× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের হাতিয়ার ‘নীতিমালা’

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১২:৩১ পিএম

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৭ পিএম

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের হাতিয়ার ‘নীতিমালা’

বিসিএস (প্রশাসন) ১৩ ব্যাচের একজন অতিরিক্ত সচিব, যিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত রয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসক হিসেবেও। চাকরি জীবনে রয়েছে অনেক সাফল্য। ফিটলিস্টে সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন। আরেক কর্মকর্তা, যিনি বিশেষায়িত একটি মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছিলেন। সম্ভাব্য সচিবের তালিকায় নামও উঠেছে। বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। এরপরও সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। অথচ তাদের ব্যাচের অনেকেই আছেন, যাদের নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই, এমন একাধিক কর্মকর্তা সচিব হয়েছেন। 

সাম্প্রতিককালে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হতে দেখার পর তারা আরও হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের ভাগ্যে সচিব পদোন্নতি জুটবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন। যোগ্য কর্মকর্তাদের বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিগত সখ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নীতিমালার দোহাই দেখিয়ে এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, জনপ্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থামছেই না। বরং বেড়েছে। যে কারণে পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তারা সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে পদোন্নতির স্বাভাবিক ধারা। সেই সঙ্গে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। দাপ্তরিক কাজকর্মেও তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই সচিব হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও কেউ কেউ অতিরিক্ত সচিব হিসেবেই অবসরে যাচ্ছেন। এরপরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেমে নেই। 

সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবিরকে এক বছর চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ১১ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মসম্পাদনে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছেÑ এমন বিবেচনায় তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। 

এভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টি মেনে নিতে চান না পদোন্নতি প্রত্যাশী অতিরিক্ত সচিবরা। তারা সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÑ এভাবে কোনো একজনকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে পদোন্নতিযোগ্য অতিরিক্ত সচিব পদের চার কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়ে পড়েন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। পাশাপাশি প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড বিঘ্নিত হতে বাধ্য। এ অবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। 

জনপ্রশাসনমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা দেখে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বিবেচনায় আনা হয়। সেক্ষেত্রে কারিগরি কিংবা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এমন কর্মকর্তারাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন। তবে যোগ্য না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় না। রাষ্ট্রের স্বার্থে ও জনগণের প্রয়োজনে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তি দেওয়া হয়। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। প্রশাসনিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। 

মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন হয়নি। তবে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে কর্মকর্তার অভাবে দক্ষদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতো। তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ১৯৭৫ সালের মে মাসের এক আদেশে বলা হয়, ‘যেসব ক্ষেত্রে তুলনীয় যোগ্যতম ও দক্ষতাসম্পন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পাওয়া দুষ্কর, শুধু সেসব ক্ষেত্রেই চুক্তির ভিত্তিতে অবসরগ্রহণের পরও তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ যেখানে তুলনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন লোক পাওয়া সম্ভব, সেখানে এ নীতির উদার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়।’ 

পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসের এক আদেশে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্নিয়োগ বিবেচনার্থে বলা হয়Ñ অবসরগ্রহণের পর সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে।

সূত্র আরও বলছে, বিশেষায়িত কর্মসম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কোটায় আগে মোট পদের ১০ শতাংশ চুক্তিতে পুনর্নিয়োগের বিধান ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ বিধান বাতিল করে যত খুশি তত নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এরপর থেকেই চুক্তি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৫৭ বছর থেকে চাকরির অবসরের বয়স ৫৯ বছর করা হয়। এরপরও বিশেষ বিশেষ বিবেচনায় প্রশাসনে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। তবে এমন ঘটনায় নিয়মিত কর্মকর্তাদের সচিব হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হন। কেউ কেউ সচিব না হওয়ার আক্ষেপ নিয়েই চাকরি থেকে অবসরে চলে গেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেনÑ প্রশাসনে আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে না। কিন্তু সেটি কার্যকর হচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এমনকি যেসব কর্মকর্তার যোগ্যতা, সততা এমনকি আদর্শিক ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তারাও নানা পথে চুক্তিতে পুনর্নিয়োগ বাগিয়ে নিচ্ছেন এমন অভিযোগও প্রায়ই ওঠে।

এদিকে বর্তমানে চুক্তিতে রয়েছেনÑ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আবদুস সালাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ফজলুল বারী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া প্রমুখ। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনে সচিব পদে নতুনভাবে পদোন্নতি পেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গতি ফিরে আসে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মন্ত্রণালয়কে সাফল্যের উচ্চতায় নিয়ে যায়। তবে প্রয়োজনীয়তা ও দক্ষতা বিবেচনা করেই অবসরে যাওয়া অল্পসংখ্যক কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ঢালাওভাবে চুক্তির জন্য কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ভ্রান্ত ধারণা দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকার যাকে অপরিহার্য মনে করবে, সেই সব কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। এটা নতুন নয়, আগেও ছিল এখনও রয়েছে। তারপরও অন্যান্য কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চুক্তি কম দেওয়াই উচিত হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা