প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:১৮ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম
যশোর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সিপাহি রইশুউদ্দিন নিহতের ঘটনাটি ‘টার্গেট কিলিং’ নয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। অপরদিকে বিএসএফের মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, সেদিন কী ঘটেছিল ইতোমধ্যে বিজিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে বিএসএফ। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আর ব্যাখ্যা করব না।’
বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪ তম সম্মেলন শেষে শনিবার (৯ মার্চ) যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এ বছরের ২২ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য সিপাহি রইশুউদ্দিন নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ড বিএসএফের টার্গেট কিলিং ছিল কি না, এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তারা আলাদা আলাদা উত্তর দেন।
প্রথমে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিজিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে বিএসএফ। ওই দিন কী ঘটেছিল তা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর ব্যাখ্যা করব না। এটি বিজিবিকে জানানো হয়েছে।’
এরপর বিজিবি মহাপরিচালক তার জবাবে বলেন, ‘ঘটনার সময় কুয়াশাচ্ছন্ন ও অন্ধকার ছিল। তাই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় ছিল।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজিবি এবং বিএসএফের এখন মূল লক্ষ্য যাতে সীমান্তে হত্যা না ঘটে। পোশাকধারী বা সাধারণ নাগরিক যিনিই হোক, কোনো প্রাণহানি যাতে না ঘটে সেজন্য উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাজ করছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘সীমান্তে চোরাকারবারিদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন। চোরাকারবারিরা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোন পার্টে লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রাণঘাতি নয় এমন অস্ত্র দিয়ে গুলি করলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। ক্লোজ রেঞ্জ থেকে রাবার বুলেট ছুড়লে সেটি দিয়েও মৃত্যু হতে পারে। যখন বিএসএফ সদস্যদের ওপর দা দিয়ে হামলা করা হয়, তখন তারা অনেক কাছে চলে আসে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ সদস্যরা কখনও কখনও গুলি করতে বাধ্য হন।’
‘এর বাইরেও বিপুল চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে। এজন্য জয়েন্ট বর্ডার প্যাট্রোলিং, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিজিবি ডিজি বলেন, ‘আমরা সীমান্তে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করছি। আমরা সীমান্তে কোনো হতাহত হোক চাই না।’
জানা যায়, এবারের ডিজি পর্যায়ের যৌথ সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং একমত হয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান।
সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।
এ ছাড়া বিজিবি মহাপরিচালক জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী পাঁচ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমির সেচ সুবিধা ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে বন্ধ থাকা রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএসএফ মহাপরিচালক উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণের আশ্বাস দেন।