× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিলেট-সুনামগঞ্জে শিলাবৃষ্টিতে ৩০০ ঘর বিধ্বস্ত, আহত ২৫০

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৫ এএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত রবিবার রাত পৌনে ১১টায় সুনামগঞ্জে প্রচণ্ড ঝড়ে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে এবং উপড়ে পড়া গাছপালায় চাপা পড়ে আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। দেশের আরেক প্রান্ত রাজশাহী ও পাবনায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি এপ্রিলে মৃদু, মাঝারি তীব্র ও একাধিক অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ও।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, আহত ২৫০ 

প্রতিদিনের বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক জানান, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের সময় ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে, উপড়ে পড়া গাছপালায় চাপা পড়ে কমপক্ষে ২৫০ মানুষ আহত হয়েছে। রবিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে উপজেলার ৯টি গ্রামের ওপর দিয়ে এই ঝড় বয়ে যায়। গতকাল সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমএ মান্নান, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, রাত ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। ১০ মিনিট পর এই বাতাস রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে। চলে ১১টা পর্যন্ত। মাত্র ১০ মিনিটের এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ করে দেয় সবকিছু। উপজেলার শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের কামরূপ, আস্তমা, সদরপুর, পার্বতীপুর, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর, চন্দ্রপুর, ইনাথনগর, শত্রুমর্দন ও কান্দিগাঁও গ্রামের ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এ সময় অসংখ্য গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে। সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ২৫০ জন আহত হয়েছে।

সিলেটে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি 

সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাত সোয়া ১০টা থেকে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় ১৫ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড় তীব্র গতিতে সিলেট নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। চৈত্রের শেষে এমন শিলাবৃষ্টিতে তরমুজ ও বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিলায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ির ওপর গাছপালা ভেঙে পড়াতে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার অধিবাসীরা জানায়, শিলার আঘাতে দুই ব্যক্তির মাথা ফেটে গেছে। তারা বলেন, তারাবির নামাজের পর সিলেট নগরীসহ বিভাগের অন্য স্থানে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এরপর শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ফলে রাস্তায় থাকা সাধারণ মানুষ, পথচারী ও ঈদের কেনাকাটায় যাওয়া লোকজন বিপাকে পড়ে। শিলার আকার বেশ বড়ই ছিল।

কারও কারও বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালা শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খোলা জায়গা ও রাস্তায় অবস্থান করা মানুষের মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছে। আম্বরখানা এলাকায় ঝড়ে আটকা পড়া এএইচ আরিফ বলেন, যে বড় আকারে শিলা পড়েছে তা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি। একেকটির ওজন কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম হবে। 

৫ বিভাগে বইছে তাপপ্রবাহ

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলাসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশালসহ ৫ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। তা ছাড়া জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিবেদক জানান, চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চৈত্রের খরতাপে তপ্ত রোদে বাতাসে আগুনের হল্কা ছড়াচ্ছে। গত তিন দিন ধরে ঈশ্বরদীজুড়ে বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গতকাল রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা এ বছরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বিরাজমান থাকায় ঈদবাজারে ক্রেতাসমাগম কমেছে। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। 

রেলগেট এলাকায় যাত্রীর জন্য প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন রিকশাচালক আলী হোসেন। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ঈদের আগ মুহূর্তে সাধারণ মানুষ মার্কেটে আসবে, আমাদের আয়ও একটু বাড়বে। কিন্তু রোদের কারণে তেমন মানুষ আসতে দেখছি না। রোদের তাপ এতই বেশি যে, যাত্রী ডাকার জন্য রাস্তায় একটু দাঁড়াতে পারছি না।

রাজশাহীতে বইছে মৃদু দাবদাহ

রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীতে সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি বছর রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে রবিবার সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বইছে। এটি আরও কয়েক দিন থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহীতে গত শনিবার দিবাগত রাতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তখন তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রিতে নেমে আসে। এরপর থেকে পরে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। গতকাল বেলা ৩টায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া এদিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২২ শতাংশ। এ কারণে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় বইছে মাঝারি দাবদাহ 

চুয়াডাঙ্গা প্রতিবেদক জানান, চুয়াডাঙ্গায় বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। আবহাওয়া অফিস বলছে, সহজে দেখা মিলছে না বৃষ্টির। গতকাল বেলা ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২১ শতাংশ। 

দেশের এক অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে তো আরেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বইছে- এটি আবহাওয়ার জন্য বিশেষ কোনো পরিস্থিতি কি না, জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে (প্রাক-মৌসুম) এ ধরনের অবস্থা হয়ে থাকে। এটি বিশেষ কিছু নয়। রাতে হয়তো বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টি হলো, দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ল। আবার কখনও দিনেও শিলাবৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা কমে যায়, বেড়ে যায়। মৌসুমের এই পর্যায়ে এমন হয়েই থাকে।

এপ্রিলের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস

এদিকে সোমবার চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসে বৃষ্টিপাত কম হবে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ছাদেকুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। 

তার আগে গতকাল দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওস্থ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মার্চ মাসের আবহাওয়ার তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় উঠে আসে, দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রংপুরে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সার্বিকভাবে গত মার্চ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি এপ্রিলেও স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হবে। 

এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিলে দেশে ৫ থেকে ৭ দিন বিক্ষিপ্তভাবে শিলাসহ বৃষ্টি, বজ্র বৃষ্টিসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের এবং ১ থেকে ৩ দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের আভাস 

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তার মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। 

তাপপ্রবাহ 

দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি মাসে ২ থেকে ৪টি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ, ১ থেকে ২টি তীব্র বা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা