প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:১৬ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৪ পিএম
ডিআরআরএ এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আর্থসামাজিক কার্যক্রমের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তিকরণ ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রচারমাধ্যমের ভূমিকাবিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবা ফটো
দেশে প্রকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে একেক রকম পরিসংখ্যান দিচ্ছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন পরিকল্পনাও সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান থাকা জরুরি।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পিআইবি মিলনায়তনে ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আর্থসামাজিক কার্যক্রমের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তিকরণ ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রচারমাধ্যমের ভূমিকাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, ডিআরআরএর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাবেয়া সুলতানা, ডিআরআরএর উপদেষ্টা আখতারী আসাফ (স্বপ্না রেজা)।
সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডিআরআরএর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাবেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ ২০২১’ অনুযায়ী দেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৪১ জন। এদিকে ‘জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২’ অনুযায়ী দেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২৭ জন, যারা সরকার কর্তৃক সেবা সনদপ্রাপ্তির জন্য স্বীকৃত।’’
রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘এতে ধারণা করা যায় যে, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ ও তার পরিসংখ্যান সঠিক ও সার্বিকভাবে হচ্ছে না। এজন্য সংখ্যাগত তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা বলা অনস্বীকার্য যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ধরণ ও পরিসংখ্যান সঠিকভাবে না হলে তাদের নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়।’
স্বাগত বক্তব্যে ডিআরআরএর উপদেষ্টা আখতারী আসাফ (স্বপ্না রেজা) বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যে ধরনের গমনযোগ্যতা প্রয়োজন, তা আশানুরূপভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। প্রতিবন্ধীবান্ধব সামাজিক চিন্তাধারা এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি বলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মানবিক ও সামাজিক অধিকার প্রশ্নে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অবমাননা, শোষণ, শ্লীলতাহানি ও অধিকার বঞ্চনার শিকার হয়। অথচ সুযোগ ও সুবিধা পেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সামর্থ ও সক্ষমতা বলে জীবিকায়নে সম্পৃক্ত হতে পারে।’
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুব উদাসীন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলা যায়, কিন্তু বাস্তবে কর্মক্ষেত্রে কেউ তাদের অধিকার দিতে চায় না।’
বক্তারা জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩-এর মতে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে এবং এই ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হলো—অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। ডিআরআরএর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মেধা ও সক্ষমতা এবং অনেকাংশ ক্ষেত্রে তা সুপ্তাবস্থায় থাকে।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাজধানীর নতুনবাজার থেকে আসা অটিজমে আক্রান্ত শিহাব বলেন, ‘আমি সবই পারি, কিন্তু আমাকে কেউ চাকরি দিচ্ছে না। আমি চাকরি চাই। সবাই আগে থেকেই ধরে নেয় আমি কাজটা করতে পারব না।’
সভায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতাভিত্তিক সঠিক পরিসংখ্যান করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। আলোচকরা সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।