প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:০৬ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৮ পিএম
কুমিল্লা নগরের নেউয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কেন্দ্রের বাইরে কয়েকজন যুবককে অবস্থান নিতে দেখা যায়। ছবি : সংগৃহীত
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ দুই সিটি ছাড়াও ছয়টি পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের দুই শতাধিক পদে ভোটগ্রহণ শনিবার বিকাল ৪টায় শেষ হয়। এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোট চলে বিরতিহীনভাবে। এখন চলছে ভোট গণনা।
ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের উপস্থিতি।
কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিতে ভোট নেওয়া হয়েছে ইভিএমে। সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। সেখানে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। তারা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিনের সমর্থক।
গুলিবিদ্ধরা হলেন জহিরুল আহমেদ ও তুহিন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে জহিরুলের অভিযোগ, মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশেই মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুমন তাদের দুজনকে গুলি করেছেন।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘ভোট ক্যাম্পের পাশে আমি দাঁড়িয়ে থাকলে বাস মার্কার সমর্থক মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুজন আমাকে ও তুহিনকে পুলিশের সামনেই গুলি করে।’
এ ঘটনায় ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার অভিযোগ করেন, ‘বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার সমর্থকরা ভোট দিতে আসতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে তারা আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয়কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়েছে আমার কর্মীরা। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুমন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘোড়া প্রতীকের কর্মীরাই প্রথম আমার ওপর গুলি চালায়। পরে আত্মরক্ষায় আমিও পাল্টা গুলি চালাই।’
এ ঘটনায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হাসান আহমেদ কামরুল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘটনাটি ভোটকেন্দ্রের সীমানার বাইরে ঘটেছে। বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছি।’
এ ঘটনার পর এক ছাত্রদল নেতাকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। আটক অন্তু কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সদস্য।
সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অন্তু নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
এদিকে কুমিল্লায় ভোট চলাকালীন বাস প্রতীকের সুনির্দিষ্ট ভোটার ছাড়া অন্য কাউকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন অন্য প্রার্থীরা।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে গলির ভেতরে পাহারা বসিয়ে আমার নেতাকর্মী ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোটার তো যাইতেই পারতেছে না, জায়গায় জায়গায় ব্লক দিতাছে।’
এ ছাড়া এজেন্টদের বের করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে মেয়র পদপ্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সূচনা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এই প্রথমবার প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু আমি যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারেরই একটা মেয়ে, নির্বাচন আমার জন্য প্রথম কিছু না। নির্বাচন ইভিএমে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হচ্ছে, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের তীর আমার দিকে কেন, আমি সেটা আসলে জানি না।’
সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত আপনারা যারা সংবাদমাধ্যমের আছেন, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, এখন কিন্তু সময়টা খুব স্বচ্ছ, মানুষের হাতেও লাইভ ক্যামেরা থাকে, মানুষ লাইভেও চলে যেতে পারে যদি কোনো সমস্যা হয়। আমি বলব, এগুলো শুধু শুধু অপবাদ, অপপ্রচার।’
এ সময় জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানান তিনি।
অপরদিকে ময়মনসিংহ সিটিতে সংঘর্ষের খবর পাওয়া না গেলেও এখানে ভোটাররা বিড়াম্বনার শিকার হয়েছেন। আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়েই বাড়িতে ফিরছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন লায়লী বেগম। ৮২ বছরের এই নারী বলেন, ‘জীবনে কতো ভোট দিলাম। এইরহম কাণ্ড আর দেহি নাই। আমার ভোট আমি দিতাম পারলাম না।’
এই সিটিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো। ভোটারদের মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশি। তবে আঙুলের ছাপ মেলাতে বিড়ম্বনায় নারী ভোটারদের লাইনে ছিল ধীরগতি। সেক্ষেত্রে জেলি, পানি, কাপড় দিয়ে মুছে বার বার চেষ্টা করা হয়েছে আঙুলের ছাপ নিতে।
দুপুরের দিকে বাঁশবাড়ী এলাকা থেকে আসা সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। খুব আস্তে আস্তে লাইন আগাচ্ছে। আনসাররা বলছে, আরও নাকি দুই ঘণ্টা দাঁড়ায় থাকা লাগবে।’
ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃদ্ধা রাহেলা আক্তার বলেন, ‘হেরা ভোটের মেশিন ঠিক না রাইখ্যা ভোট নিতাছে কেন। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটের কার্ডটাতো ঠিকি আছে। আমার ভোটটা দিতাম পারলাম না। এইডার জবাবডা কেডা দিব?’
তবে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইভিএম মেশিন ঠিক আছে। অনেকের আঙুলে ময়লা, কাজ করার কারণে হাতের রেখায় পরিবর্তন হয়। এসব কারণে এরকম হচ্ছে।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, দুপুর ২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৪২ শতাংশ।
তবে বিকাল ৪টার পরও কয়েকটি কেন্দ্রের সামনে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যে নগরীর পাটগুদাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, অল্প কয়েকজন করে ভোটারকে কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে নারী কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, ‘বিকেল চারটার মধ্যে নির্ধারিত সীমানার মধ্যে যারা ঢুকেছেন, তাদের ভোট নেওয়া হবে, সেটা যতক্ষণ লাগুক।’
এই দুই সিটির বাইরে ছয়টি পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের ভোটও শেষ হয়েছে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম ইউপি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।