জাতীয় গণহত্যা দিবস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২৩:৪৭ পিএম
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে জাতি পালন করেছে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যালীলার শিকার হওয়া বাঙালির স্মরণে সোমবার (২৫ মার্চ) বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত ১১টা থেকে রাত ১২টা ০১ মিনিট পর্যন্ত প্রতীকী 'ব্ল্যাক আউট' কর্মসূচি পালন করা হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গণহত্যার কালরাত স্মরণে রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ ও আলোর মিছিল কর্মসূচি পালন করে। স্বাধীনতা ও গণহত্যার ৫৪টি প্রজ্বলিত মোমবাতি নিয়ে আলোর মিছিল শহিদ মিনার থেকে জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় 'পলিটিক্স অব জেনোসাইড রিমেম্বারেন্স ' শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইট প্রিভেনশনের মহাপরিচালক ড. এলিসা ভন ফরগে। প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমরা দাবি করে যাবো। এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’
সম্প্রীতি বাংলাদেশ বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে 'গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হলে আমাদেরকে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। শুধু দেশে নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই জাগরণ তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জাতিসংঘ-কর্তৃক ২৫ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস' ঘোষণার দাবিতে গণহত্যার বিশ্ব-রাজনীতি ও বাংলাদেশ গণহত্যা: ভুলে থাকা সাংস্কৃতিক দায়’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । এ ছাড়াও আয়োজন করা হয় চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। জাতীয় চিত্রশালার ১ নং গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। ১৯৭১ সালে রাজধানীতে সংগঠিত গণহত্যার স্থান রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, মিরপুর জল্লাদখানা, রায়েরবাজার বধ্যভূমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হল ও জগন্নাথ হলে গত ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্পে আঁকা চিত্রকর্মগুলো এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্বালন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাসদ সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনাসভা, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বালন করে গণহত্যার শিকার ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসটি উপলক্ষে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন এবং স্ক্রল পেইন্টিং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।