× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ

নোঙরের পর এসেছে সশস্ত্র ২০ জলদস্যু, যুদ্ধজাহাজ-কপ্টারের চক্করেও নির্বিকার

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪ ২০:০৭ পিএম

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪ ২০:৩৮ পিএম

নোঙরের পর এসেছে সশস্ত্র ২০ জলদস্যু, যুদ্ধজাহাজ-কপ্টারের চক্করেও নির্বিকার

প্রায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৫ নটিক্যাল মাইল জলপথ পাড়ি দিয়ে এমভি আব্দুল্লাহসহ জিম্মিদের নিয়ে নিজেদের জলসীমায় পৌঁছেছে জলদস্যুরা। উপকূলে নোঙরের পর সোমালিয়া থেকে জাহাজাটিতে এসেছে অন্তত ২০ জন সশস্ত্র জলদস্যু। তাদের সঙ্গে আছে একজন দোভাষী, যিনি জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। নাবিক-ক্রুরা সবাই এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে। তাদের রোজা রাখতে ও নামাজ আদায় করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে জাহাজে মজুদ খাবার আর কত দিন চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ জলদস্যুরাও মজুদ খাবার ও সুপেয় পানি গ্রহণ করছে।  

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ) বিকাল ৪টার দিকে জিম্মি চারজন নাবিকের সঙ্গে কথা বলেছেন মেরিন অ্যাকাডেমির ২৭তম ব্যাচের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দাবি করে বলেন, ‘জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর থেকেই আমি পরিচিত কয়েকজন নাবিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’ 

জিম্মি নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার সময় এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ান উপকূল থেকে সাত মাইল দূরে নোঙর করেছে। এ সময় জাহাজের দায়িত্ব পালন করেন জিম্মি নাবিকরাই। জলদস্যুরা অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে। নোঙর করার প্রয়োজনে জাহাজের সামনের দিকে গিয়েছিলেন চিফ অফিসার, বোসান ও একজন সাধারণ নাবিক। নোঙর করার পর সোমালিয়া থেকে অন্তত ২০ জন সশস্ত্র জলদস্যু এসেছে। নতুন দল দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর জিম্মিকারী জলদস্যুরা চলে যেতে পারে। নতুন আসা জলদস্যুদের সঙ্গে একজন ইংরেজি জানেন এমন লোক আছেন। সম্ভবত তিনি দোভাষী হিসেবে জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। জলদস্যুরা সোমালি ও আরবি ভাষায় কথা বলছে।

জিম্মি নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, নাবিকরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। সেহরি খেয়ে রোজা রেখেছেন, ইফতার করেছেন। ব্রিজ জামায়াতে নামাজ আদায় করছেন। জাহাজের চিফ কুক একজন সঙ্গী নিয়ে ৫০ জনের জন্য রান্না করছেন। বুধবার জিম্মি নাবিকেরা ব্রিজে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সবাইকে কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে রাতে কেবিনে থাকার সুযোগ দেবে কি না তা নিশ্চিত নয়। জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুরাও জাহাজে থাকা খাবার খাচ্ছেন। ফলে ২৫ দিনের খাবার সংরক্ষিত থাকলেও তা দ্রুত শেষ হতে পারে। এ ছাড়া ২০০ টন পানিও নিঃশেষ হতে পারে নির্ধারিত সময়ের আগে। খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা এখনও জানেন না নাবিকেরা। 

জিম্মি নাবিকদের একজন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে সম্ভবত একটি ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করেছে। দূর থেকে ভালোভাবে নাম পড়া যায়নি। সেই যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে এমভি আব্দুল্লাহর চারপাশে একাধিকবার চক্কর দিয়েছে। ফাঁকা গুলিও ছুড়েছে। তবে এতে জলদস্যুদের মধ্যে কোনো ধরনের উদ্রেগ সৃষ্টি হয়নি। তারা নির্ভার। হয়তো জলদস্যুরা জানে, যতক্ষণ জিম্মি নাবিকরা তাদের জিম্মায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আক্রমণ করবে না বা আক্রমণ করার সম্ভাবনা কম। 


হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে যাওয়ার পর দূরে আরও একটি যুদ্ধজাহাজ দেখা গেছে। হতে পারে এটি ভারতীয়। দুটো জাহাজই সোমালিয়া উপকূল পর্যন্ত এসে এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করেছে। এখন কাছাকাছি অবস্থানে আছে। রাতে থাকবে কি না জানি না।

জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর গণমাধ্যমে জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের তৈরি হয়। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে কোম্পানির কোনো ধরনের ঘাটতি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জাহাজটির মালিকানাধীন গ্রুপ কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যে এলাকা থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল রুট। সোমালিয়া উপকূল থেকে অন্তত ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে ছিল জাহাজটি। আর সোমালিয়ান জলদস্যুদের তৎপরতার কারণে ভারত মহাসাগরের সোমালিয়া অঞ্চলের প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। সেই রেড জোন থেকে আরও প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে ছিল জাহাজটি। তাই নিরাপত্তার যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা সঠিক নয়।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাহাজটি বীমা করা আছে।’ জাহাজের নাবিকদের সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিম্মি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। তারা সেহরি ও ইফতার করতে পারছেন। জলদস্যুরা এক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে আছে।’ 

জাহাজটির অবস্থান জানা সম্ভব হলেও মুক্তিপণ বিষয়ে জলদস্যুরা এখনও মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি দাবি করেন মিজানুল ইসলাম। 

জাহাজ উদ্ধার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী। এখন রাষ্ট্র নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করেছে। মালিকপক্ষ রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জাহাজ ছিনতাই হলে সেগুলো উদ্ধারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করছে মালিকপক্ষ।’ 

তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের একটি দল জাহাজ ছিনতাই করে উপকূলে নিয়ে যায়। পরে আরেকটি গ্রুপ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। লবিস্ট নিয়োগ করে জাহাজমালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে জলদস্যুরা। এখন লবিস্টরা কবে নাগাদ যোগাযোগ করবে, সেটাই দেখার বিষয়।’ 

জিম্মি হওয়া জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। পথিমধ্যে জলদস্যুর কবলে পড়ে। মঙ্গলবার যখন জাহাজটিতে জলদস্যুরা হানা দেয়, তখন পর্যন্ত নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ছিল। আর পানি ছিল ২০০ টনের মতো। 

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কবির গ্রুপের ‘জাহান মনি’ নামের আরেকটি জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুরা জিম্মি করেছিল। তখন ২৫ নাবিকসহ ২৬ জনকে উদ্ধার করেছিলেন কবির গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ শাহাজাহান। এবারও নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে গ্রুপটি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা