প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪৩ পিএম
দুর্ঘটনায় আহত, অস্ত্রোপচার, সন্তান প্রসবকালীন সময় অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় রক্তের দরকার হয়। চিকিৎসক যখন এ তথ্য জানান, তখন আপন মানুষটির জীবন বাঁচাতে কে না দিশাহারা হন! এই সংকট মুহূর্তে নিকট-আত্মীয় বা বন্ধুর প্রয়োজনীয় রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে হন্যে হয়ে খোঁজেন রক্তদাতাকে। ভালোবেসে মানুষের জন্য মানুষ এগিয়েও আসে। আসলে মানুষকে ভালোবেসে যত কাজ করা যায়, সেগুলোর অন্যতম হলো রক্তদান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থীর বাবার রক্ত প্রয়োজনে এমনি এক মুহূর্তের তৈরি হয়েছিল। সহপাঠী বন্ধুটির আকুতিতে এগিয়ে আসেন কয়েকজন এবং সিদ্ধান্ত নেয় নিজেরাই রক্ত দেবেন। ১৯৭৮ সালের ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে প্রথম ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। ছাত্রদের মধ্যে সর্বপ্রথম রক্ত দেন ইদ্রিস আলী মঞ্জু আর ছাত্রীদের থেকে তৃতীয় বর্ষের হোসনে আরা লাকী। এভাবে ‘সেবাই আমাদের আদর্শ’ নীতিবাক্য ধারণের মধ্যদিয়ে সন্ধানীর পথ চলা শুরু। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ওই দিন ২৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়। এই মহতী উদ্যোগের কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারপাশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ১৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ সালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দ্বিতীয় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ঢাকা মেডিকেলের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হারুন উর রশিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং রক্ত দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পর সন্ধানীর দ্বিতীয় ইউনিট হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ আত্মপ্রকাশ করে ১৮ অক্টোবর, ১৯৭৯ সালে। সন্ধানী মূলত মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ওই নির্দিষ্ট ইউনিটের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত একটি কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে। সব ইউনিটকে সমন্বয়ের জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় পরিষদ। মেডিকেল কলেজসহ দেশের প্রায় সব জেলাশহরে হাসপাতালভিত্তিক সন্ধানীর শাখা আছে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সন্ধানীকে ব্লাডব্যাংক ও চক্ষুব্যাংক নির্মাণের জন্য নীলক্ষেতে জমি প্রদান করেন।
রক্তদান সংগ্রহের উদ্যোগ দিয়ে সন্ধানীর জন্ম হলেও ড্রাগব্যাংক, মরণোত্তর চক্ষুদান, হেলথ ক্যাম্পসহ সারা দেশে বছরজুড়ে বহু সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে মেধাবৃত্তি প্রদান, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভয়াবহ রোগের প্রাদুর্ভাবে সহযোগিতা, বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান, রক্তের গ্রুপ শনাক্ত, ইফতারি বিতরণ, ঈদসামগ্রী ও ঈদের পোশাক, শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালের ২ নভেম্বরকে ঘোষণা করে ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’।