প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০০:১৫ এএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৮ এএম
বেইলি রোডের গ্রিন কটেজ ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় ৪৬ জন প্রাণ হারায়। ছবি : সংগৃহীত
দেশে বারবার অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৮ নাগরিক। বেইলি রোডের গ্রিন কটেজ ভবনে লাগা আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে এ দায় দেওয়া হয়।
রবিবার (৩ মার্চ) অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার পাঠানো বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে একটি রাসায়নিক গুদামে একই ধরনের দুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে চকবাজারে একই ধরনের দুর্ঘটনায় মারা যান ৭১ জন। একই বছর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৭ জন মানুষ প্রাণ হারান।
‘হাসেম ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং তাজরিন গার্মেন্টসহ এর আগে যেসব অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে তা থেকে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবার উপায় নেই। এটি ওইসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনারই ধারাবাহিকতা বলে আমরা মনে করি। আগের ঘটনাগুলোর যেটুকু তদন্ত হয়েছে তা থেকে আমরা জানি যেসব স্থানে ওই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার কারণ ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলা প্রধানত দায়ী।’
রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরেছি রাজউক কর্তৃপক্ষ এ ভবনটি শুধু বাণিজ্যিক অফিস ব্যবহারের শর্তে অনুমোদন দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এ ভবনটিকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার নোটিস পাঠিয়েছে বলেও জানা যায়। নোটিস পাঠানোর পর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখানে অবশ্যই প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু নোটিস দিয়েই কি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তাদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা কেন করল না? নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং হয়েছে কি না তা রাজউকের তদারক করার কথা, কিন্তু লোকবল নেই—এ অজুহাতে রাজউক কোনো অবস্থায় দায় এড়াতে পারে না।’
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কটেজ ভবনে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে তাতে অন্তত ১৪টি খাবার দোকান ও রেস্তোরাঁ ছিল। প্রাণঘাতী এ আগুনে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মীদের দায় নিয়ে জোর প্রশ্ন ওঠার মধ্যে পুলিশের করা মামলায় রাজউক কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ হওয়ার’ তথ্য মিলেছে। তবে সেই কর্মকর্তা কারা, সে বিষয়ে মামলায় কিছু বলা হয়নি, তাদের কাউকে আসামিও করা হয়নি।
বিবৃতিতে ৪৮ নাগরিক বলেছেন, ‘আমরা সরকারের কাছে অতীতের সব অগ্নিদুর্ঘটনাসহ বেইলি রোডে ঘটে যাওয়া অগ্নিদুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করার জন্য অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আংশিক নয়, সার্বিক তদন্ত চাই।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী জেডআই খান পান্না, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সেন্ট্রাল উইম্যান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গীতি আরা নাসরীন, রোবায়েত ফেরদৌস, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, সদস্য দীপায়ন খীসা, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী প্রমুখ।