× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৫৭ এএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৫ পিএম

একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

আজকের বাংলাদেশের অটিজম তথা প্রতিবন্ধীদের এই যে সামাজিক স্বীকৃতি, শুধু এইটুকুই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অমরত্বের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। যাদের পরিবারে বা পরিচিতের মধ্যে একজন অটিস্টিক মানুষ আছেন শুধু তারাই জানেন আমাদের এই রূঢ় সমাজব্যবস্থা ক্ষেত্রবিশেষে কতটা কদর্য হতে পারে। স্বাধীনতার একান্ন বছরে এসে বাংলাদেশের অর্জনগুলো গুনে-বলে শেষ করার মতো নয়।

অনেক দিন আগের কথা, বরং বলা ভালো অনেক বছর আগের কথা। আমার বাবার ব্যাচমেটরা একটা ক্লাব তৈরি করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের যে বন্ধন তা তাদের পরিবার এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ছিল এই ক্লাবটির অনেকগুলো উদ্দেশ্যের একটি। পাশাপাশি একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানো আর তাদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক উৎকর্ষেও তারা ভূমিকা রেখে গেছেন এই ক্লাবটির মাধ্যমে। তাদের সেই উদ্দেশ্য পুরো মাত্রায় সফল, কারণ তারা বেশিরভাগই এখন প্রয়াত হলেও তাদের সন্তানদের অনেকের মধ্যেই এখনও দারুণ সখ্য বিদ্যমান। আমার বাবার তেমনই একজন সহপাঠী একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী। তার দু’সন্তানের একজন ছিলেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আমার মনে আছে শিক্ষিত এই পরিবারটির সেই সন্তানটিকে নিয়ে নানামুখী বিড়ম্বনার কথা। বাবার সহপাঠীদের বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে চলায়-মেশায় আমাদের ওই বড় ভাইটির কোনো সমস্যা না হলেও বাকি পুরোটা সমাজের কাছ থেকে তাকে সরিয়ে-লুকিয়ে রাখাটাই ছিল শিক্ষিত-প্রতিষ্ঠিত ওই পরিবারটির সার্বক্ষণিক চ্যালেঞ্জ।

সেই জায়গাটা থেকে সরে এসেছে আজকের বাংলাদেশ। আমার সহকর্মী থেকে শুরু করে ঘনিষ্ঠজন আর বন্ধুবান্ধব, এমন অনেকেরই অটিস্টিক সন্তান আছে। আমি নিশ্চিত সেদিনের বাংলাদেশও আমার প্রয়াত পিতার ওই সহপাঠীর মতো আরও অনেক পরিবারেই এমনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান ছিলেন। সেদিনের বাংলাদেশে খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া সবার কাছে বিষয়টি অজানাই থেকে যেত, কিন্তু আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা ঠিক এর বিপরীত। আজকের বাংলাদেশে কোনো পিতা-মাতাই তার অটিস্টিক বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তানকে ঘরের চার দেয়ালের পেছনে লুকিয়ে রাখেন না। তারা এগিয়ে আসেন এবং তাদের সন্তানকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করায় উদ্যোগী হন। এমনি শিশুদের জন্য আজ স্কুল থেকে চিকিৎসা এ সবই এদেশে বিদ্যমান। আর এই কাজে নেতৃত্ব দেওয়ায় আরও নানা ক্ষেত্রের আরও অনেক বিষয়ের মতোই এ বিষয়েও বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। এর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদেরই একজন বাঙালি এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের পরামর্শক নিযুক্ত হয়ে পুরো জাতিকে গর্বিত করেছেন। তিনি হলেন জাতির পিতার দৌহিত্রী এই মহীয়সী নারী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

আমি পেশায় যেহেতু চিকিৎসক এবং পাশাপাশি এদেশে নতুন কিছু থেরাপিউটিক প্রসিডিউর প্রবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আমি এ কথা হাড়ে হাড়ে বুঝি যে এই কাজটি কতটাই কঠিন। আর কাজটি যদি করতে হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের প্রচলিত ধরন, সমাজের প্রচলিত ধারণা আর সামাজিক কুসংস্কারের প্রবহমান গড্ডলিকা প্রবাহের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তবে আমি হলফ করে বলতে পারি সেই কাজটি এ সমাজে এক কথায় অসম্ভব, বরং বলা ভালো অসম্ভবের চেয়েও বেশি কিছু হলে তাই-ই। বাংলাদেশে অটিজমকে সব সংস্কার আর কুসংস্কারের বেড়াজাল ছিন্ন করে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার সে দুরূহতমর চেয়েও দুরূহতম কাজটি করে দেখিয়েছেন এই মহীয়সী নারী।

আজকের বাংলাদেশের অটিজম তথা প্রতিবন্ধীদের এই যে সামাজিক স্বীকৃতি, শুধু এইটুকুই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অমরত্বের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। যাদের পরিবারে বা পরিচিতের মধ্যে একজন অটিস্টিক মানুষ আছেন শুধু তারাই জানেন আমাদের এই রূঢ় সমাজব্যবস্থা ক্ষেত্রবিশেষে কতটা কদর্য হতে পারে। স্বাধীনতার একান্ন বছরে এসে বাংলাদেশের অর্জনগুলো গুনে-বলে শেষ করার মতো নয়। আওয়ামী লীগের যে পাঁড় সমর্থক এমনকি তার পক্ষেও, পুরো দেশের কথা তো ছেড়েই দিন, শুধুমাত্র তার নিজের সেক্টরে আওয়ামী লীগ সরকারের এক যুগের কিছু বেশি সময়ব্যাপী শাসনকালে যে বিপুল, বিশাল অর্জন তার ফিরিস্তি তুলে ধরা অসম্ভব। বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। কোভিড আর তারপর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে উঠে আমাদের উন্নয়নের মহাসড়ক যাত্রা অব্যাহত আছে। আমরা গণতন্ত্রকে এদেশে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এখন নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম কল্যাণমুখী রাষ্ট্রও বটে। কোভিডকালে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য আর এমনকি এখনও বিনামূল্যে কোভিড ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা কিংবা বিশ্বের বৃহত্তম গৃহায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন- এসব কিছুই এর প্রমাণ।

তারপরও কোনো কোনো জায়গায় আমাদের ঘাটতিটা চোখে পড়ার মতো। একাত্তরের চেতনায় একটি কুসংস্কারমুক্ত সমাজ আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জায়গায় আমরা এখনও খানিকটা পিছিয়ে। এই জায়গাটায় একদিন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর এখন দিয়ে চলেছেন তাঁর ঔরসজাত শেখ হাসিনা। এই কাজটা সম্পন্ন করতে আগামী দিনে যে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে তার নেতৃত্বটাও আসতে হবে এই পরিবারটির ভেতর থেকেই। এই পরিবারের কর্তাব্যক্তির হাত ধরেই একদিন দ্বিজাতি তত্ত্বকে অসাঢ় প্রমাণ করে মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রটি। এখন এই পরিবারটিই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে দেশটাকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

আগামীর পরিবেশবান্ধব স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট নাগরিকরা ব্যবহার করবে স্মার্ট কার্ড। সেখানে যেমন থাকবে না কাগুজে কারেন্সি নোট, তেমনি সেই বাংলাদেশের অফিস-আদালতও হবে পেপারলেস। সেই স্মার্ট বাংলাদেশে মানুষ খাবে কীটনাশক আর ভেজালমুক্ত অর্গানিক খাবার, আর সে দেশের রাস্তাঘাট রাতের আঁধারে উদ্ভাসিত হবে নিউক্লিয়ার বিদ্যুতের আলোয়। সেই স্মার্ট বাংলাদেশে যখন একাধিক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আর ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্কের কল্যাণে বিশ্বটা থাকবে হাতের তালুতে, তখন সেখানে যদি থাকে মৌলবাদীর আস্ফালন কিংবা সামাজিক কুসংস্কারের বাতাবায়ন, সেক্ষেত্রে আমি বিশ্বাস করি যে কেউই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে এটুকুর জন্যই সেই স্মার্ট বাংলাদেশ পরিপূর্ণতা পাবে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, অটিজমকে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তিনি যে স্মার্ট বাংলাদেশকেও ওইটুকু কলঙ্কমুক্ত করায় একইভাবে ভূমিকা রাখবেন সে বিষয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অনুপস্থিতি সন্দেহাতীত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা