কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৫ পিএম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রবা ফটো
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এ সাক্ষাৎ করেন তিনি। দেশটির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছান ড. হাছান মাহমুদ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং এমন একজন স্ট্রং লেডি, যিনি পর পর চারবার এবং পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাজ করছেন, সেটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছেন, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কেন একজন মহিলাকে দেখতে পাই না? দেখতে চাই। তিনি সেটির সঙ্গেও একমত পোষণ করেছেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে ভারত সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
২০২২ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থিতা থেকে নির্বাচিত ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে প্রথম এবং ভারতের দ্বিতীয় নারী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সমাজের অবহেলিত অংশের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য খ্যাত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি ঝাড়খন্ডের গভর্নর, উড়িষ্যার মিনিস্টার অভ স্টেট এবং ওড়িশার লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দিল্লিতে নতুন পার্লামেন্ট ভবনে এই সাক্ষাতে ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রাজ্যসভার লিডার অভ দ্য হাউস এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়াল।
বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক
শুক্রবার দুপুর ১২টায় ভারতের রাজ্যসভার লিডার অভ দ্য হাউস এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার, খাদ্য ও জনবিতরণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত পীযুষ গয়ালের সঙ্গে নতুন পার্লামেন্ট ভবনে তার অফিসে দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন হাছান মাহমুদ।
বৈঠকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা প্রত্যাহার এবং বিশেষ করে রমজান মাসে মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পীযুষ গয়ালকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারত থেকে যে পেরিশেবল বা পচনশীল আইটেমগুলো আমদানি করি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। রমজানের আগে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি যাতে আমরা পাই, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, সংযোগ, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, পানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন। এ সময় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তিন দিনের সফরের প্রথম দিন গত বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ও তার আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক দশক’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দান ও ‘ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়া’র সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উন্মুক্ত প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের জনমানুষের সম্পর্ক, রাজনীতি, বাণিজ্য, সন্ত্রাস দমন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শান্তি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, রোহিঙ্গা, মিয়ানমারসহ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নানা বিষয়ে দেশের অবস্থান ও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।