অনেক ত্যাগ ও রক্তমূল্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতোমধ্যে কেটে গেছে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট এক দিনে তৈরি হয়নি। তবে একাত্তরে এই স্বপ্ন চূড়ান্ত মাত্রা পায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। আমরা জানি, তাঁর সহনায়ক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ আরও অনেকেই। তাঁরাসহ মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং তাদের ত্যাগ, সর্বোপরি একাত্তরের নয় মাসের রক্তাক্ত অধ্যায় শুধু বাঙালি জাতিই নয়, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ইতিহাসলগ্ন হয়ে আছে। আমরা এও জানি, ব্রিটিশের রাষ্ট্র ছিল ঔপনিবেশিক, পাকিস্তানি রাষ্ট্রের চরিত্রও দাঁড়িয়েছিল অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক। ওই দুই রাষ্ট্র চলে গেছে, একটির পর অন্যটি। তবে এই সত্য এড়ানো কঠিন, বিদেশিদের ঔপনিবেশিক শাসনে যেটা সত্য ছিল, স্বাধীন দেশেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মিথ্যা হয়ে যায়নি।
বায়ান্নর আন্দোলন ছিল মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সৃষ্টিশীলতার জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন ছিল সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে মাধ্যম হিসেবে চালু করা। সেটাই ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের মাতৃভাষা অর্থাৎ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজ উদ্ভাসিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা হয়নি। তিন ধারার শিক্ষা বিদ্যমান, তিনের মধ্যে জোরদার হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম। ওই মাধ্যমে যারা পড়ে তাদের স্বপ্ন থাকে, বিশেষ একটা স্বপ্ন থাকে, সেটা হলো বিদেশ যাওয়া এবং পারলে সেখানেই থেকে যাওয়া। মেহনতিদের সন্তানরা বিদেশে যায় দেশে টাকা পাঠাবে বলে, অবস্থাপন্নদের সন্তানরা যায় টাকা খরচ করতে এবং সেখানে থেকে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে। মেহনতিরা রাষ্ট্র শাসন করে না, অবস্থাপন্নরাই করে এবং শাসন যারা করে তাদের আদর্শই সমাজে গৃহীত হয়। বাংলাদেশেও সেটাই ঘটেছে। এখানে এখন সমষ্টিগত স্বপ্নের বড়ই অভাব।
সমষ্টিগত স্বপ্ন একাত্তরে ছিল, পরে তা ভেঙে গেছে। পুঁজিবাদী উন্নতির ধারণা তাকে ভেঙে দিয়েছে। স্বপ্নগুলো এখন যেন ব্যক্তিগত; একের স্বপ্ন অপরের স্বপ্নকে কনুই দিয়ে গুঁতোয়, ঠেলে ফেলে দিতে চায় পায়ের নিচে, ভাবে অন্যকে দাবাতে না পারলে তাদের উঠতি নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সমাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। শত্রু ও মিত্রের পক্ষে। তবে মিত্রের পক্ষেই ছিল অগণিত মানুষ। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববঙ্গের আওয়াজ ঊনসত্তরের পরে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু সে আওয়াজ পূর্ববঙ্গে সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক শক্তিশালী এবং সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশরূপে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর তা ভিন্নমাত্রা পায়। তাদের দেওয়া ছয় দফা দাবি থেকে শেষ পর্যন্ত এক দফাই মুখ্য হয়ে ওঠে এবং সেটা হলো স্বাধীনতার। এই অমোঘতার পূর্বাভাস ছিল সত্তরের নির্বাচনে। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এই আওয়াজ ছয় দফার বুক চিরে বেরিয়ে এলো একাত্তরের পয়লা মার্চের পরেই; কারও পছন্দ-অপছন্দের চাওয়া-না চাওয়ার তোয়াক্কা না করেই।
একাত্তরে একটি মৈত্রী ঘটেছিল, বাঙালি সমাজে শ্রেণিগুলোর মধ্যে। মৈত্রীর তাৎপর্য কিন্তু সামান্য নয়। আজও বাংলা ভাষা যে প্রশাসনিক কাজে ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যথার্থরূপে প্রচলিত হচ্ছে না তার আসল কারণ নিহিত সমাজের অনেকেরই বিদেশমুখো এবং তার সংবিতে গভীরভাবে প্রবিষ্ট ও প্রোথিত আছে পরদেশমুখাপ্রেক্ষিতায়। অথচ মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ একাত্তরের জনযুদ্ধ তো ছিল এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধেই। সেই যুদ্ধ এনে দিয়েছিল গভীর আত্মবিশ্বাস, ব্যাপক দেশপ্রেম। আমরা পরাধীন ছিলাম যুগ-যুগান্তর ধরে। বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে আমাদের উন্নতি নিশ্চয়ই হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিভিন্ন সূচকে উন্নতির নানা চিত্র দৃশ্যমান। কিন্তু ভেতরের অবস্থাটা কী? সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, অধিকারের অসমতল মাঠ ইত্যাদির নিরসন ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ফলে এসবের নিরসন ঘটেছিল বটে কিন্তু স্বাধীন দেশে তা-ই আবার ফিরে এলো এবং কীভাবে এলো তাও অজানা নয়। স্বাধীনতা-উত্তর এ পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গেলে আমাদের অর্জন-অনর্জনের বিষয়গুলোর মূল্যায়ন-পর্যালোচনা অবশ্যম্ভাবী। আমাদের স্বাধীনতার মূল স্বপ্ন কী ছিল? না, একটা-দুটা নয়; বেশ কিছু। এর মধ্যে অবশ্যই অন্যতম মূল স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রের মূল অনুষঙ্গ যেহেতু সমাজ সেহেতু রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হওয়া মানেই সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নির্বাচন হলেও একমাত্র উপায় সেটাও নয়। এর জন্য জরুরি রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার-সদিচ্ছা-দৃঢ়তা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, স্বাধীনতা অর্জনের পর নতুন করে আরও দৃঢ়ভাবে প্রত্যয় ব্যক্ত করলাম সমাজ বিনির্মাণের। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কাজটা এ পর্যন্ত কতটা সম্ভব হয়েছে। এর উত্তর প্রীতিকর নয়। আমরা মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছি। শিল্প খাতের বিকাশ ঘটেছে। কৃষি খাতের বিকাশও কম হয়নি। কিন্তু ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পদের সমবণ্টন কতটা নিশ্চিত করা গেছে?
আমাদের তারুণ্যের দৃষ্টান্তযোগ্য ইতিহাস রয়েছে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনসহ নানা ক্ষেত্রে তাদেরই অংশগ্রহণ ও সাফল্য ব্যাপক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই তারুণ্যের ক্ষয় ধরেছে। বিপথগামী তরুণের সংখ্যা এখন অনেক। এর জন্য নিশ্চয়ই দায়ী বিদ্যমান ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাই তাদের স্বপ্নও ভেঙে দিয়েছে। তারুণ্যের ক্ষয় পুনরুদ্ধারের পথ রয়েছে বটে কিন্তু সেই প্রচেষ্টা কতটা বেগবান, প্রশ্ন আছে এ নিয়েও। মানবমর্যাদা, নাগরিক অধিকার- এই জরুরি বিষয়গুলো এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্যের স্বপ্ন নানা কারণে ঢেকে যাচ্ছে বৈষম্যের ছায়ায়। বৈষম্যচিত্র নানা ক্ষেত্রেই প্রকট হয়ে উঠছে। সম্পদ সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত। জিডিপির আকার বেড়েছে কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এমন মানুষের সংখ্যা কত? অনেক। তাহলে কী করে বলি, যে উন্নয়নের কথা এত করে বলা হচ্ছে, প্রচার করা হচ্ছে, এর সুফল কি সবার দোরগোড়ায় পৌঁছেছে? উত্তর প্রীতিকর নয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এখনও বিষাক্ত করে সমাজকে। রাজনীতি সমাজের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রাজনীতিহীন সমাজ বদ্ধ-মজা জলাশয়ের মতো। এমন সমাজে জন-অধিকার স্বীকৃত নয়। আমাদের রাজনীতির গৌরবময় অতীত অস্বীকার করে এমন সাধ্য কার? মুক্তিযুদ্ধপূর্ব প্রতিটি অধ্যায় থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সবই আমাদের গৌরবোজ্জ্বল রাজনীতির অবদান। রাজনৈতিক অর্জনের দৃষ্টান্ত আছে স্বাধীন দেশেও। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা ছিল- এই রাজনীতি আরও বিকশিত হবে, জনকল্যাণে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে এবং তা হবে সার্বিকভাবে জনমুক্তির অন্যতম নিয়ামক শক্তি। বিভিন্ন মহল থেকে জাতীয় স্বার্থে বারবার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই জরুরি। কিন্তু এই কাতারে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছিল যারা তাদের শামিল করা যাবে না। এই শক্তি অচিহ্নিত নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে সময় সময় মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে রক্তস্নাত এই বাংলাদেশেও, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত।
সারা বিশ্ব তো বটেই, বাংলাদেশও চলেছে সংকটের মধ্য দিয়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংকট আরও প্রকট হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রে দায়িত্বশীল সবার কাছে যে ভূমিকা কাঙ্ক্ষিত তা কতটা পূর্ণতা পাবে এ নিয়েও প্রশ্ন তো আছে। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন তো দেখতেই হবে, তা না হলে দুঃস্বপ্নের হাত থেকে বাঁচব কী করে! একাত্তরের মতো সমষ্টিগত স্বপ্নের পথ ধরেই মুক্তির পথ অনুসন্ধানের কাজ চলমান রাখতে হবে। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার-প্রত্যয় ভুলে না যাই। সমতাভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন সমাজপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জয়ী না হতে পারলে আমরা কখনোই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে পারব না। এই ব্যর্থতা আমাদের নিয়তি হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম প্রধান শত্রু বৈষম্য। স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়- এও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরুদ্ধ। যুদ্ধ একাত্তরের ব্যাপার বটে কিন্তু আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। মুক্তির সংগ্রাম যেমন একাত্তরে শুরু হয়নি, তেমনি ২০২৩-এ এসেও তা শেষ হয়নি। মুক্তি ও স্বাধীনতা এক নয়। মুক্তি অনেক ব্যাপক ও গভীর ব্যাপার। আমাদের সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত জনযুদ্ধ এবং সমষ্টিগত স্বপ্ন। আবারও বলি, দেশে উন্নতি হয়েছে কিন্তু সেই উন্নতির সুফলভোগী মোট জনগোষ্ঠীর কতজন- এ প্রশ্নটি যেন উপেক্ষিত না থাকে। ধনী-দরিদ্রের তারতম্য বোঝাতে আকাশ-পাতালের উপমা অগ্রাহ্য নয়। ওই দুই প্রান্তের মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের বিন্যাস। মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সরবে নয়, নীরবে। তাকে চলতেই হবে, নইলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী, দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়?
গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আছে। এর মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, পরমতসহিষ্ণুতা, স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সরকার, বিরোধী দল এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি অন্যতম। জাতীয় সংসদ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে তর্কের দরকার নেই। গণতান্ত্রিক সরকার বলতে কেবল নির্বাচিত সরকার বোঝায় না। নির্বাচন সরকারগঠনের একটি পদ্ধতি মাত্র। একটা রাস্তা। ক্ষমতায় আপনি কীভাবে এলেন, জনসমর্থন নিয়ে নাকি বাহুর জোরে সেটা একটা বড় প্রশ্ন; কিন্তু আরও বড় প্রশ্ন হলো- ক্ষমতায় আরোহণ করে আপনি কী করছেন সেটা। নির্বাচিত সরকারও স্বৈরাচারী হতে পারে এবং হয়- এই নজিরও আমাদের সামনে আছে। সেই সরকারকেই আমরা গণতান্ত্রিক বলি, যে শুধু নির্বাচিত নয়, যে দায়ও মেনে নেয়। জবাবদিহির এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আরোহণ করেন তারাই প্রকৃতার্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
সংবাদমাধ্যম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ কথা অবশ্যই সত্য, সংবাদপত্র অতিশয় নশ্বর প্রাণী, দিনে জন্মায় দিবাবসানে মারা যায়। কিন্তু খবরের কাগজ কি সত্যি সত্যি কখনও বাসি হয়? সত্য কি এও নয় যে, আজকের সাংবাদিকতাই আগামীকালের ইতিহাস? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আমরা কেন চাই? বলা যাবে, সত্য উন্মোচনের জন্য। স্বাধীন সংবাদপত্রই হচ্ছে গণতন্ত্রের স্তম্ভ, সন্ত্রস্ত কিংবা আবদ্ধ সংবাদপত্র নয়। সংবাদপত্র যদি সংবাদপত্র হয় তাহলে তার নিজেকেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে হয়, কেননা সংবাদপত্র জনগণের। মালিক মালিক হয়েও মালিক নন, জনগণই মালিক, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা পাঠকের হয়ে যায়। পাঠকই বাঁচায় কিংবা মারে। পত্রিকার সম্মান প্রকৃতপক্ষে শুধু একজন পাঠকই দিতে পারেন। স্বাধীনতা চাই এজন্যই।
চলমান বৈশ্বিক সংকট, যার বাইরে আমরাও নই, এমন প্রেক্ষাপটে ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’ স্লোগান ধারণ করে ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করেছে। নিশ্চয়ই প্রত্যাশা থাকবে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর বিকাশ ঘটুক এবং পুনর্বার সমষ্টিগত স্বপ্নের সড়ক নির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখুক। নিরপেক্ষ নয়, বিকল্প সংবাদপত্র চাই। মানুষ নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে যে জিনিসটি কিনবে তার বিনিয়োগ যেন ব্যর্থ না হয়। আমরা যখন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য দাবি করি, তখন যেমন প্রকৃত আকাঙ্ক্ষাটা থাকে নিরপেক্ষ নয়, বিকল্প সরকারের, জনগণের সরকারের, ঠিক তেমনি নিরপেক্ষ সংবাদপত্রের কথা বলার সময়েও আশা থাকে সংবাদপত্র হবে পুঁজি কিংবা সরকার কিংবা অপসংস্কৃতির সেবক নয়, জনগণের সেবক। অগ্রগতির পথে সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টির কারিগর। যদি তা সম্ভব হয় তাহলেই কিন্তু সমষ্টিগত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ মসৃণ হবে।