এমভি আব্দুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:২৫ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম
সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ।
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধার করতে সোমালিয়ান পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কয়েকটি সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এমন খবর ছড়ানোর পর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন– জাহাজে অভিযানের চেয়েও নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা মালিকপক্ষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া অভিযানের নেপথ্যে আসলে কী, সেটি তাদের জানা নেই।
রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী– এমভি আব্দুল্লাহ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতির তথ্য জানিয়েছে সোমালিয়ার পান্টাল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ। শনিবার সোমালি উপকূলে ৪০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। জাহাজটির ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পাশাপাশি জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাইকে তারা আটক করেন। এরপরই এমভি আব্দুল্লাহ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অভিযানের প্রস্তুতির খবর জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ শুনেছে বলে জানান গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষের কাছে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার গুরুত্ব সর্বাধিক। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জাহাজ উদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে– এই খবর আমরাও পড়েছি। কিন্তু নেপথ্যে কী আছে, তা আমরা জানি না।’
কেন অভিযানের প্রস্তুতি
পান্টাল্যান্ড সোমালিয়ার একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এই অঞ্চলে অনেকগুলো জলদস্যু ঘাঁটি আছে। পান্টাল্যান্ড পুলিশ রয়টার্সকে জানিয়েছে, এমভি আব্দুল্লাহ দখল করে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের পরিকল্পনা করেছে। তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অভিযানে অংশ নিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। এর আগে জলদস্যুদের জন্য ‘খাত’ নামক একধরনের মাদক নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নৌযান জব্দ করেছিল পান্টাল্যান্ড পুলিশ।
এমভি আব্দুল্লাহে অভিযান চালানোর প্রস্তুতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পান্টাল্যান্ডের নৌ পরিবহন মন্ত্রী আহমেদ ইয়াসিন সালাহ্। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এমভি রুয়েনের মতো আব্দুল্লাহকেও জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করতে অভিযানের পরিকল্পনা চলছে। পান্টাল্যান্ডের উপকূলকে জাহাজ দখল করে দস্যুবৃত্তির কাজে ব্যবহারের সুযোগ আমরা দিতে পারি না। আমাদের বন্ধুদের বলেছি– জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধির কোনো ধরনের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।’
এ ব্যাপারে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার অভিযানের আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিশ্চয়ই তথ্য বিনিময় হবে। কিন্তু জাহাজ মালিকপক্ষ এখনও এমন তথ্য জানে না। তাই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি– যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই কোম্পানির প্রধান লক্ষ্য।’
আরও নজরদারি
এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হয়। এখন সোমালিয়া উপকূলে জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় আছে। জাহাজে বাংলাদেশি ২৩ নাবিক জিম্মি আছেন।
বলা হচ্ছে, পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সও ‘অপারেশন আটলান্টা’র অংশ হিসেবে এমভি আব্দুল্লাহর ওপর নজর রাখছে। এ ছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনীর এক যুদ্ধজাহাজও এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করেছে।
ইউরোপীয় এই বাহিনী এমভি আব্দুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম জানিয়েছিলেন। শনিবার তিনি জানান, নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই অভিযানের প্রস্তাবে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি।