× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সড়কে অপরাধের শাস্তি কমছে

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৩ এএম

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৩৪ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা কারও প্রাণহানি ঘটলে, দায়ী ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে এ আইন সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘গুরুতরভাবে আহত’ শব্দ দুটি। একই সঙ্গে জরিমানা পাঁচ লাখ থেকে কমিয়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। সংশোধনীর খসড়ায় প্রায় ১০ জায়গায় শাস্তি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত চালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের জেল-জরিমানায় অনেকটাই ছাড় দিয়ে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০২৪’ সংশোধন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। 

ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আইন সংশোধনের খসড়ার কাজ শেষ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। আজ বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আইনটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন হতে পারে। 

মোটরযানের স্বীকৃতি পাচ্ছে বাইসাইকেল, রিকশা ও ভ্যান

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের ৪৯ ধারায় প্রথম অংশে বলা হয়েছে, মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে কোনো চালক মোটরযান চালাতে পারবে না। এ জাতীয় দ্রব্য সেবন করে কোনো কন্ডাক্টর বা মোটরযান শ্রমিক মোটরযানে অবস্থানও করতে পারবেন না। তাদের মোটরযান চালনার দায়িত্বও দেওয়া যাবে না।

তিন চাকার মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রস্তাব করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি পাস। বিদ্যমান আইনে এই যোগ্যতা রয়েছে অষ্টম শ্রেণি। এমনকি যন্ত্রচালিত বা বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত যানবাহন, বাইসাইকেল, রিকশা ও রিকশাভ্যানকে মোটরযানের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বীমার বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে সংশোধনীতে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা কমানোর প্রস্তাবকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কম শিক্ষিত কিন্তু রাস্তার রোড সাইন যদি বোঝেন বা অভিজ্ঞতার আলোকে কাউকে যদি লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেটা খারাপ না। এতে দেশের ১০ লাখ চালক-সংকটের কিছুটা সমাধানও হবে।’

আইন সংশোধনের উদ্যোগ কেন

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। সে বছরের ৮ অক্টোবর এটির গেজেট জারি করা হয়। তবে আইনে বলা হয়, সরকার আইনটি কার্যকরের তারিখ ঠিক করে এর প্রজ্ঞাপন জারি করবে। ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবিতে দুই দফায় ধর্মঘট করে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে বছরের নভেম্বরে সরকার আইনটি প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিলে পরিবহন সংগঠনগুলো আইনটির বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের জন্য আবারও ধর্মঘট ডাকে। তাদের মূল দাবি ছিল, আইনের অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে। বিভিন্ন ধারায় যে জরিমানার কথা বলা হয়েছে, তা কমাতে হবে। এ অবস্থায় চার বছরের মাথায় আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

যেসব সংশোধন আসছে

বিদ্যমান আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বর্ণিত অপরাধ জামিন অযোগ্য। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে ৮৪ ও ৯৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য এবং ৯৮ ধারার অপরাধকে আপসযোগ্য বলা হয়েছে। আইনের ৯০ ধারায় মোটরযান পার্কিং এবং যাত্রী ও পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহার সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড উল্লেখ আছে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটা যাবে। কিন্তু সংশোধনীর খসড়ায় এ অপরাধের জন্য মাত্র ১ হাজার টাকা জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে চালকের পয়েন্ট কাটার বিষয়টি।

আইনে ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের দণ্ড নির্ধারিত আছে ছয় মাস থেকে দুই বছরের জেল বা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড। সংশোধনীর খসড়ায় এটিও সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। সংশোধনীর খসড়ায় অর্থদণ্ড কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ট্রাফিক সংকেত না মানার শাস্তি উল্লেখ আছে, সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। এক্ষেত্রে কারাদণ্ড উঠিয়ে অর্থদণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা।

‘আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে’

এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাদেরকে শৃঙ্খলায় আনতে আইন তৈরি করা হয়েছে, তাদের চাপেই যদি এর পরিবর্তন ঘটে, তাহলে আইনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চালক ও শ্রমিকদের শাস্তি কমিয়ে আইনটি সংশোধন করা হলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংশোধনী পাস হলে পরিবহন সেক্টরের সরকারের অসহায়ত্ব আরও বাড়বে। আইনে শাস্তি কমানোর মধ্য দিয়ে জনগণের স্বার্থ চরমভাবে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী কিছু বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘এই আইন প্রণয়নের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম। তবে ২০১১ সালের খসড়ার সঙ্গে ২০১৮ সালের আইনের ফারাক আকাশ-পাতাল। যে স্পিরিট নিয়ে প্রথম খসড়া হয়েছিল, তার অনেক কিছুই নেই বিদ্যমান আইনে। অনেক ছাড় দিয়েই এটি করা হয়েছিল। তারপরও অংশীজনের মতামতের আলোকে আইনটি হয়েছিল।

একটি পক্ষের নতুন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধন হবে, অন্য কারও পর্যবেক্ষণ থাকবে না, সেটা কোনো কার্যকর দলিল হচ্ছে না। এটি কোনো গোষ্ঠীকে রক্ষা করার সমঝোতার দলিল হচ্ছে। যাদের জন্য আইন, তারা অনেক বেশি শক্তিশালী। সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে এটা দিয়ে অন্তত সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্ঘটনা রোধ ও আইনভিত্তিক পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’

সড়কে কোনো যান নয় বীমা সুবিধা ছাড়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বীমা ছাড়া যেন যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে দেখব যে যথাযথ বীমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন যেন না চলে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকেই আইন সংশোধনের ভিত্তি হিসেবে নেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠালে প্রধানমন্ত্রী তাতে অনুমোদন দেন। ওই সারসংক্ষেপে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, বিশ্বের কোনো দেশই বীমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন চলতে দেয় না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৮টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানায়, বীমা করা বাধ্যতামূলক না থাকায় এগুলো থেকে প্রতি বছর কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ ৮৪৯ কোটি টাকা ও স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ২৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত থাকছে সরকার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা