প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪৫ পিএম
রাজধানীর বিআইডব্লিউটিএ ভবনে এক আলোচনা সভায় কথা বলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রবা ফটো
যারা ভারতের বিরোধীতা করে স্লোগান তুলেছে, তারা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আহ্বান জানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘যারা ভারতবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, ইন্ডিয়া আউট বলছে, তারা বাংলাদেশের জনগণ থেকে আউট হয়েছে। তারা পাকিস্তানপন্থি এবং পাকিস্তানের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা রাজনীতিতে যখনই পরাজিত হয় এবং জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখনই ভারতবিরোধী স্লোগান শুরু করে।’
বুধবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বিআইডব্লিউটিএ ভবনে আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতবিরোধী স্লোগানের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে আছে। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দেয়নি। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। অসাম্প্রদায়িকতা থাকলে দেশে এগিয়ে যাবে– বর্তমান বাস্তবতা সেটি প্রমাণ করে। ভারত আউট মানেই হলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আহ্বান জানানো। আমরা তো সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। স্বাধীনতার মাসেও দেখছি– পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ করতে চায়, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, এগিয়ে যাওয়া সহ্য করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সারা পৃথিবীতে কেন বিস্ময়কর একটি জায়গায় চলে গেল, কেন এটি উন্নয়নের রোল মডেল হল– এটা তাদের বড় কষ্ট। তারা এই উন্নয়ন চায় না, তারা সব সময় প্রভুত্ববাদের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে চায়। এজন্য বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করে।’
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিল– বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। তাদের এই থিওরির বিপরীতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেই জায়গাগুলো এখনও আমরা ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এটা শুধু একটি পারিবারিক হত্যাকাণ্ড নয়। এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, একটি দেশকে হত্যা করার জন্য। তারই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীনতার জন্য অনেকেই সংগ্রাম করেছেন। কারও কথায় স্বাধীনতা আসেনি। এই বাংলার সম্পদ দিয়ে লন্ডন শহর তৈরি করা হয়েছে, কলকাতা শহর তৈরি করা হয়েছে, ইসলামাবাদ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বঙ্গবন্ধু সেটা জানতেন এবং সেই পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার সম্পদ দিয়ে আমার অধিকার তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।’
নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো এদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানো। আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড় করানো। পদ্মা সেতু আমাদের একটি মর্যাদার জায়গা। দেশের বাইরে থেকে সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান যারা আসেন তারাই পদ্মা সেতু দেখতে চান। শেখ হাসিনার উন্নয়ন পুরো পৃথিবী জানতে চায়। যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। যে গর্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে তৈরি হয়েছিল।’
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিয়ির সচিব মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ শরীফ উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।