প্রজন্মের ভাবনা
সিয়াম মাহমুদ
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৪৯ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
এক সময় টেলিভিশন ছিল পারিবারিকভাবে বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। টেলিভিশনকে ঘিরে অনেকেরই মধুর স্মৃতি রয়েছে। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার বিটিভিতে (পরে সবগুলো চ্যানেলে) বাংলা সিনেমা দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করত অনেক পরিবার। সিনেমা বাদেও ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা ছিল। শিশুদের জন্য নির্ধারিত অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। বাঙালি রুচি ও সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সেখানে ঠাঁই পেত বাঙালিয়ানা। সময়ের পালাবদলে টেলিভিশনের জায়গা দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেকের রুচি।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে এখন প্রত্যেকেই কনটেন্ট তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষামূলক প্রচারণা কিংবা আদবকায়দার বালাই নেই। অপসংস্কৃতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ চর্চার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেকেই ভালো মানের ও শিক্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করেন। তারা দেশীয়-আন্তর্জাতিক মানের ও তথ্যনির্ভর কনটেন্ট তৈরি করছেন। কিন্তু স্মার্ট চিন্তা কিংবা
সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে খুব কম মানুষই কনটেন্ট বানাচ্ছেন। ভাইরাল হওয়ার চিন্তায় মগ্ন এ সমাজ। সবার মধ্যে লাইক, কমেন্ট, সাবস্ক্রাইভ
আর ভিউয়ার্স বাড়ানোর এক নেশা। এ নেশায় যে যেভাবে পারছে সেভাবে মানুষকে বিনোদনের নামে
করে যাইচ্ছেতাই ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে। ভিনদেশের অসুস্থ সংস্কৃতিকে টেনে এনে
বিকৃত অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অপবিনোদন এ সমাজের মস্তিষ্ক নষ্ট করছে। এসব কনটেন্ট একজন রুচিবোধসম্পন্ন মানুষ কখনও স্বাভাবিক
অবস্থায় দেখতে পারেন না। সামাজিক মূল্যবোধ হারানোর ফলে ছেলেমেয়েরা এ ধরনের ভিডিও
কনটেন্ট বানাতে সময় অপচয় করছে।
ভিডিও
কনটেন্ট বানাতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপকর্মে। কেউ কেউ টিকটক, ইউটিউব ও ফেসবুকে তাদের কনটেন্টের মডেল বানানো ও কাজ
শেখানোর কথা বলে আড়ালে নারী পাচার করার তথ্যও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। আবার কেউ দেখি নিজেকে গায়ক প্রমাণ করতে গিয়ে রবীন্দ্র-নজরুল সংগীতের বিকৃতি করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, কেউই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন। অন্য কেউ একটি কনটেন্ট বানিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন দেখে
অনেকেই তা অনুকরণের চেষ্টা করেন। অনুকরণপ্রিয়তা থেকেই আসে জনপ্রিয়তার ভাবনা। মাথায় যা আসে, বুঝে না বুঝে তা নিয়েই ভিডিও করে আপলোড করছে। মানুষ তার
ভিডিও পছন্দ করছে না। বিচ্ছিরি ভিডিও দেখে কেউ হা হা রিয়েক্ট দিচ্ছে; আবার কেউ রেগে অ্যাংরি রিয়েক্ট দিচ্ছে। তার কনটেন্ট নিয়ে
মানুষ নানা সমালোচনা করছে। কিন্তু তাতে তার কি? আলোচনা-সমালোচনা
করার ফলে তো সে ভাইরাল হয়ে গেছে। তার ভিডিওর মিলিয়ন ভিউয়ার্স হচ্ছে, এটাই তার লাভ! ভিউয়ারের
মাধ্যমেই তিনি আয় করছেন।
অনেকের
রুচি এতটাই নিচে নেমেছে, সুযোগ পেলে শোভন নয় এমন কিছুও ভিডিও হিসেবে
ধারণ করে আপলোড করছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মোচন করতে গিয়েও
সতর্কতা নেই। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিনোদন প্রয়োজন। হাসি, কান্না, প্রেম, ভালোবাসা সবকিছুর মিশ্রণ থাকে বিনোদনে। কিন্তু সেই বিনোদন
যেন আমাদের অসুস্থ সমাজের দিকে ধাবিত না করে।
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা