মেয়েরা সাধারণত খেলাধুলায় আসতে চায় না। কৃষ্ণা সেখানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আজ জাতীয় তারকায় পরিণত হয়েছেন। আমাদের সমাজে নারী ফুটবলে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আসে সমাজ থেকে। একটা মেয়ে মাঠে খেলবেন এখনও অনেকেই এ বিষয়টা মেনে নিতে পারেন না।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন নারীরা। অদম্য এই নারীরা ফুটবল খেলে নিজেদের পরিবারকে বদলে দিচ্ছেন। নানা প্রতিকূলতা জয় করে ফুটবল খেলে সফলতা পেয়ে একসময়ের টিনের ছাপড়াঘর এখন পাকা দালানের হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল ও সাফজয়ী দলের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানী সরকারের।
নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ৩-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেন মেয়েরা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের যে মুকুট পরে বাংলাদেশ ভেসেছে আনন্দের জোয়ারে, সেখানে কৃষ্ণা রানী সরকারের ছিল অন্যতম ভূমিকা। তার জোড়া গোলেই হিমালয়কন্যাদের পরাজিত করেন আমাদের মেয়েরা।
নানা প্রতিকূলতা জয় করে সফলতা পেয়েছেন সাফজয়ী দলের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় অদম্য নারী কৃষ্ণা। যে কজন নারী ফুটবলার আছেন তাদের বেশিরভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। পরিবারের নানা প্রতিকূলতা দূরে ঠেলে তারা ফুটবল খেলছেন। প্রত্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে নারীদের এমন ফুটবল প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টকর। নানা কষ্টের মধ্যেই নারী ফুটবলাররা অনেক সফলতা বয়ে আনছেন।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল ( যে কোনো পর্যায়ের) প্রথম যে ট্রফি নেপালে অর্জন করে সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন কৃষ্ণা। আমাদের ফাইনাল ছিল ২৫ মে। সেদিন নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সেই স্কোয়াডে আমরা মাত্র তিনজন পুরুষ ছিলাম, বাকি সবাই মেয়ে। সেখানেই কৃষ্ণার সাহসিকতা, নেতৃত্ব দেওয়ার অসাধারণ গুণাবলির পরিচয় পাওয়া গেছে। এর পর তো আমরা সবাই জানি, পরেরবার নেপালে গিয়ে কৃষ্ণার অসাধারণ পারফরম্যান্সেই ফাইনালে আমরা বিজয়ী হই।
মেয়েরা সাধারণত খেলাধুলায় আসতে চায় না। কৃষ্ণা সেখানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আজ জাতীয় তারকায় পরিণত হয়েছেন। আমাদের সমাজে নারী ফুটবলে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আসে সমাজ থেকে। একটা মেয়ে মাঠে খেলবেন এখনও অনেকেই এ বিষয়টা মেনে নিতে পারেন না। এটা যে শুধু গ্রামে আছে এমন নয়, শহরেও এ মানসিকতাটা আছে ভালোমতোই। তবে একেকটা অর্জন বেশকিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলের প্রায় প্রত্যেকের পরিবারই সমর্থন জুগিয়েছে। ফুটবলে কৃষ্ণার হাতেখড়ি ২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে। সেবার খেলেছিলেন সুতি ভিএম পাইলট মডেল হাই স্কুলের হয়ে। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে কৃষ্ণার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলা শুরু। এরপর একে একে খেলেছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই ও চূড়ান্ত পর্বে। বয়সভিত্তিক সাফে খেলেছেন একাধিকবার। ২০১৪ সালে পাকিস্তানে মেয়েদের সাফে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেকেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক।
২০১৫ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে মেয়েদের সাফল্যের পথচলা শুরু। এরপর ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে এই একই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬ সালে এএফসি অনূধর্ব্ব-১৬ বাছাই পর্বেও বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। এরপর ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে ট্রফি জেতে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফেও চ্যাম্পিয়ন হন মেয়েরা।
কৃষ্ণার প্রতিভার পরিচয় অনেক আগেই পাওয়া গেছে। বয়সভিত্তিক দলেই কৃষ্ণা প্রমাণ করেছেন তিনি আগামীর তারকা হতে যাচ্ছেন। তার বেড়ে ওঠা, ফুটবল দক্ষতা, অনুশীলন, সাফল্য, বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার। মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সবাইকে রক্ষণশীলতা ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ বদলাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনোভাবও। এখন ক্রীড়া ক্ষেত্রে মেয়েদের সাফল্য মানুষ ভীষণ উপভোগ করে। তাই সারা বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে কৃষ্ণা এখন অনুপ্রেরণা ও আইডল।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.