× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত ডলার এলো কীভাবে

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৯:০০ এএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৭:২৯ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত ডলার এলো কীভাবে

ন্যাশনাল ব্যাংক কী হঠাৎ আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে গেছে? এমন প্রশ্ন উঠেছে সংকটে থাকা ব্যাংকটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্সের প্রবাহের উল্লম্ফনের কারণে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকে রেমিট্যান্সের জোয়ারকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে একটি ব্যাংকে রেমিট্যান্সের এমন ঢল নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ব্যাংক খাতে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থনীতিসংশ্লিষ্টরা কেউ এর রহস্য এখনও আন্দাজ করতে পারছেন না। কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ কোটি ডলার বা ১৫০০ কোটি টাকা বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আগের মাসগুলোর চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। একক মাস হিসেবে রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি আগের বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ। বর্তমান ডলার সংকটের মধ্যে এটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে দেশের অর্থনীতিতে। চাপে থাকা রিজার্ভের জন্যও এটা স্বস্তিদায়ক।

তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী আয় ২০ থেকে ২১ কোটি ডলারের ঘরে ওঠানামা করছিল। হঠাৎ করে ফেব্রুয়ারিতে সেটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে বেশি এসেছে ১৪ কোটি ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছিল ২০ কোটি ডলার। আর ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ৩৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ ফেব্রুয়ারিতেই বড় লাফ দিয়েছে। ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ সূত্রের তথ্য বলছে, আলোচিত মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ জানুয়ারির চেয়ে প্রায় ১০ কোটি ডলার বেশি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসা রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল অর্থ দেশে এলো তার কোনো সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি। 

সাধারণত বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স এলে ওই গ্রাহককে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। অধিক রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মাননাও দেওয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে কে বা কারা কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত অর্থ দেশে আনল তার তথ্য না থাকা অস্বাভাবিক। বিপুল এ অর্থ কী কাজে ব্যবহার হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মেহমুদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জানুয়ারির প্রবাসী আয়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারির আয়ের পরিমাণটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছে। এর কারণ বলাটা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে হলে ঠিকই ছিল। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনেক বেশি বাংলাদেশি থাকে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের পেমেন্ট বেশি ছিল। তাই আমরা বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে আমরা একটা টার্গেট দিয়েছি। তদারকি হয়েছে তাদের টার্গেট পূরণের জন্য।’ কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন এত বেশি অর্থ এলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে অনেকগুলো দেশের রেমিট্যান্স আসে। তাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার অনুকূলে বড় অঙ্কের অর্থ এসেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই।’

তবে তার এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন কেন্দ্রীয় ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পেমেন্টের জন্য হঠাৎ বেশি ডলার প্রয়োজন হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন এত বেশি আসবে? তাহলে তো আগেও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি থাকার কথা। আর ব্যাংকটির এক মাসে প্রায় পাঁচগুণ বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করাও সহজ বিষয় নয়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তথ্য গোপন করার নীতি অবলম্বন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৩১ কোটি ডলার। সাধারণত ব্যাংকটিতে আসা রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১০ কোটি ডলারের নিচে থাকে। গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬ কোটি ডলার। নভেম্বরে আসে ৫ কোটি ও অক্টোবরে মাত্র আড়াই কোটি ডলার।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০ কোটি ডলার। আগস্টে এসেছিল ১৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ১৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার ও অক্টোবরে ১৮ কোটি দশমিক শূন্য ৩ লাখ ডলার। নভেম্বরে এসেছিল ২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২১ কোটি ১৫ লাখ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠায় না। তাই এটাকে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এক মাসে হঠাৎ ১৪ কোটি ডলার বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ বলেন, এগুলো পাচারের টাকাও হতে পারে। কারণ ভারতের বড় ব্যবসায়ী আদানির বিনিয়োগ নিয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগকারীদের অর্থের উৎস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন খুব সতর্ক। এ কারণে হয়তো অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে টাকা রাখা এখন নিরাপদ মনে করছে না। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, দেশে কি এখন পাচারকারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়েছে? কারণ তারা বিদেশে টাকা পাচার করত মূলত দেশে নিরাপদ মনে না করার কারণে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা