× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল

যে কারণে ভেঙে ফেলা হচ্ছে দুইশ বছরের পুরোনো ভবন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪১ পিএম

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ২১:০৯ পিএম

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের দুইশ বছরের পুরোনো একটি ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের দুইশ বছরের পুরোনো একটি ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু

ভেঙে ফেলা হচ্ছে দুইশ বছরের বেশি পুরোনো ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ভবন। নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করতেই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এই স্থাপনা ভাঙার সমালোচনা করছেন নগরবিদরা। হাইকোর্টের রায়ও অমান্য করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই সরকারি উদ্যোগে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, তিনজন শ্রমিক কয়েক দিন ধরেই ভবনটি ভাঙার কাজ করছেন। এরই মধ্যে ভবনটির দরজা-জানালা ভেঙে অপসারণ করা হয়েছে। ভবনের নিচতলার ফ্লোর  ও দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় একতলার ছাদও ভাঙা হয়েছে।

 শ্রমিক রুহুল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু ভবনটিকে ভেঙে ফেলা। আমরা তিন মাসের সময় নিয়েছি। এর মধ্যে এটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলতে পারব। তিন দিন ধরে আমরা তিনজন কাজ করছি। আমাদের আরও লোক আসবে।’


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুইশ বছরের পুরোনো হওয়ার পরও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় নেই স্থাপনাটি। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে ভেঙে ফেলার অনুমতি। যদিও এসব অনুমতির আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এ অবস্থায় সেটি ভেঙে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেজন্য নিলামে তুলে একজন ঠিকাদারের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকায় মা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাঙার কাজটি পেয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারের এক প্রতিনিধি বলেন, ‌‌‘আমরা নিলামে ভবনটি কিনে নিয়েছি। এখন ভেঙে এই জায়গাটা পরিষ্কার করে দেব। আমাদের সঙ্গে সেই চুক্তি হয়েছে।’

স্থাপনা নিয়ে কাজ করা আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল পরে এখানে স্থানান্তর করা হলেও ভবনটি আরও পুরোনো। এটি পরিদর্শন করে আমরা এর স্থাপত্যশৈলী পর্যবেক্ষণ করেছি। এটি মোগল আমলের স্থাপত্য বলে চিহ্নিত করা গেছে। এটি ব্রিটিশরা ডাকবাংলো হিসেবে ব্যবহার করেছে। পর্তুগিজরা রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহার করেছে। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটিকে ভেঙে ফেলা ঠিক নয়।’


গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তারা ২ হাজার ২০০টি বাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল। এসব বাড়ি অক্ষত রেখে সেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নির্ণয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে ২০১৮ সালে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মাঠপর্যায়ে জরিপ করে সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঁচ বছরেও দাখিল করতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এসব ভবনের মধ্যে কলেজিয়েট স্কুলের এই পুরোনো ভবনও আছে। উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

এ বিষয়ে আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত ২ হাজার ২০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক ভবন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করে সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে। এই ভবনও এর মধ্যে ছিল। কিন্তু অধিদপ্তর এখনও ভবনটি পরিদর্শন করে চূড়ান্ত করেনি। এই সুযোগ নিয়েই ঐতিহাসিক ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের ভবন না ভাঙার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও সেই আদেশ অমান্য করে এটি ভাঙা হচ্ছে।’


ভবনটি ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে একটি মানববন্ধনও হয়েছে। এতে স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়াও নগর ও ইতিহাসবিদরাও অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মূল ভবন রেখে সংস্কারকাজের পক্ষে মতামত দেন তারা। বলেন, ভবনটি  মোগল আমলের নিমার্ণশৈলী। ঢাকার ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য এমন স্থাপত্যগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। 

মোহন দাস নামের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভবনটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের একটি অংশ। দুইশ বছরেরও বেশি পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলা ঠিক কাজ নয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটিকে সংরক্ষণ করা উচিত। এটিকে লাইব্রেরি কিংবা মিউজিয়াম হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। দ্রুতই ভাঙার কাজ বন্ধ করে এটি রেকটিফাইং করে সংরক্ষণের দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের আওতাধীন কোনো ভবন নয় বলেই আমরা জানি। এর বাইরে কিছু জানা নেই। সরকারি উদ্যোগে বিধি মেনেই পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। ছয় তলা নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। পুরোনো ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আহত হয়েছিল।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা