× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০২ পিএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম

শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

শামসুর রাহমান

বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার ৪৬ নম্বর মাহুতটুলিতে। বলা যায়, অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ নিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে জন্মেছিলেন তিনি। মৌলবাদ ও স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লিখে গেছেন আমৃত্যু। পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূত এই কবি তাই জীবদ্দশাতেই দেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন সাংবাদিক, কাজ করেছেন দৈনিক মর্নিং নিউজ, দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায়। সম্পাদনা করেছেন ‘অধুনা’ নামের মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। প্রকাশিত প্রথম কবিতার বইয়েই সাহিত্যাঙ্গনে সাড়া জাগান তিনি। তাঁর কবিতায় উপমা, ব্যঞ্জনা ও নিসর্গনির্ভর বিষয় ও উপাদানে নাগরিকজীবন চিত্রায়িত হয় নিপুণভাবে। নগরজীবনের ভাঙাগড়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্প তাঁর কবিতায় বাঙ্মময় হয়ে ওঠে। নগরের কোলাহল মুহূর্তেই শব্দবদ্ধ কাব্যিক স্বরে পরিণত হয়।

১৯৭২ সালে তাঁর ‘বন্দী শিবির থেকে’ কবিতার বইটি প্রকাশিত হলে তিনি বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষের কাছে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা যুদ্ধকালীন সাধারণের আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতীক বলে প্রতীয়মান হয়। ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামে লেখা এ গ্রন্থের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ ও ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা দুটি বাঙালি জাতীয়তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৮২ সালে সামরিক শাসনামলে ‘অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’ প্রকাশিত হলে কবি শামসুর রাহমান হয়ে ওঠেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর। 

নতুনধারার কাব্যরীতির নির্মাতা কবি শামসুর রাহমানের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৬৬টি, উপন্যাস চারটি, প্রবন্ধগ্রন্থ একটি, ছড়ার বই আটটি ও অনুবাদ ছয়টি। তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিকতার জন্য), স্বাধীনতা পদক ও আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

আল মাহমুদ

‘সোনালী কাবিন’-এর কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। ধ্রুপদি এই কবির জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে। তিনি কবিতার শব্দচয়ন, জীবনবোধ, শব্দালংকারের নান্দনিকতা ও বর্ণনায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর হাতে বাংলা কবিতায় নতুন আঙ্গিক, চেতনাবোধ ও বাকভঙ্গি বিনির্মাণ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশের এক উল্লেখযোগ্য ইতিহাস। শুধু কবিতাই নয়, বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, শিশুসাহিত্যকেও। পেশাগত জীবনের প্রথমার্ধে সাংবাদিকতা ও পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন তাঁর জীবনে যোগ করেছিল এক ভিন্নমাত্রা। দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধী ভূমিকার জন্য তাঁর সমালোচনাও কম নয়। কিন্তু সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে কবি আল মাহমুদ ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নিপীড়ন ও পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারবিরোধী আন্দোলনে লেখনীর মাধ্যমে যে অবদান রেখেছেন তা অনস্বীকার্য। বিশেষত লোকজ ভাবধারায় লোকায়ত বাংলার চিরায়ত শব্দসুষমাকে আধুনিক কাব্যে ঐতিহ্যের ধারণ, তার নির্মিত পটভূমিতে থাকা মানবিক আত্মবিশ্বাস তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। জসীমউদ্‌দীন ও জীবনানন্দ-উত্তর বাংলা কবিতায় তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির স্বাক্ষর রাখেন। কারও পদাঙ্কন নয়, নির্মীয়মাণ স্বকীয়তাই তাঁকে বাংলা সাহিত্যে প্রজ্ঞাময় স্থানের অধিকারী করে তুলেছে। তাঁর রচিত ‘লোকান্তর’ (১৯৬৩), ‘কালের কলস’ (১৯৬৬), ‘সোনালী কাবিন’ (১৯৭৩), ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কাবিলের বোন, পানকৌড়ির রক্ত তাঁর অনবদ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ, যে জন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দুই বাংলায়। তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীমউদ্‌দীন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। কালজয়ী এই কবি ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময়ে। জন্মসূত্রেই যেন তিনি নিজের লেখায় ক্ষুধা-দারিদ্র্য-জীবন সংগ্রাম তুলে ধরার শৈল্পিক শক্তি পেয়েছিলেন। তাঁর লেখায় গভীর জীবনবোধ, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক চেতনা পরিস্ফুটিত হয়েছে। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম সচেতন কথাশিল্পী, যার লেখায় জনমানুষের জীবন রাজনৈতিক পটভূমিতে উপজীব্য হয়েছে। ক্ষুধার্ত রুগ্ণ মানুষের বমি আর দুধভাতকে পাশাপাশি রেখে সমাজের উঁচু-নিচু শ্রেণি ভেদাভেদকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।

সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন তাঁর লেখা তাঁর মতো করেই মস্তিষ্কের কোটরে হাতুড়িপেটা করে। জীবনমুখী আবেদন, চরিত্র সৃষ্টিতে অভিনব মুন্সিয়ানা ও আঞ্চলিক সংলাপের যথার্থ প্রয়োগে তিনি

বাংলাসাহিত্যের একজন কিংবদন্তি লেখক। তিনি প্রমাণ করেছিলেন অত্যন্ত অল্প লিখেও মানুষের মানস চেতনায় চিরন্তন দাগ বসিয়ে দেওয়া যায়। মাত্র দুইটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধ সংকলন ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার সংকলনের মধ্য দিয়েই তিনি সাহিত্যে পাকাপোক্ত স্থান অধিকার করেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক যথার্থই বলেছিলেন, ‘একমাত্র সজ্ঞান ও সচল প্রয়াস ছাড়া’ শিল্পসিদ্ধি অর্জন করা যাবে না। ইলিয়াসের ছিল এই সচেতন অভিপ্রায়, বিস্ময় এখানেই। দুটি উপন্যাসেই তাঁর প্রতিভার অবিস্মরণীয় বিচ্ছুরণ ঘটল- কী বিষয়বস্তুতে, কী শৈলীসম্পাতে। 

চলমান রাজনীতির ধারাপ্রবাহের পটভূমিতে ব্যক্তির অস্তিত্বমোথিত এমন গাঁথা তিনি রচনা করলেন, যা শুধু বাংলাসাহিত্যেই অনন্য হয়ে ওঠেনি, বিশ্বসাহিত্যেরও হয়ে উঠেছে প্রতিস্পর্ধী। তাঁর কথা ধরেই আমরা বলতে পারি, তিনি মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর রচনায় ব্যক্তির জীবনপরিসর পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। কিংবদন্তি, ইতিহাস আর সমকালের পেণ্ডুলামে মেলে ধরেছেন আমাদের জীবনের অস্তিত্বগাঁথা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের এক মহাকাব্যিক ডিসকোর্স। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শীর্ষে অধিষ্ঠিত থাকবেন, তা নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা