ঈদের ছুটির আগেই ফাঁকা সচিবালয়
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩৯ পিএম
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকবে। সেই অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। এবার ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের ছুটি তিন দিন থাকছে। অবশ্য ছুটির পঞ্জি অনুযায়ী ঈদুল ফিতরে নির্ধারিত ঐচ্ছিক ছুটি (এক দিন) নেওয়ার সুযোগ পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু এবার ১৩ এপ্রিল শনিবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন পড়েছে। আগামী ৮ ও ৯ এপ্রিল যথাযথ নিয়মে সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকবে। যারা দূরে যাবেন তারা চাইলে ঐচ্ছিক ছুটি নিচ্ছেন। তবে ঈদের ছুটির আগেই বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয় ফাঁকা দেখা গেছে। অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অগ্রিম ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। আবার দুই দিন ছুটি ঘোষণা না করায় সরকারি কর্মচারীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শত শত ঐচ্ছিক ছুটির আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিসভার একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ৯ এপ্রিল এক দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি মন্ত্রিসভায়। ফলে এবার ঈদের ছুটি আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনই থাকছে। যদিও বাস্তবে সরকারি চাকরিজীবীরা ছুটি ভোগ করবেন আরও বেশি। কারণ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রবিবার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, পাঁচ দিন টানা ছুটির সুযোগ থাকছেই। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) ১০ থেকে ১২ এপ্রিল। তবে রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৯ এপ্রিল এক দিন ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এদিকে পবিত্র শবে কদরের পরদিন, ৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি। তার আগে ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী যদি ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি নিতে পারেন তাহলে তিনি লম্বা ছুটি ভোগ করতে পারবেন। শবে কদরের ছুটির পর ৮ ও ৯ এপ্রিল (সোম ও মঙ্গলবার) দুই দিন অফিস খোলা। ১১ এপ্রিল ঈদ হলে বাড়ি যেতে মাত্র একদিন (১০ এপ্রিল) সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়ে এখন ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঈদুল ফিতরের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি থাকছে না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ঈদের আগে ৯ এপ্রিল ছুটির যে সুপারিশ করেছিল তা নাকচ করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সরকারি অফিস আদালত খোলা থাকবে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় দুপুর ১টার পর থেকে ফাঁকা হয়ে গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনেকেই অগ্রিম ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে এসে শুধু হাজিরা দিয়েই চলে গেছেন। তবে সচিব উপ-সচিব পর্যায়ের যারা অফিস করছেন, তাদেরও কাজের ব্যস্ততা তেমন একটা নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঈদ সামনে রেখে অনেক কর্মকর্তা আগেই চলে গেছেন। আর যারা আছেন তারা সকালে অফিসে এসেই স্বাক্ষর করে বের হয়ে গেছেন।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ঐচ্ছিক ছুটির ব্যবস্থা আছে। যারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করবেন তারা এ ছুটি নিতে পারবেন। এটির জন্য আলাদা নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনসহ অন্যান্য প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বছর রমজান মাস ৩০ দিন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের ছুটির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মুসলমানদের জন্য এ বছর মোট ৫ দিন ঐচ্ছিক ছুটি আছে। এর মধ্যে ঈদুল ফিতরের পর ১৩ এপ্রিল ঐচ্ছিক ছুটি নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু এবার ১৩ এপ্রিল শনিবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন পড়েছে। ধর্ম অনুযায়ী ঐচ্ছিক ছুটি নির্ধারণ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ৯ এপ্রিল সরকারি ছুটি থাকছে না। আইনশৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব করেছিলাম তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়নি। আগামী ৯ এপ্রিল ছুটি দেওয়া হলে ছুটি দীর্ঘ হয়ে যাবে। এমনিতেই এ বছর ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়া যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে যারা কাজ করছেন তাদের বেশির ভাগই ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। একাধিক সহকারী সচিব জানান, তারা রাজধানীতেই ঈদ করছেন। তাই তাড়া নেই। অফিস করছেন মনোযোগ দিয়ে। ছুটিতে ফাঁকা ঢাকাকে তারা উপভোগ করেন বলেও জানান। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।