× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মহাকাশ গবেষণায় দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন লামিয়া

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০০ এএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩২ পিএম

মহাকাশ গবেষণায় দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন লামিয়া

বাংলাদেশে জ্যোতিষীর দেখা পাড়ায়-মহল্লায় বেশ পাওয়া যায়। কিন্তু জ্যোতির্বিদের দেখা শত বছরেও মেলে না। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরে বাংলাদেশি জ্যোতির্বিদের নাম খোঁজা হলে কেবলমাত্র আবদুল জব্বারের নামই উঠে আসে। তিনিই প্রথম বাংলার আকাশে নক্ষত্ররাজির ছক তৈরি করেন, তার তত্ত্বাবধানেই বাংলাদেশে প্রথম খণ্ডগোলক (সেলেসিয়াল গ্লোব) নির্মিত হয়। আবদুল জব্বারের পর বাংলাদেশে জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে হয়ত অনেকেই নিভৃতে কাজ করেছেন কিংবা এখনও করছেন, কিন্তু খ্যাতিমান হিসেবে তারা আলোচনায় আসেননি। তাছাড়া বাংলাদেশে জ্যোতির্বিদ্যা, মহাকাশ গবেষণার পরিসর খুবই সীমিত। এই সীমিত পরিসরে কাজ করে একজন সফল ও খ্যাতিমান জ্যোতির্বিদ হওয়া সত্যিই অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সেই সীমিত পরিসরকে জয় করে এই রাজধানী ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা বাঙালি লামিয়া আশরাফ মওলা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পুরো বিশ্বকে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মহাকাশে পাঠানো হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

২০২২ সালের ১২ জুলাই সেই জেমস স্পেস টেলিস্কোপ থেকেই পাঠানো হয় এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণকৃত মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও রঙিন ছবি। ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে বহুদূরের গ্যালাক্সিগুলো দেখতে যেমন ছিল, তার রঙিন, স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইসা এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি সিসার যৌথ উদ্যোগে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দলে কাজ করেন এক হাজার জ্যোতির্বিদ। আর সেই দলেরই একজন গর্বিত সদস্য বাংলাদেশি লামিয়া মওলা আশরাফ। জেমস ওয়েব প্রকল্পে কানাডিয়ান টিমের সদস্য হিসেবে ২০২০ সাল থেকে কানাডাপ্রবাসী এই বাংলাদেশি জ্যোতির্বিদ গবেষণা করছেন টরন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে। মহাবিশ্বের রহস্যভেদের যে নতুন উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ, সেই উন্মাদনার ইতিহাসে বাংলাদেশের নামটি গর্বের সঙ্গে যুক্ত করেছেন লামিয়া আশরাফ মওলা। 

১৯৯১ সালে ঢাকায় জন্ম লামিয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয় কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। ও-লেভেল, এ-লেভেল সম্পন্ন করার পর ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি ইউনিভার্সিটিতে। এরপর কানাডার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সেই পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষেত্রেই গবেষণা করেন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে। দূর মহাকাশের গভীর ধুলো থেকে বিচ্ছুরিত আলোর শিহরনে শিহরিত হন। যোগ দেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দলে।  

নিজের পড়াশোনার বিষয়ে লামিয়া জানিয়েছেন, ছোটবেলায় স্কুলেই পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ কতটা প্রবল ছিল তাও একাধিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন লামিয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি ইউনিভার্সিটিতে মূলত পড়তে গিয়েছিলেন নিউরোসায়েন্সে। ওই বিভাগেই ভর্তি হয়েছিলেন। শখের বশে একদিন যান অ্যাস্ট্রোনমির ক্লাসে। সেখানে বড় একটা টেলিস্কোপ ছিল। সেই টেলিস্কোপে চোখ রাখার পর প্রতি সপ্তাহেই একবার করে যেতেন অ্যাস্ট্রোনমির ক্লাসে। ওই ক্লাসে বিগ ব্যাং, গ্যালাক্সি নিয়ে আলোচনা হতো। এরপর থেকে আর আমার নিউরোসায়েন্স পড়ার ইচ্ছা উবে গেল, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল অ্যাস্ট্রোনমি। ল্যাবে কাজ করলেন বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট নিয়ে। তারপর অনার্সে থিসিস করলেন এমআইটির লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অবজারভেটরিতে। তৃতীয় প্রজন্মের লাইগোর সিলিকনের আয়না কীভাবে শীতল করতে হবে, সেটাই ছিল তার গবেষণার বিষয়। সারা দিন বেজমেন্টের ল্যাবে কাজ করতে হতো। এ সময় তিনি ভীষণ মিস করতে শুরু করলেন সেই টেলিস্কোপ। সেই মিস করার অনুভূতি প্রবলতর হতে হতে এক সময় আবেদন করলেন অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডির জন্য। অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিস্কে গবেষণার জন্য চলে গেলেন কানাডার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই ছিলেন ছয় বছর। এরপর ২০২০ সালে কানাডা স্পেস এজেন্সি সিসারের হয়ে যোগ দিলেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ প্রকল্পে।   

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ প্রসঙ্গে লামিয়ার নিজের ভাষ্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হবে, প্রথম দিকে সব ছায়াপথ থেকে আলোর ছটা পাওয়া। অনেক দূরের জিনিস থেকে আলো আসতে বেশি সময় নেয়, কারণ আলো একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে। খালি যত দূরে আমরা দেখি, তত আগের আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। আর টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা হলো টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণের মতো। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ক্ষীণ আলো দেখেছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের আগেরকার একটি ছায়াপথ থেকে। কিন্তু জেমস ওয়েবের বিশেষত্ব হচ্ছে, এই স্পেস টেলিস্কোপ সেই ক্ষীণ আলোকে অতি উজ্জ্বল আর স্পষ্ট করে দেখিয়েছে। কারণ হাবলের চেয়ে জেমসের রেজ্যুলেশন ১০ গুণ বেশি। এ কারণে খুব ছোট এবং ক্ষীণ কোনো কিছু বড়, উজ্জ্বল এবং স্পষ্ট দেখা যাবে। যে কারণে এখন যথেষ্ট আশাবাদী হয়েছেন জ্যোতির্বিদরা প্রথম গ্যালাক্সি কেমন ছিল তা জানার জন্য। কিংবা বিগ ব্যাংয়ের পরে কয়েকশ মিলিয়ন বছরে কী ধরনের ঘটনা ঘটেছিল মহাবিশ্বে? এখন এক্সোপ্লানেটের বায়ুমণ্ডল, অন্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল কেমন দেখার জন্য উদগ্রীব জ্যোতির্বিদরা। 

লামিয়া জানান, তিনি জেমস ওয়েব প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুনিয়াজুড়ে আসে কোভিড-১৯ মহামারি। শুরু হলো লকডাউন। টিমের সঙ্গে বসে কাজ করার বদলে তাই কাজ শুরু হলো ঘরে বসে অনলাইনে। এর মধ্যেই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রাও শুরু করল। যে কারণে প্রকল্পে কাজ করা অধিকাংশ জ্যোতির্বিদ নিজেরা নিজেদের দেখেননি। তার পরিবর্তে জুমে সারাক্ষণ আলোচনা চলল। ভার্চুয়ালি কাজ করতে করতেই রচিত হলো জেমস ওয়েবের রোমাঞ্চকর ইতিহাস। 

বাংলাদেশে জ্যোতির্বিদ্যা এবং মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে লামিয়া মওলা বলেন, বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পড়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। আসলে অ্যাস্ট্রোফিজক্স তো দূরের কথা, ফিজিক্স পড়ারই সুযোগ কম। একেবারে মাস্টার্সে গিয়ে ফিজিক্স মোটামুটি পড়া যায়। তিনি নিজেও ছোটবেলায় অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সম্পর্কে খুব একটা জানতেন না। তার বাবা এ বিষয়ে কিছু বাংলা বই কিনে দিয়েছিলেন। সেগুলো পড়তেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্ব পর্যন্ত তিনি কখনই ভাবেননি যে একজন অ্যাস্ট্রোফিজিস্ট হবেন।

বাংলাদেশে জ্যোতির্বিদ্যা এবং অ্যাস্ট্রোনমির জন্য ফিজিক্সে ব্যাকগ্রাউন্ড এবং রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স খুব জরুরি বলে মনে করেন লামিয়া মওলা আশরাফ। তার মতে, অনলাইনে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে এখন অনেক রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এসব অনলাইন প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যকরভাবে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স চালু করা হয় তাহলে বাংলাদেশের জ্যোতির্বিদরা অদূর ভবিষ্যতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে দৃঢ় বিশ্বাস মহাকাশ গবেষণায় দ্যুতি ছড়ানো লামিয়া মওলা আশরাফের।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা