× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নতুন প্রজন্মের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:১৪ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

এই নতুন সময়ে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, যা মোকাবিলার জন্য আমাদের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলারত অবস্থায় চলে এসেছে মুক্তবাজার অর্থনীতি-পরবর্তী বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি গণতন্ত্রায়নের সংকটের মধ্যে চলে এসেছে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকোভিড-২০১৯ অতিমারি সারা বিশ্বকে স্থবির ও ভীতির মধ্যে ফেলে দিলেও এর নিয়ন্ত্রণ ছিল আশাতীত। তবে এর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট মাঝে মাঝে চোখ রাঙাচ্ছে। এখনও এর উৎসস্থল চীনের অনেক এলাকা লকডাউনে। কোভিড যেকোনো সময় আবার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে মর্মে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। এরই মধ্যে কোভিড সংকটে ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা প্রতি চারজন যুবকের মাঝে একজনেরও বেশি বেকারত্বের কবলে পড়েছেনএকবিংশ শতাব্দীর দুদশক যেতে না যেতেই অন্তত দুটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত বিশ্বায়নের জটিল শৃঙ্খলে আবদ্ধ প্রতিটি দেশকে স্পর্শ করছে। এমতাবস্থায় আমরা প্রবেশ করছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগেযেখানে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্প ও উৎপাদন হবে স্বয়ংক্রিয়। ইতোমধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। এখানে মানুষের হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে মেশিন টু মেশিন ও ইন্টারনেট অব থিংসকে একত্রীকরণের মাধ্যমে রোবোটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজিকোয়ান্টাম কম্পিউটিং আধিপত্য বিস্তার করবে আর এসব স্মার্ট প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন স্মার্ট জনশক্তি।

অলঙ্করন : প্রবা

পাশ্চাত্য দেশগেুলো ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে। স্মার্ট প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। আমরা আমাদের তরুণ-তরুণীদের সেভাবে প্রস্তুত করছি তো? আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল তো?

১৯৮০র দশকে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেই তাদের সরকারি ও বেসরকারি চাকরির জন্য যোগ্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন ব্যক্তিরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ ছিলেন। এর তিন দশকের মধ্যেই বাংলাদেশসহ বিশ্বে মানবসম্পদের সংজ্ঞায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন, যাদের বেশিরভাগই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন। অপরদিকে পরিবারের মধ্যে কাজ করেন বেতন পান না এ রকম অর্থনৈতিকভাবে অমূল্যায়িত লোকের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ। বাংলাদেশে বেকার বা ছদ্ম বেকারত্বের হারের কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। আইএলও বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক মনে করে ১৪.২ শতাংশ। আর কোভিডোত্তর পরিস্থিতিতে এটি আরও বেড়েছে।

আয়তন অনুযায়ী দেশে পাবলিক প্রাইভেট মিলিয়ে যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তা অনেক দেশেই নেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী পড়াচ্ছে, কারা পড়াচ্ছেন, কাদের মাধ্যমে চলছে; সে প্রশ্ন বারবার আসছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে যেসব বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া হয় সেসবের কেবল মান নিয়ে নয়; পরিবর্তিত বিশ্বে দূরে থাক, বাংলাদেশেই এসব ডিগ্রি বা ডিসিপ্লিনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আমাদের তরুণ-তরুণীরা দেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে দূরে থাক, নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নেই ভূমিকা রাখতে পারছেন না একজন উচ্চশিক্ষিত তরুণ যখন ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর বিজ্ঞাপন দেয়ালে সেঁটে দেন, তখন কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কতটা সংকট তৈরি করতে পারে এটা যেমন সামনে আসে; আমরা কী ডিগ্রি তাকে দিলাম যা তার ভাতের সংস্থান করতে পারল না সেটাও সামনে চলে আসে ডিগ্রির প্রধান উদ্দেশ্য কর্মে প্রবেশের নিশ্চয়তা নয়; বরং মানবজীবনে নতুন নতুন মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো সেটাও যদি মেনে নিই তাহলেও ওই তরুণের ভাতের বিনিময়ে টিউশনির পোস্টার সাঁটানোর ব্যাপারটিও মানা যায় না এভাবে উচ্চশিক্ষিত বেকার সৃষ্টির পাশাপাশি মূল্যবোধ-বিবর্জিত তরুণ সমাজ গড়ে উঠছে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়

আইএলওর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশ কাজও খুঁজে পাচ্ছেন না; কোনো প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নিষ্ক্রিয় থাকা তরুণ-তরুণীর হার ২৭.৪ শতাংশ। তরুণীদের মধ্যে এ হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের জনগণের বয়স কাঠামো তথা তরুণ-তরুণীদের ভালো একটি হার আমাদের যেখানে সম্পদ তথা চতুর্থ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যোগ্যতর করে তোলার কথা; সেখানে সেই তরুণ-তরুণীর একটি অংশ সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেনএভাবে অরক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে আমরা নতুন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু ব্যর্থ হব না; নতুন প্রজন্মকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দিচ্ছি। এদিকে ২০০৯ সালের পর ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা গমনের হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ব্রিটেন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ প্রচুর বিদেশি মুদ্রা আয় করছে। অর্থনৈতিক মন্দায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের আয় বাড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশে যেহেতু লেখাপড়া করে চাকরির সংকট, তাই অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যেহেতু স্টুডেন্ট ভিসা সহজ, তাই অনেকে জমিজমা বিক্রি করে বা সঞ্চয় ভেঙে সন্তানদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন। আর উন্নত দেশগুলো আমাদের মেধাবীদের আকৃষ্ট করে তাদের দেশে নিয়ে সেখানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে কাজে লাগাবে এটি তো অনেক পুরোনো নীতি। এভাবে আমাদের অর্থ-মেধা দুটিই পাচার হচ্ছে।

আমাদের নতুন সময়ের নতুন প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন উদ্যোগের প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমরা একটি সুরক্ষিত ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারিনি। কয়েক বছর পরপরই আমরা কেবল নতুন নতুন সিস্টেম নিয়েই ব্যস্তঅচিরেই এই সিস্টেম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে নতুন সময়ে নতুন প্রজন্মের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন নতুন উদ্যোগ।


লেখক : অধ্যাপক ও ভাইস চ্যান্সেলরমেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসিলেট

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা