× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্বজয়ে বিশ্বজিৎ

জাহিদ মুস্তাফা

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:২৭ এএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩২ পিএম

বিশ্বজয়ে বিশ্বজিৎ

বাংলাদেশের সমকালীন চারুশিল্পাঙ্গনের একঝাঁক কৃতী তরুণের মধ্যে অন্যতম প্রিয়মুখ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব বিশ্বজিৎ গোস্বামী। বিষয় ভাবনা, আঁকার ধরন ও কৃৎকৌশল প্রয়োগের উচ্চতা তরুণতর বয়সেই তাঁকে বিশিষ্ট করেছে। তাঁর জন্ম ১৯৮১ সালে পাহাড়-হাওর-নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় জেলা নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে। বাবা বিদ্যুৎ গোস্বামী ছিলেন শিল্পী, মা রমা গোস্বামী গৃহিণী। দাদু মনোরঞ্জন গোস্বামী শান্তিনিকেতনে পড়েছেন, তিনি কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন। বাড়িতে ছিল দারুণ এক সাংস্কৃতিক আবহ। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল তাঁর। ছবি আঁকার সামগ্রী নিয়েই তিনি স্কুলে যেতেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এসএসসি উত্তীর্ণ হন।

২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হন বিশ্বজিৎ। এরপর শুরু হয় তাঁর এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক করে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর করেন- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে।

তরুণ চিত্রকর বিশ্বজিৎ গোস্বামী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শিল্পপটভূমে নিজেকে গড়েছেন একজন আকর্ষণীয় শিল্পী হিসেবে। দেশ-বিদেশের শিল্পভুবনে সুপরিচিত এই শিল্পী ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক ও তেলরঙে চিত্র রচনা করেন। তাঁর বিষয়বস্তুও প্রথাগত- মূলত মানব অবয়ব। তা সত্ত্বেও যেটি তার রচনাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে সেটি তার উপস্থাপনের স্বাতন্ত্র্য আলোছায়ার নাটকীয় প্রয়োগ। একইসঙ্গে উঁচুমানের কৃৎকৌশল প্রয়োগের দক্ষতা তাঁর চিত্রকর্মে ভিন্নতর একটা স্বাদ এনে দিয়েছে।

শিল্পী হিসেবে তাঁর সাফল্যের পাল্লা বেশ ভারী। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথমবর্ষে পড়াকালেই পেন্সিলস্কেচের জন্য তিনি মাধ্যমশ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি ২০০৪-০৫ ও ২০০৬-০৭ সালে বরেণ্যশিল্পী আমিনুল ইসলাম প্রবর্তিত বৃত্তি লাভ করেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ২০০৮ সালের ষোড়শ নবীনশিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি লাভ করেন সম্মান পুরস্কার, ২০১০ সালে এর সপ্তদশ আয়োজনে তিনি নবীনশিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীতে পেইন্টিং বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং এর অষ্টাদশ আয়োজনে তিনি নবীনশিল্পী চারুকলা পুরস্কার অর্জন করেন।

২০০৯ সালে মাত্র আটাশ বছর বয়সে অষ্টাদশ জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি লাভ করেন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক নামাঙ্কিত জাতীয় চারুকলা পুরস্কার, ২০১১ সালে উনিশতম আয়োজনে পান বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার। ২০১৩ সালে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ উদযাপন প্রদর্শনীতে তিনি অর্জন করেন গ্র্যান্ড পুরস্কার। ২০১৪ সালে ষোড়শ এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি পান সম্মান পুরস্কার। এ ছাড়াও তিনি গণচীন, কানাডা ও ভারত থেকে পুরস্কৃত হন।

বিয়াল্লিশ বছরের এই তরুণ শিল্পী এখন ঢাকাভিত্তিক শিল্পী, কিউরেটর ও শিল্প শিক্ষাবিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি। বিশ্বজিৎ তাঁর শিল্পকর্মে বিভিন্ন স্থান এবং বিষয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেছেন। চারুশিল্প ও এর বহুমাত্রিক বিকাশে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ তাঁকে এই সময়ে কয়েকটি শিল্পপ্রকল্প পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। অল্পবয়সেই বিশ্বজিৎ পৃথিবীখ্যাত নানা আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ও সম্মানীত হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কিউরেটর হয়ে বাংলাদেশের নবীনশিল্পীদের সৃজনকাজ তুলে ধরছেন- দর্শক ও শিল্পবোদ্ধাদের সামনে। ঢাকার হাজারীবাগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন। কোভিটকালের কঠিন সময়ে নবীনশিল্পীদের সৃজন অব্যাহত রাখতে শিল্পপ্রকল্প নিয়ে তিনি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনও করেছেন। এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর ১৮তম আসরে তিনি এগারোজন তরুণশিল্পীর সৃজনকর্ম নিয়ে 'বিন্দু-বিসর্গ' নামে একটি অংশের কিউরেটর ছিলেন, যেটি শিল্পবোদ্ধাদের বেশ প্রশংসা পেয়েছে।

ঢাকায় শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামীর তিনটি একক চিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে। ‘ইন মোশন’ শিরোনামে তাঁর তৃতীয় একক প্রদর্শনী আমরা দেখেছি ঢাকার গুলশানে বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে।

এই প্রদর্শনী উপলক্ষে প্রকাশিত ব্রোশিওরে তাঁর কাজ সম্পর্কে আমাদের জ্যেষ্ঠ শিল্পসমালোচক অধ্যাপক আবুল মনসুর লিখেছেন- বিশ্বজিৎ তাঁর ভাবনাকে আবর্তিত করেছেন- মূলত মানবশরীরের ভঙ্গিমা ও অভিব্যক্তির বিম্বিত সাদৃশ্যরূপ আবার কখনও খানিকটা অতিরঞ্জিত উপস্থাপনের মধ্যে। তাঁর চিত্রমালাকে ঠিক 'কনসেপচুয়াল' বলা যাবে না, তবে তাঁর সৃষ্টিকর্মের দৃশ্যরূপ প্রচলিত বিন্যাসের মধ্যেও দর্শকের দৃষ্টিকে চমকিত করতে পারে, তেমনই তাঁর সংবেদে অনুভবযোগ্য অভিঘাত সঞ্চার করতে সক্ষম। মানবশরীরের পেশিছন্দে বিশ্বজিৎ আবদ্ধ থাকেননি। তাঁর যাত্রা পার্থিবতা থেকে ‘মেটামরফসিস’ বা রূপান্তরণের পথে, বস্তুরূপের আপাত সত্য থেকে নিত্যরূপের চিরায়তের সন্ধানে।

বিশ্বজিৎ তাঁর শৈল্পিকযাত্রায় নানা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এমন একটি মানবিক সম্পর্ককে বেছে নিয়েছেন- যা আমাদের সবার জীবনের অপরিহার্য সত্তা- 'মা'। শিল্পীর স্ত্রী তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিলে মায়ের সম্পর্কে তাঁর শ্রদ্ধা যেন বহুগুণ বেড়ে যায়। মাতৃভক্তির এই থিম নিয়ে তিনি ইন্টার অ্যাকটিভ ধারণাসমৃদ্ধ বেশ কতক শিল্প সৃজন করেছেন ও গড়েছেন। রিকশা শিল্পের ধারণা ও এর উজ্জ্বল বর্ণপ্রীতিকেও তিনি প্রয়োগ করেছেন। নানা দেশের নানা বর্ণের নারীর হাতে পানপাতার ফর্মে মা লেখা তুলে দিয়ে তার ছবি তুলেছেন। মনে পড়ে- কবি জসীমউদ্‌দীনের লেখা কবিতার পঙ্‌ক্তি -

নানান বরণ গাভীরে তার একই বরণ দুধ, জগৎ ভ্রমিয়া দেখি একই মায়ের পূত!'

তরুণ একজন চিত্রশিল্পী হয়েও তাঁর সৃজনে, কর্মে, আদর্শে, ভাবনায়, অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজের সাংগঠনিক উদ্যমে বিশ্বজিৎ অনন্য। স্ত্রী শিল্পী তানিয়া সুলতানা বৃষ্টি ও কন্যা বরিষ ও শিশুপুত্র এবং বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন নিয়ে তাঁর সংসার ও সৃজনজগৎ চলছে সমানতালে।

আর বিশ্ব জিততেই তো বাংলায় বিশ্বজিতের আবির্ভাব!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা