× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শ্রদ্ধা

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৫ পিএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম

শ্রদ্ধা

সত্যেন সেন

ভারতীয় উপমহাদেশের মুক্তি আন্দোলন এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাঙালি জাতির চেতনাকে আলোড়িত করে গিয়েছেন যাঁরা, সত্যেন সেন তাঁদেরই একজন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে। সাহসী নেতার পূর্ণ নাম সত্যেন্দ্রমোহন সেন। শৈশবে তাঁকে ডাকা হতো লংকর নামে। বাবা ধরণীমোহন সেন এবং মাতা মৃণালিনী সেনের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এই কিংবদন্তির বিপ্লবী সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং শ্রমিক-সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে।

তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধ। সম্ভ্রান্ত এই সেন পরিবার শিল্প-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী চর্চারও এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর কাকা ক্ষীতিমোহন সেন ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য, অন্য কাকা মনমোহন সেন ছিলেন শিশুসাহিত্যিক। মূলত পারিবারিক আবহেই তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। 

এ ছাড়া পদ্মা, ধলেশ্বরীর জলধারা আর গ্রামীণ পরিবেশ তাঁর মানসলোক গঠনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা পরিবার ও গৃহশিক্ষকের কাছেই। ১৯১৯ সালে সোনারং হাই স্কুলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯২১ সালে তিনি যখন সোনারং হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ। তিনি ১৯২৪ সালে নিজ গ্রামের সোনারং হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে ভর্তি হন কলকাতার একটি কলেজে এবং সেখান থেকে এফএ এবং বিএ পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৩১ সালে কারাবরণ করতে হয় তাঁকে। জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। 

সত্যেন সেন দৈনিক সংবাদ-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে ১৯৫৪ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতশিল্পী। কিছুসংখ্যক গণসংগীত রচনাও করেছেন তিনি।

নূর হোসেন

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর। তারিখটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে লাল অক্ষরে খোদিত। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে রাজধানীর সচিবালয় অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল বিরোধী দলগুলো। আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল অগণিত মুক্তিকামী মানুষ। স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত। বুকে-পিঠে চেতনার রঙে লেখা বিচিত্র প্ল্যাকার্ড, পোস্টার। সেই মিছিলের স্রোতে ছিলেন একজন টগবগে যুবক। নাম নূর হোসেন। তাঁর রক্ত-মাংসের উদোম শরীরে ছিল স্বপ্নের বাণী; বুকে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক’ আর পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। যেন পুরো শরীরটাই জীবন্ত পোস্টার। খালি পা, শার্ট কোমরে প্যাঁচানো।

সমবেত জনতার মিছিলটি ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালায়। বুলেটবিদ্ধ হন নূর হোসেন। ওই সময় নিহত হন আরও দুজন; তাঁরা হলেনযুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল এবং কৃষক নেতা আমিনুল হুদা টিটু। এ সময় বহু আন্দোলনকারী আহত হন। তীব্র আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।

জীবন উৎসর্গ করা নূর হোসেনের জন্ম ১৯৬১ সালে ঢাকার নারিন্দায়। পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তাঁর পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। পিতা ছিলেন পেশায় রিকশাচালক। নাম মুজিবুর রহমান। মা মরিয়ম বিবি। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েন থাকায় নূর হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর কিছুদিন গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। 

এই নূর হোসেনই হয়ে আছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয় নূর হোসেন চত্বর। প্রতিবছর ১০ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় নূর হোসেন দিবস পালন করা হয়। যার সাহস নেই সে ইতিহাস রচনায় অংশী হতে পারে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করে। শহীদ নূর হোসেন আজ ইতিহাস।

জহুরুল ইসলাম

জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠিত আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি ১৯২৯ সালের ১ আগস্ট কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ময়মনসিংহ ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের একজন ঠিকাদার। তাঁর আয় খুব বেশি ছিল না। জহুরুল ইসলাম ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র। কলকাতায় চাচার কাছে থেকেই তিনি লেখাপড়া করতেন। চাচার ছিল বদলির চাকরি, তাই বারবার স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতার রিপন হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বলতে গেলে তাঁর শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ। পরে তিনি দুবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাস করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ব্যর্থ এই মানুষ ব্যবসায় কখনও ব্যর্থ হননি। ১৯৫১ সালে কেরানির চাকরি ছেড়ে একজন তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে পুরোপুরি ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি। পিতার নামেই শুরু হয় ঠিকাদারি ব্যবসা। পূর্ব পাকিস্তানের নানা স্থানে তখন সরকারি বাড়িঘর, রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ ছিল প্রচুর। তিনি ঠিক সময়ে শেষ করতেন বলে কাজ পেতে থাকেন। ১৯৫৩ সালের মধ্যেই পেয়ে যান প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারের স্বীকৃতি। এরপরই নিমগ্ন হন আবাসন খাতের ব্যবসায়। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইস্টার্ন হাউজিং। এই প্রতিষ্ঠান ঢাকার বনশ্রী, আফতাবনগর, মহানগর, নিকেতনসহ বেশকিছু হাউজিং প্রকল্প গড়ে তোলায় আধুনিক নগরায়ণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। কাজের সুবিধার্থে ১৯৭১ সালে লন্ডনে একটি অফিস খোলেন তিনি। বিস্তৃত হতে থাকে ব্যবসার নানা দিক। বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হলে ১৯৭৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ওই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর করা উল্লেখযোগ্য ব্যবসার মধ্যে ছিল আবুধাবিতে ৫ হাজার বাড়ি এবং ইরাক ও ইয়েমেনে উপশহর নির্মাণ। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই কীর্তিমান। 

মাজহারুল ইসলাম

মাজহারুল ইসলাম (১৯২৩-২০১২) বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যকলার পথপ্রদর্শক। ঔপনিবেশিক ধারণার বাইরে গিয়ে যার স্থাপত্যচিন্তায় একই সঙ্গে সমন্বয় ঘটেছে আধুনিকতা ও বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ সংস্কৃতি। বাংলাদেশে স্থাপত্যকলাকে যিনি শিল্পের রূপ দিয়েছেন আপন চিন্তার মাধ্যমে। 

স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে। ১৯৪৬ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশলবিদ্যায় লেখাপড়া শেষে যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান স্থাপত্য বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে। আড়াই বছরের পাঠ শেষে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরি ভবনের নকশা করেন। অনিন্দ্য এই দুই নকশা মাজহারুল ইসলামের আধুনিক চিন্তার স্বাক্ষর বহন করে।

মাজহারুল ইসলামের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেঢাকার খিলগাঁও রেলওয়ে পুনর্বাসন প্রকল্প, বিসিএসআইআর লাইব্রেরি ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অফিস ও ই-লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত নিপা ভবন, মতিঝিলের কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ভবন, জীবন বীমা ভবন, ঢাকার সড়ক গবেষণা পরীক্ষাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন, ঢাকার শেরেবাংলা নগর জাতীয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় আর্কাইভ ভবন, ঢাকার বিশ্বব্যাংক অফিস ভবন, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিলেট ও বরিশালের জন্য পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এ ছাড়াও জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন অঙ্গাঙ্গিভাবে। 

মাজহারুল ইসলামের সৃজন-কৌশল, ভাবনা ও জিজ্ঞাসায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের স্থপতিরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নতুন ধারণা তৈরি করেছেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনিই ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম স্থপতি। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের একক প্রচেষ্টা, চর্চা ও সাধনায় বাংলাদেশের স্থাপত্যকলা বোধে, মননে ও শৈল্পিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা