× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পড়াশোনা হবে আনন্দের সঙ্গে

রোকনুজ্জামান মনি

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৫৫ এএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩২ পিএম

পড়াশোনা হবে আনন্দের সঙ্গে

টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষার্থীরাই এর সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার, সেই বিশ্বাস আয়মানের। তবে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে লন্ডনে ফিউচার লিডারস লিগ চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ সালে কুইন্স ইয়াং লিডার অ্যাওয়ার্ড পান আয়মান। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য টেন মিনিট স্কুলও ভূষিত হয়েছে সুইস অ্যাম্বাসি অ্যাওয়ার্ড, গ্লোমো অ্যাওয়ার্ড ও আইসিটির অস্কার খ্যাত অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডে।

বাংলাদেশি শিক্ষা উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক। তার হাত ধরেই ২০১৫ সালে চালু হয় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘টেন মিনিট সকুল’। আয়মান শুধু টেন মিনিট স্কুল পরিচালনাই করেন না, তিনি এখানে শিক্ষকতাও করেন। বিনামূল্যে পড়াশোনার অনলাইন প্ল্যাটফরম টেন মিনিট স্কুলের যেমন রয়েছে বিষয়ভিত্তিক কোর্স, তেমনই রয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং, সিভি ও ইমেইল রাইটিং, ইংরেজি গ্রামার এবং কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্টের মতো বিভিন্ন কোর্স। পাঠদানে বৈচিত্র্য থাকায় কয়েক বছরের ব্যবধানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে যুক্ত হয়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। টেন মিনিট সকুলে প্রতিদিন গড়ে পড়াশোনা করে ২০ লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তাদের এমন ৫০ লাখ গ্রাহক রয়েছে যারা মুঠোফোনে ব্যবহার করে টেন মিনিট স্কুলের অ্যাপ। মাত্র ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৩৪ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের রয়েছে ১৩টি কার্যালয়; যেখানে কাজ করছেন ২ শতাধিক কর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে নিজের খরচ নিজেই চালানো উচিত—এমন ভাবনা থেকেই ছাত্র পড়াতে শুরু করেছিলেন আয়মান। অল্প দিনের মধ্যেই টাকা উপার্জনের পাশাপাশি ছাত্র পড়ানোর আনন্দও তার মাঝে জেঁকে বসে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের পড়াতে গিয়ে তিনি দেখলেন, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কোচিংয়ের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। এর জন্য দরকার অনেক টাকার। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যেন বিনামূল্যে তার ক্লাস করার সুযোগ পায় সেজন্য ক্লাসগুলো রেকর্ড করে অনলাইনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০১৪ সালে খোলা হয় টেন মিনিট স্কুল নামে ফেসবুক পেজ। সেখানে প্রথমে পাওয়ার পয়েন্ট এবং পরে আপলোড করা হতে থাকে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট। ২০১৫ সালের ১০ মে টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইট লঞ্চ করার দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে হঠাৎ লঞ্চিংয়ের ঠিক সাত দিন আগে কোডিংগুলো কীভাবে যেন মুছে যায়। ওয়েবসাইটটি তার কার্যক্ষমতা হারায়। এর মধ্যে ব্রুনেইতে ‘শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ পান আয়মান।

ব্রুনেইতে যখন সবার সামনে টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটটি দেখানোর সন্ধিক্ষণ চলে আসে, ঠিক সেই মুহূর্তের নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে ওয়েবসাইটটি কাজ করছিল না। ১৭ মে পুনরায় লঞ্চিংয়ের দিন নির্ধারণ করে সাত দিনের টানা পরিশ্রমের পর টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটটি সচল করা হয়। টেন মিনিট স্কুল ১৭ মে লঞ্চ হয়। লঞ্চিংয়ের কার্যক্রম শেষ করে ওইদিনই ব্রুনেইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন আয়মান সাদিক। যখন তিনি ট্রানজিশনের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন, তখন জানতে পারেন তাদের সার্ভার ক্র্যাশ করেছে। অথচ ঘণ্টাখানেক পরই টেন মিনিট স্কুলকে পুরো বিশ্বের সামনে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে। তখন ক্রেডিট কার্ড ছিল না আয়মানের। এয়ারপোর্টে বসে এক বড় ভাইয়ের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনেন নতুন সার্ভার। সারা রাত কাজ করার পর সকালবেলা আবার টেন মিনিট স্কুল চালু হয়। ব্রুনেইতে পুরো বিশ্ব দেখেছিল টেন মিনিট স্কুলকে। এর পর থেকে আর কখনও টেন মিনিট স্কুলের সার্ভার ডাউন হয়নি।

তবে ভিডিও কনটেন্ট বানাতে গিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে আয়মানকে। টেন মিনিট স্কুলের শুরুর দিকে সারা রাত জেগে ভিডিও বানাতে হতো তাদের। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর পাড়াপড়শিরা আয়মানের মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘আয়মান কী করে?’ মা উত্তর দিতেন, সে তো ভিডিও বানায়। পড়শিরা আবার জিজ্ঞাসা করতেন, ‘কিসের ভিডিও বানায়?’ মা উত্তর দিতেন, তা তো জানি না। আসলে পড়শিরা দেখতেন আয়মান প্রতিদিন রাতে ভিডিও বানানোর জন্য যান আর সকালে ফেরেন। এতে তাদের মনে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম দিত। প্রথম দিকে এর জন্য মা কিছুটা কষ্টও পেতেন।

এভাবেই বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে স্নাতক শেষে বহুজাতিক কোম্পানির চাকরিতে না গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটেন আয়মান সাদিক। নিজের ভার্চুয়াল উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নেন বিভিন্ন স্পনসর। তবে করোনা বিধিনিষেধ শুরু হলে সংকটে পড়েন এই তরুণ উদ্যোক্তা। স্পনসরদের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কর্মীদের বেতন দিতে টাকাও ধার করতে হয়েছে তাকে। তবে ২০২১ সালের শেষে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ভারতের সেকোয়া ক্যাপিটাল প্রায় ২০ লাখ ডলার বা ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে টেন মিনিট স্কুলে। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত এবং চাকরি পাওয়ার পর বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করছে টেন মিনিট স্কুল।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একদিন উন্নত হবে- এমন স্বপ্ন দেখেন আয়মান সাদিক। না জেনে না বুঝে মুখস্থ করার যে চর্চা তা একদিন শেষ হবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। এমন একটি সময়ের জন্য তার অপেক্ষা যেদিন সবাই বুঝে বুঝে পড়বে। পড়াশোনা হবে আনন্দের সঙ্গে, ভীতি নিয়ে নয়। শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের বাইরেও নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী হবে। যেখানে একজন ছাত্রকে সিজিপিএ নয়, বরং মেধা দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। সবাই নিজেদের পছন্দের মতো বিষয় পড়বে, শিখবে।

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি উন্নয়নে টেন মিনিট স্কুলের রয়েছে বিশেষ ভাবনা। অনলাইনে শিক্ষকদের জন্যও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে টেন মিনিট স্কুল। কীভাবে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ইন্টারেকটিভ কনটেন্ট দিয়ে ক্লাসে পাঠদান করানো সম্ভব, তা নিয়ে সরকারেরও বড়সড় পরিকল্পনা আছে। টেন মিনিট স্কুল শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি সহায়ক। আর এ সহায়তা যে-কেউ পেতে পারে, তা-ও আবার একদম ফ্রি!

শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল হচ্ছে, একসময় বেকারত্বের সমস্যাও কেটে যাবে বলে বিশ্বাস আয়মানের। আমাদের আগামী আরও উন্নত এবং সহজতর হবে বলেও ধারণা তার। তবে এখনও আরও অনেক কাজ বাকি। এ মুহূর্তে একুশ শতাব্দীর দক্ষতাগুলো নিয়ে নতুন কোর্স এবং কনটেন্ট সাজানোর কাজ চলছে। এ কাজ সম্পূর্ণ হলে তা বেকার সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।

সফলতা বলতে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা, মানুষকে নতুন কিছু শেখানো, হাসানো এবং মানুষের জীবনে মূল্য সংযোজন করাকেই বোঝেন আয়মান। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষকে পাশেও পেয়েছেন- সে কথা নির্দ্বিধায় বলে যান তিনি। খুব সহজ-সরলভাবেই স্বীকার করেন, যখনই যাকে যা অনুরোধ করেছেন তার থেকে তা-ই পেয়েছেন। মানুষের মাঝে বিশ্বাস দেখতে পান তিনি। তার টিম মেম্বাররা তাকে বিশ্বাস করেছেন, সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় তাকে বিশ্বাস করেছে, রবি তাকে বিশ্বাস করেছে।

টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষার্থীরাই এর সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার, সেই বিশ্বাস আয়মানের। তবে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে লন্ডনে ফিউচার লিডারস লিগ চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ সালে কুইন্স ইয়াং লিডার অ্যাওয়ার্ড পান আয়মান। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য টেন মিনিট স্কুলও ভূষিত হয়েছে সুইস অ্যাম্বাসি অ্যাওয়ার্ড, গ্লোমো অ্যাওয়ার্ড ও আইসিটির অস্কার খ্যাত অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডে। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে আইসিটি পুরস্কার, ইয়োথ অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অর্ধশতাধিক সম্মাননা-পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আয়মান ও টেন মিনিট স্কুল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা