প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক বিংশ শতাব্দীর বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর, কুড়িগ্রামে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণের জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী সময়ে একমাত্র তিনিই সাহিত্যের সকল শাখায় কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম রেখে গেছেন বলে মনে করা হয়। শুরুর দিকে সৈয়দ শামসুল হক চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লিখতেন। তোমার আমার, শীত বিকেল, কাঁচ কাটা হীরে, বড় ভাল লোক ছিল, গেরিলাসহ আরও বেশকিছু চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখে দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ত্যাগ করেন এবং লন্ডনে বিবিসিতে বাংলা খবর পাঠক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিবিসিতে তিনিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পাঠ করেন।
সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। বাড়ির রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে ‘আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে’ পদটি রচনা করেন। বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা, পরাণের গহীন ভেতর, নাভিমূলে ভস্মাধার, আমার শহর ঢাকা, বেজান শহরের জন্য কোরাস, বৃষ্টি ও জলের কবিতা কাব্যগ্রন্থগুলো তাঁকে পাঠকমহলে জনপ্রিয় করে তোলে। দেয়ালের দেশ, এক মহিলার ছবি, অনুপম দিন, সীমানা ছাড়িয়ে, খেলারাম খেলে যা উপন্যাসগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদীনের সারাজীবন, নারীগণ, যুদ্ধ এবং যোদ্ধা, ঈর্ষা, এখানে এখন তাঁর রচিত বিখ্যাত নাটক। বহুলপ্রজ লেখক সৈয়দ শামসুল হক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রিয় জলেশ্বরীখ্যাত শহর কুড়িগ্রামে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
আনিসুজ্জামান
একজন প্রকৃত শিক্ষক একই সঙ্গে উচ্চমানের গবেষক হবেন, এমন কোনো নিয়ম নেই। আবার একজন উচ্চমানের গবেষককে দক্ষ শিক্ষক হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। কথা নেই নির্মোহ মানুষ হওয়াতেও। কিন্তু যিনি এই তিন গুণের অধিকারী হন, তিনি বিরলপ্রজ মানুষ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন তেমনই একজন প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক, অভিনিবিষ্ট গবেষক ও বাঙালি চেতনাবোধের কিংবদন্তিতুল্য মানুষ। যিনি তাঁর সার্বিক জীবনাচরণে সংস্কৃতি সচেতনতার শুভ্রতায় পুরো জাতিকে আলোড়িত করেছেন। এমন প্রজ্ঞাবান, অগাধ পাণ্ডিত্যের মানুষ একই শতাব্দীতে খুব কমই জন্মায়। তাঁর মতো পরিপূর্ণ বাঙালি এই অঞ্চলে আমরা কমই পেয়েছি। সারা জীবন তিনি বাঙালি মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গের সমাজ ও সংস্কৃতির চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। তাঁর চিন্তাভাবনা ও কর্মে ‘বাঙালি’ ধারণাটি নানা স্রোত বিনুনির মধ্য দিয়ে পরস্পরিত হয়ে বয়ে গেছে। বাঙালির আত্মপরিচয় সংকটে নানান মত-পথ, রীতি-নীতি ও দার্শনিকতার উত্থান-পতনের দ্বান্দ্বিকতার ভেতর আনিসুজ্জামান বাঙালি জাতীয়তাবাদকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। আমরা বলতে পারি- বাঙালিয়ানা নিয়ে বাঙালি মুসলমানের যে ছুঁতমার্গ ছিল, তা কাটিয়ে ওঠার প্রধান পথপ্রদর্শক তিনি।
গবেষণা আর সামাজিক কর্মের জগতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবন একাকার হয়ে আছে। জীবনভর বিচিত্র মানুষের সংস্পর্শ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য এক দার্শনিকতায়। আমরা দেখেছি, মনের যে ভারসাম্য তিনি অর্জন করেছিলেন, তাতে মতের পার্থক্য তাঁর জন্য কখনই কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অন্তরায় হয়ে ওঠেনি। তিনি শুধু তাঁদের সঙ্গে মেশেনইনি, অবিরলভাবে তাঁদের সম্পর্কে লিখেছেনও। তিনি তাদের মধ্যে এ বাংলার মানুষের সমাজের উজ্জ্বল উত্থানরেখা দেখতে পেয়েছিলেন। এ জন্য সাহিত্য থেকে সমাজ-সংস্কৃতির জগতে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একজন দীপ্তমান মানুষ।