আট নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত দুজন নিহত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পর একই ইস্যুতে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আজকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল। ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের আভ্যন্তরীণ যে সংঘাত, সেটির কারণে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ, একই সঙ্গে সেখান থেকে গোলাবারুদ এসে আমাদের এখানে পড়া এবং আমাদের মানুষ আহত-নিহত হওয়া, এই পুরো জিনিসটা তাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যেখানে কাজ করছি, সেই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য। এটা আমরা জানিয়েছি।’
আগের দিন সোমবার একই ইস্যুতে আইনমন্ত্রী জানান, এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্রবাহিনীকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২৮ জানুয়ারি বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ও বাংলাদেশ অংশে রাখাইনের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশি হতাহত হওয়ায় নেপিদোকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে ঢাকা। প্রতিবাদপত্রে কী কারণে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সদস্যদের ফেরত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। প্রতিবাদপত্রে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশটির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। সোমবার সকালে মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে। মিয়ানমার তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় ফেরত নেবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, এর আগে ভারতেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেকে ঢুকে পড়েছিল। সেখান থেকে সেই সদস্যদের আকাশপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় জোরালো যুদ্ধ করছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা একত্রিত হয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের কাছে বেশ কয়েকটি শহরসহ রাখাইনের বড় এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।