× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিনাভোটের উপজেলাগুলোয় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৬ এএম

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৮ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এরই মধ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল। অন্য দুই ধাপের ভোটের দিনও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ২৮ দিনে চার ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি। সে কারণে এই চার ধাপে নির্বাচনযোগ্য ৪৮৪টি উপজেলাতেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, শতাধিক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা সেবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮০ জনের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটে। আর প্রায় ৩০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এই তিন পদেই ছিলেন একক প্রার্থী। ফলে ওইসব উপজেলায় ভোটের প্রয়োজনই হয়নি। 

তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিনা ভোটের ওইসব উপজেলার বেশিরভাগেই এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলটির স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন। আবার ভিন্ন আভাসও মিলছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ, নোয়াখালীর হাতিয়া, চট্টগ্রামের রাউজান এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় এবারও ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে এমনটা ঘটতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এসব উপজেলার কয়েকটিতে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরা নিকটাত্মীয়দের বা নিজের পছন্দের লোককে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

গতবার যেসব উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি 

জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ; নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, ফরিদপুর সদর, নোয়াখালীর হাতিয়া, চট্টগ্রামের রাউজান ও মিরসরাই, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, ভোলার ভোলা সদর, মনপুরা ও চরফ্যাশন; যশোরের শার্শা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবিদ্বার ও চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরামে গতবারের নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

কী হতে যাচ্ছে এবার

বিনা ভোটের উপজেলাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় নির্বাচন হবে আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে। এখনও বর্তমান চেয়ারম্যান ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর সাড়া নেই। ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্যানা-পোস্টার দেখা গেলেও চেয়ারম্যান পদে কারও সে রকম কোনো তৎপরতা নেই। এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা আলোচনা নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়ে আসছেন এই উপজেলায়। প্রয়াত সংসদ সদস্য আলতাব হোসেন গোলন্দাজের ছেলে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এই এলাকার সংসদ সদস্য। উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন বাদল টানা দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি একইভাবে নির্বাচিত হবেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। গফরওগাঁও শহরের এক চা বিক্রেতা বলেন, এই উপজেলায় কোনো নির্বাচন নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন এমপির লোক। এখানে এমপি যা বলেন, তার বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।

আশরাফ উদ্দিন বাদল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভোটে দাঁড়াতে কাউকে তো মানা করা হয় না। যে কেউ আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন। সবার জন্য এটা উন্মুক্ত। 

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা ঘটতে পারে। এ দুই উপজেলায় ভোট তৃতীয় ধাপে আগামী ২৫ মে। আগৈলঝাড়া উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রইস সেরনিয়াবাত, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সরদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি এবার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করার পর অন্যরা এখন নিশ্চুপ।

গৌরনদীতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম জয়নাল আবেদিন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মনির হোসেন মিয়া এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সিসহ আরও ছয়জন এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন বলে প্রচার ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী মহল থেকে সম্প্রতি সেখানে পৌর মেয়র হারিচুর রহমান হারিচকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অন্যদের প্রচার-প্রচারণা থেমে গেছে। 

জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহে নির্বাচন হবে ২৯ মে তৃতীয় ধাপে। এই দুই উপজেলায় গতবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম বলে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী দাবি করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দৌলতুজ্জামান দুলাল মাদারগঞ্জ উপজেলা সম্পর্কে বলেন, ‘এমপি সাহেব (মির্জা আজম) কিছুদিন আগে দলের বর্ধিত সভায় বলেছিলেন উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে। এর কয়েকদিন পর তিনি সিদ্ধান্ত বদল করে পুনরায় সভা ডেকে বর্তমান চেয়ারম্যানকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এ সময় আমরা সম্ভাব্য ৬ প্রার্থী এই সিদ্ধান্ত বয়কট করে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের সিদ্ধান্ত, আমরা উন্মুক্ত নির্বাচন করব।’

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বেলাল বলেন, তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আমি মাদারগঞ্জের মানুষকে ভালোবাসি, তারাও আমাকে ভালোবাসে। আশা করি, আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মাদারগঞ্জের মানুষ আমাকে নির্বাচিত করবে। 

মেলান্দহ উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। এরা হচ্ছেনÑ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেলান্দহ পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী দিদার পাশা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম এমদাদ। 

গতবার ভোলার সদর, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নির্বাচনে সব পদে একক প্রার্থী থাকার ঘটনা ঘটলেও এবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার। চরফ্যাশন ও মনপুরায় চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন ভোট। সদর উপজেলায় ভোট ২৩ মে দ্বিতীয় ধাপে। চরফ্যাশনে এরই মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য দুই প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এরা হচ্ছেনÑ দুলারহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম শাহে আলম খোকন ও চরফ্যাশনের সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী ফিরোজ প্লাবন। এছাড়া চরফ্যাশনের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আখন এবারও প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এর আগে দল থেকে দুবার আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি নির্বাচিত হয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। 

নরসিংদী সদর উপজেলার সঙ্গে পলাশ উপজেলায়ও আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ দুই উপজেলায় নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কাউকে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে না জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীকেও। 

পলাশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও এবার তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শরিফুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু এবার সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে, তাই আমি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে এবার দলীয় কোনো প্রতীক ব্যবহার হবে না। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনকে দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখতে এমপি-মন্ত্রীসহ জেলা পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশনাও দিয়েছে হাইকমান্ড।

সৈয়দ জাবেদ হোসেন বলেন, আমি দুবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। পলাশের উন্নয়নে গত ১০ বছর কাজ করেছি। আশা করছি, পলাশবাসী আবারও তাদের ভোট দিয়ে আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।

ফরিদপুর সদর উপজেলায় প্রথম ধাপে ভোট হতে যাচ্ছে। এবার এ উপজেলায় ক্ষমতাসীন দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকছেন একাধিক। তারা এরই মধ্যে জনসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির একজনকেও মাঠে দেখা যাচ্ছে। নির্দলীয় প্রার্থীও রয়েছেন একজন। জাতীয় পার্টির কোনো সাড়া নেই। ফরিদপুর সদর-৩ আসনের এমপি এ. কে. আজাদ সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী মনিরুল হাসান মিঠু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সমর্থনে মাঠে নেমেছেন ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম চৌধুরী। বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল রাজ্জাক মাস্টারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এবার দল থেকে কোনো প্রার্থী দেবে না। তারপরও জেলা আওয়ামী লীগ আমাকেই সমর্থন দিয়েছে। 

কৈজুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাউফ-উন-নবী বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনএমের হয়ে অংশগ্রহণকারী গোলাম রব্বানী খান মুনও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। 

হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই উপজেলায় একাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আশিকের ছোট ভাই মাহতাব আলী অদ্রি বলেন, বিগত ৪০ বছর হাতিয়ার মানুষ আমার বাবা-মাকে যেভাবে সুখে-দুঃখে সঙ্গে পেয়েছেন, সেইভাবে আমার বড় ভাই আশিক আলি অমিকেও সবসময় সঙ্গে পাবেন। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের হাতিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদ আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এমপিপুত্র আশিক আলী অমির নাম ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে তিনিই একমাত্র প্রার্থী। বিগত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে একাধিক প্রার্থী হয় না। সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী যে মতামত দেন, সবাই সেটা মেনে নেন।

পাবনা সদর উপজেলায় গতবার যারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারোফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারকও। সেই সুবাদে তিনি টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। এর আগে দুবার পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। কিন্তু এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দলের মধ্যেই তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এরই মধ্যে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারই সহযোগী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম রুমন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রায় এক ডজন নেতা। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার খান। তবে বিএনপির কোনো নেতাকে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তৌহিদুল হক চৌধুরী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারা চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থিত ছিলেন। এবার এ উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অতীতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর একক আধিপত্য থাকলেও এবার তার আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান। এরই মধ্যে দুজনের ‘বাহাস’ শুরু হয়েছে। কয়েক মাস আগেও যারা সাবেক ভূমিমন্ত্রীর কাছের লোক ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দুয়ারে পৌঁছে গেছেন। 

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় এবারও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী এবং থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মান্নান। অন্যদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের সমর্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিএমএ নেতা ডা. নাছির উদ্দিন মাহমুদ প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এই চারজন ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেলও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারেন। 

গতবার মিরসরাইয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জসীম উদ্দিন ও রাউজানে এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। এবার রাউজানে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মিরসরাইয়ে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা, রাউজান উপজেলা নির্বাচনের বিষয়টি ওই এলাকার সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ওপরই নির্ভর করে থাকে। তিনি যাকে পছন্দ করবেন, তিনিই চেয়ারম্যান হবেন। 

মিরসরাইয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেব সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতার নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও মাঠে রয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস হোসেন আরিফ, বারইয়ারহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র জালাল উদ্দিন। মিরসরাই উপজেলায় নির্বাচন হবে প্রথম ধাপে। 

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আনোয়ারাবাসী চায় আমি নির্বাচনে অংশ নিই। বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, অতীতের মতো উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখার স্বার্থে এলাকাবাসীর দাবি, আমি যেন নির্বাচনে অংশ নিই। 

কুমিল্লায় বিনা ভোটের পাঁচ উপজেলার মধ্যে নাঙ্গলকোট, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের নির্বাচনে হবে প্রথম ধাপে। স্থানীয়রা জানান, এই তিন উপজেলার মধ্যে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা কম। তবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে নাঙ্গলকোটে। 

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রতিবেদকরা)

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা