প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৩ এএম
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪ ১১:১১ এএম
আবার ফিরে এলো স্বাধীনতার মাস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় মাস অগ্নিঝরা মার্চের শুরু হচ্ছে আজ। ১৯৭১ সালের মার্চে স্বাধীনতার দাবিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল বঙ্গেয় বদ্বীপের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। মুক্তিকামী বাঙালিকে এই মার্চ দিয়েছে হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির আস্বাদ।
১৯৭০ সালের তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবেÑ এটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় আড়াই মাস পর অধিবেশন আহ্বান করা হলেও ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। মার্চের প্রতিটি দিন নতুন নতুন কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। একপর্যায়ে পাকিস্তানি পতাকার বদলে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ঘোষিত হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। জাতি রাষ্ট্রের নামও ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ। জাতির পিতা হিসেবে ঘোষিত হয় অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মহাকাব্য রচনা করলেন রাজনীতির কবিখ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়ে উচ্চারণ করেনÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এর মাধ্যমে একটি জাতির আগমনবার্তা জানিয়ে দিলেন বিশ্ববাসীকে। স্বাধীনতার অমর কাব্যের এই পঙ্ক্তিটি বাঙালি জাতিকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে। আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে আলোচনায় বসে পাকিস্তানি শাসনগোষ্ঠী। দিনের পর দিন আলোচনা করে কোনো সুফল না হলেও পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। তিনিই হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা।
এই মার্চেই পাকিস্তানকে বিদায় জানায় বাঙালিরা। বাঙালির স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করে দিতে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেপ্তারের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বাঙালি দামাল ছেলেরা। ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয় আসে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। যার প্রত্যক্ষ আন্দোলন শুরু হয়েছিল মার্চের প্রথম দিন থেকেই।
স্বাধীনতার মাস মার্চকে উদযাপন করা হয় নানা আনুষ্ঠানিকতায়। মাসজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি আয়োজন করবে।
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথমদিন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হচ্ছে সাত দিনব্যাপী বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ।
আগামীকাল ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস উদযাপন করবে জাসদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি পৃথক পৃথক আয়োজনে।