× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস

স্বাধীনতার মহানায়কের জন্মদিন আজ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪ ০০:০১ এএম

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১০:৫১ এএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

‘ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর পতাকার মতো/দুলতে থাকে স্বাধীনতা’- আজ সেই ধন্য পুরুষের, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার ছায়া-সুনিবিড় ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

ছোটবেলায় বাবা-মা যাকে আদর করে ডাকতেন ‘খোকা’ নামে। আদরের সেই ‘খোকা’ই ইতিহাসের পথপরিক্রমায় হয়ে ওঠেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’, ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’। ১৭ মার্চের সেই খোকাই মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলেন এ জনপদের জনগণ ও বাঙালির মনে, সংঘবদ্ধ করেন সবাইকে নতুন এক রাষ্ট্রের অভিযাত্রায়। 

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতার জন্মদিন সারা দেশে উদযাপন করা হবে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তোলন করা হবে জাতীয় পতাকা। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও ‘জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ এবং তিন দিনব্যাপী বইমেলাও হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন।

এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

১৯২০ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৯ সালে নির্বাচিত হন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। জনগণের অধিকার আদায়ে আজীবন সোচ্চার এই নেতাকে জীবনের একটি বড় অংশই থাকতে হয়েছে কারাগারে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান, আহমেদ ফজলুর রহমান, কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আগরতলা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়ার পর জনগণ ফুঁসে ওঠে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজবন্দিকে মুক্ত করে এবং তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অভিধায় অভিষিক্ত করে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব বাংলায় নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করলে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন, যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইউনেস্কো এ ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিচালনার মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সেদিন মধ্যরাতে বা ২৬ মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এমন প্রেক্ষাপটে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা।

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরন্তর অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়, জনগণের চোখে তিনি ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রম শুরু করেন।

কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার যোগসাজশে ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে ক্ষণজন্মা পুরুষ বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘স্বাধীনতার প্রতীক’। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশি গণমাধ্যমে তাকে অভিহিত করা হয় ‘রাজনীতির ছন্দকার’ হিসেবে। বিশ শতকের কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাঁকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। তাঁর নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক।’ 

শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবাইকে ছাপিয়ে উঠেছেন, তাঁর স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।’

তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিত্রিত করলেও কালপরিক্রমায় ওই দেশটির অনেকেও তাঁকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। 

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। 

আজ সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশেও অংশ নেবেন তারা। 

জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। 

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে কাল সোমবার সকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা