× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলার লোকদর্শন ও লালন

আবুল আহসান চৌধুরী

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৩ পিএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৪৮ পিএম

বাংলার লোকদর্শন ও লালন

লালনের গান সমাজ-সম্পর্কের ধারা বেয়ে সাম্প্রদায়িকতা-জাতিভেদ-ছুঁৎমার্গ এসব যুগ-সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছিল। এই প্রয়াসের মাধ্যমে লালন সমাজসচেতন, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিচয় দিয়েছেন তার স্বরূপ নির্ণয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান।

বাঙালির লোকধর্ম হিসেবে বাউলের মত ও সাধনার ধারা যথেষ্ট প্রাচীন হলেও গুরুবাদী সংগীতাশ্রয়ী এই মরমি সম্প্রদায়ের রচিত আদি গানের সন্ধান পাওয়া যায় না। যদিও মরমি সাধনা ও সংগীতের অনুরাগী ক্ষীতিমোহন সেন কিছু প্রাচীন বাউল গান সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে তা বেশ প্রচারও পায়। কিন্তু বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের মুগ্ধতা সত্ত্বেও সেই সব গানের অকৃত্রিমতা ও পদকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয়ের অবকাশ আছে। সে ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নিদর্শনের ভিত্তিতে ফকির লালন সাঁইকে বাউলগানের প্রথম ও প্রধান পদকর্তা এবং সেই সঙ্গে বাউলসাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পাশাপাশি এও উল্লেখ করা প্রয়োজন, ব্রাত্যজনের এই সাধনসংগীতকে লালনই শিষ্ট সমাজে গ্রহণযোগ্য ও সমাদরের সামগ্রী করে তোলেন।

লালন সাঁই বাউলসাধনার সিদ্ধপুরুষ। তাঁর সাধনার ভেতর দিয়েই বাউলমতের সর্বোচ্চ বিকাশ। লালন তাঁর অতুলনীয় সংগীত-প্রতিভা ও তত্ত্বজ্ঞানের সমন্বয়ে বাউলগানের একটি স্বতন্ত্র ‘ঘরানা’ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর গানে বাউলের তত্ত্ব ও সাধনার গভীর পরিচয় প্রতিফলিত।

লালনের গানে দেহবিচার, মিথুনাত্মক যোগসাধনা, গুরুবাদ, মানুষতত্ত্ব  বাউলসাধনার এসব বিষয় সঙ্গতভাবেই এসেছে। বাউলের সাধনার মূল অবলম্বন মানবদেহ ও মানবগুরুর নির্দেশনা। তাই দেহজরিপ ও গুরুবন্দনাই রয়েছে বাউলসাধনার মূলে। তাঁর অনুষঙ্গে এসেছে সৃষ্টিতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, মানুষতত্ত্ব, খোদাতত্ত্ব, নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব বা গৌরতত্ত্ব।

দেহকে কেন্দ্র করেই বাউলের সাধনা। এই দেহেই ‘পরম পুরুষে’র বাস। তাই দেহবিচারের মাধ্যমে আত্মস্বরূপ নির্ণয় করতে পারলেই সেই পরম প্রত্যাশিত ‘মনের মানুষে’র সন্ধান মেলে। লালনের গানে এই মানবদেহ কখনও ‘ঘর’, কখনও ‘খাঁচা’, আবার কখনও বা ‘আরশিনগর’নামে চিহ্নিত।

বাউলগান বাংলার একটি প্রধান লৌকিক ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীত। তাদের রহস্যময় অধ্যাত্ম-সাধনার গূঢ়-গুহ্য পদ্ধতি কেবল দীক্ষিতজনের কাছে প্রচারের জন্যেই এই গানের জন্ম। শিল্পসৃষ্টির সচেতন প্রয়াস এখানে অনুপস্থিত। লালনও তাই বিশুদ্ধ শিল্প- প্রেরণায় তাঁর গান রচনা করেননি, বিশেষ উদ্দেশ্য-সংলগ্ন হয়েই তাঁর এই গানের জন্ম। তবে প্রায় ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনকে অতিক্রম করে লালনের গান অনায়াসে শিল্পের সাজানো বাগানে প্রবেশ করেছে স্বমহিমায়। লালনের গান তাই একাধারে সাধনসংগীত, দর্শনকথা ও শিল্পশোভিত কাব্যবাণী। তত্ত্বসাহিত্যের ধারায় চর্যাগীতিকা বা বৈষ্ণব পদাবলি সাধনসংগীত হয়েও যেমন উচ্চাঙ্গের শিল্পসাহিত্যের নিদর্শন, তেমনি বাউলগানের শ্রেষ্ঠ নজির লালনের গান সম্পর্কেও এই একই কথা বলা চলে। 

দীর্ঘজীবী লালন প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে গান রচনা করেছেন। তাঁর গানের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও অনুমান করা যায় তা অনায়াসেই হাজারের কোঠা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এযাবৎ সংগৃহীত তাঁর প্রমাণ্য গানের সংখ্যা কোনোমতেই সাতশ ছাড়িয়ে যাবে না। লালন ছিলেন নিরক্ষর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগই তাঁর হয়নি। কিন্তু তাঁর সংগীতে বাণীর সৌকর্য, সুরের বিস্তার, ভাবের গভীরতা আর শিল্পের নৈপুণ্য লক্ষ করে তাঁকে নিরক্ষর সাধক বলে মানতে দ্বিধা থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন স্বশিক্ষিত। ভাবের সীমাবদ্ধতা, বিষয়ের পৌনঃপুনিকতা, উপমা-রূপক-চিত্রকল্পের বৈচিত্র্যহীনতা ও সুরের গতানুগতিকতা থেকে লালন ফকির বাউলগানকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁর সমকালেই তাঁর গান লৌকক ভক্তমণ্ডলীর গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষিত সুধীজনকেও গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ তাই তাঁর গানের যোগ্য কদরদানি করেছিলেন। উত্তরকালে লালনের গান দেশের ভূগোল ছাড়িয়ে বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে। এই নিরক্ষর গ্রাম্য সাধককবির শিল্পভুবনে প্রবেশ করলে বিস্মিত হতে হয় যে, তিনি কত নিপুণভাবে শিল্পের প্রসাধন-প্রয়োগ করেছেন তাঁর গানে। ভাব-ভাষা, ছন্দ-অলঙ্কার বিচারে এই গান উচ্চাঙ্গের শিল্প-নিদর্শন এবং তা তর্কাতীতরূপে কাব্যগীতিতে উত্তীর্ণ। লোকপ্রিয় লালনের গান আজ তাই সংগীত-সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। 

লালনের কবিত্বশক্তির পরিচয় তাঁর অনেক গানেই পাওয়া যায়। বহুল উচ্চারিত তত্ত্বকথা ও সীমাবদ্ধ বিষয়ের অনুবর্থন সত্ত্বেও লালন তাঁর সংগীতে সেই গতানুগতিক ধারাকে অতিক্রম করে নতুন ভাব-ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করেছেন। তত্ত্বকথার দুরূহ ও ক্লান্তিকর বদ্ধ আবহে এনেছেন শিল্প-সৌন্দর্যের সুবাতাস। তাই বাংলার মরমি কবিদের মধ্যেই যে কেবল তিনি শ্রেষ্ঠ তাই নয়, বাংলার সংগীতসাহিত্যের ইতিহাসেও তিনি এক কালোত্তীর্ণ স্মরণীয় শিল্পী ব্যক্তিত্ব। 

মূলত লালনের গানের অসামান্য শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য, উচ্চাঙ্গের দর্শন ও প্রবল মানবিকতাবোধের জন্যে এদেশের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে অন্নদাশঙ্কর রায় এবং বিদেশে চার্লস ক্যাপওয়েল থেকে ক্যারল সলোমন এরা লালনের গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। বাউলগানের রসজ্ঞ বোদ্ধা রবীন্দ্রনাথ তাঁর এক কবিতায় বলেছিলেন : 

সাহিত্যের ঐকতানসঙ্গীতসভায়

একতারা যাহাদের তারাও সম্মান যেন পায়

[“ঐকতান”, ‘জন্মদিনে’]

তাঁর এই আন্তরিক প্রত্যাশা বাংলা সাহিত্যের দরবারে লালন ফকিরের স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্থকভাবে পূরণ হয়েছে এ কথা বলা যায়। 

লালনের গান বাউল সম্প্রদায়ের গুহ্য-সাধনার বাহন হলেও এর ভেতরে মাঝেমধ্যে বিস্ময়কর সমাজচেতনা প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক অবিচার ও অসাম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, শ্রেণি-শোষণ ও গোত্রবৈষম্য এই মরমি সাধকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। তাই অধ্যাত্ম-উপলব্ধির অবসরে, প্রক্ষিপ্ত চিন্তার চিহ্ন হলেও তিনি এসব বিষয়ে তাঁর অকপট-আন্তরিক বক্তব্য পেশ করেছেন। বিত্তবান ও বিত্তহীন, কুলীন ও প্রাকৃত, শোষক ও শোষিতে বিভক্ত সমাজে দরিদ্র-নিঃস্ব-নির্যাতিত নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি ছিলেন লালন।

লালনের গান সমাজ-সম্পর্কের ধারা বেয়ে সাম্প্রদায়িকতা-জাতিভেদ-ছুঁৎমার্গ- এসব যুগ-সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছিল। এই প্রয়াসের মাধ্যমে লালন সমাজসচেতন, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল দৃষিভঙ্গির যে পরিচয় দিয়েছেন তার স্বরূপ নির্ণয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। লালনের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাকে কেউ কেউ বাংলার সামাজিক জাগরণের পুরোধা রাজা রামমোহন রায়ের অবদানের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অন্নদাশঙ্কর রায় মন্তব্য করেছেন, বাংলার নবজাগরণে রামমোহনের যে গুরুত্ব বাংলার লোকমানসের দেওয়ালি উৎসবে লালনেরও সেই গুরুত্ব। অধ্যাপক অমলেন্দু দে-ও লোকায়ত জীবনে লালনের সুগভীর প্রভাব এবং নবজাগৃতির প্রেক্ষাপটে লালন ও রামমোহনের ভূমিকার তুলনামূলক আলোচনার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। 

আমাদের বিশ্বাস, নবজাগৃতির পটভূমিকায় রামমোহন ও লালনের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবদানের আলোচনা হলে দেখা যাবে লালনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদ, সংস্কার ও জাতিভেদ-বিরুদ্ধ মনোভাবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতখানি। জানা যাবে, লালনের মানবিক মূল্যবোধ ও মানবধর্মী চিন্তাধারার প্রভাব বাংলার গ্রামদেশের প্রাকৃত জনগোষ্ঠী এবং নগরবাসী কিছু শিক্ষিত কৃতী পুরুষের মনেও কী গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কতখানি আন্তরিক ও অকৃত্রিম ছিল সেই প্রচেষ্টা। নবজাগৃতির অন্যতম শর্ত যে অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ, তা এই স্বশিক্ষিত গ্রাম্যসাধকের বাণী ও সাধনার ভেতরেই প্রকৃত অর্থে সত্য হয়ে উঠেছিল, প্রাণ পেয়েছিল। যথার্থই গ্রামবাংলার এই মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন সাঁই। 

উদার ও প্রগতিশীল মানসতার কারণে সমকালীন সমাজে লালনকে যথেষ্টই নিন্দিত ও নিগৃহীত হতে হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের শাস্ত্রবাহক মৌলবাদীরাই লালনের বিপক্ষে ছিলেন। মুসলমানের চোখে লালন বেশরা-বেদাতি নাড়ার ফকির, আবার হিন্দুর কাছে ব্রাত্য-কদাচারী হিসেবে চিহ্নিত। ধর্মগুরু ও সমাজপতি উভয়ের নিকটেই লালনের বাণী ও শিক্ষা অস্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু লালন তাঁর উদার প্রেমধর্মের বাণীকে সমাজশিক্ষার বাহন করে ক্রমশ তাঁর আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলেন। উত্তরকালেও লালন আক্রান্ত হয়েছেন। বাউল বা লালনবিরোধী আন্দোলন থেমে থাকেনি। জারি হয়েছে বাউলধ্বংস ফতোয়া- রচিত হয়েছে রদ্দে নাড়া, ভণ্ড ফকির, সাধু সাবধান, বাউল একটি ফেতনা, নেড়ার ফকিরের গুপ্তকথার মতো বিদ্বেষপূর্ণ পুস্তিকা। মৌলবাদী আক্রমণে কিছুকাল আগে ঢাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে লালন-স্থাপত্য। তবে আশার কথা, স্বদেশে অনুদার-প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির লালনবিরোধী ভূমিকার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির সুস্থ ধারার চর্চা যারা করেন, তারা লালনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই লালনের সমাধিসৌধের শান্ত-সৌম্য আবহ ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস প্রতিহত করতে গড়ে ওঠে লালন আখড়া রক্ষা কমিটি। লালন-স্থাপত্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালি। এরই পটভূমিতে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের জাতীয় সম্মেলনে মূল থিম ঘোষিত হয়, লালন আমার প্রাণের স্পন্দন। কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক গণিত উৎসব (২০০৯) উৎসর্গিত হয় লালনের উদ্দেশে। এই সাধক পদ্মার বুকে ঠাঁই পান লালন সেতু নামকরণের ভেতর দিয়ে। বাংলাদেশের বাউলগান, যার প্রধান রূপকার লাপলন সাঁই। সেই বাউলগানকে ইউনেস্কো ২০০৫ সালে ‘Masterpiece of the Oral and Intangible Heritage of Humanity’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে লালন পৌঁছে গেছেন দেশান্তরে। এইভাবে লালন হয়ে ওঠেন কালান্তরের পথিক- বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারার কালপুরুষ। 

লালনের পরিচয় ও প্রতিষ্ঠার পরিধি আজ দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে বিশ্বমানচিত্রকে স্পর্শ করেছে। তাঁর প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশে বাউল ও লালন সম্পর্কে আগ্রহ ও অনুরাগের পরিচয় পাওয়া যায় চার্লস ক্যাপওয়েল, এডওয়ার্ড সি ডিমক, জোসেফ কুকার্জ, জুনে ম্যাকড্যানিয়েল, ক্যারল সলোমন, ম্যান্ড্রিন উইনিয়স, ফাদার মারিনো রিগন, মাসউকি ও নিশি, জান ওপেনশ, মাসাহিকি তোগাওয়া প্রমুখের রচনায়। অদূরভবিষ্যতে বহির্বিশ্বে লালন বাংলাদেশ ও বঙ্গসংস্কৃতির প্রতিনিধি ব্যক্তিত্ব হিসেবে গৃহীত হবেন, সে সম্ভাবনা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

লালনের মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১৩২ বছর। তবু আজও লালন সমান প্রাসঙ্গিক, জনপ্রিয় ও আধুনিক। তাঁর গান বাউলসমাজের সাধনার উপকরণ হিসেবে যেমন বিবেচিত, তেমনি সংগীতরসিকের মরমি চিত্তকেও আলোড়িত করতে সক্ষম, পাশাপাশি সমাজভাবনার অনুষঙ্গেও তা মূল্যবান। লালন গবেষক ডক্টর ক্যারল সলোমন একবার এক আলাপচারিতায় বলেছিলেন, লালন যে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, সে মেসেজ বেশ কয়েকটা গানে পাওয়া যায়। আবার বেশ কিছু গান আছে যা গোঁড়ামি এবং সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে। লালন বিশ্বাস করেছিলেন যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। তা হলে দেখা যায় যে, লালনের গানে বিশ্ব মানবমৈত্রীর উপকরণ আছে। আজ আবার নতুন করে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদের উত্থানকালে মনুষ্যত্ব মানবতার লাঞ্ছনার সময়ে- সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বৈরী যুগে লালনের গান হতে পারে প্রতিবাদের শিল্প- শান্তি ও শুভবুদ্ধির প্রতীক, মানুষের প্রতি হারানো বিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনার পরম পাথেয়।

গ্রন্থঋণ :

১. বসন্তকুমার পাল : মহাত্মা লালন ফকির, শান্তিপুর-নদীয়া, ১৩৬২

২. উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য : বাংলার বাউল ও বাউল গান। দ্বি. স., কলকাতা, নববর্ষ ১৩৭৮

৩. মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন : হারামণি, কলকাতা, বৈশাখ ১৩৩৭

৪. আহমদ শরীফ : বাউলতত্ত্ব, ঢাকা, ফাল্গুন ১৩৭৯

৫. অরবিন্দ পোদ্দার : মানবধর্ম ও বাংলা কাব্যে মধ্যযুগ। দ্বি. স., কলকাতা, অক্টোবর ১৯৫৮

৬. হেমাঙ্গ বিশ্বাস : লোকসঙ্গীত সমীক্ষা : বাংলা ও আসাম, কলকাতা, জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৫

৭. অমলেন্দু দে : বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, কলকাতা, মে ১৯৭৪

৮. অন্নদাশঙ্কর রায় : লালন সাঁই ও তাঁর গান, কলকাতা, বুদ্ধপূর্ণিমা ১৩৮৫

৯. আবুল আহসান চৌধুরী : লালন সাঁইয়ের সন্ধানে, ঢাকা, ২০০৭

১০.  আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত, লালনসমগ্র, ঢাকা, ২০০৮

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা