ইকরামউজ্জমান
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৫৭ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
ক্রীড়াঙ্গনে তারুণ্যের
অপরিমেয় শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার
করার মধ্যেই নিহিত আছে
টেকসই উন্নতি আর সমৃদ্ধির
হাতছানি। ক্রীড়াঙ্গনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য আর
নীতিকে ধারণ করা সংগঠক
খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্ট সবার
জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবাই মিলে
এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ গণজাগরণের পাশাপাশি
প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। সবার
জন্য ক্রীড়াÑ এই
মূল্যবোধে দীক্ষিত হওয়া।স্বপ্ন মানুষকে
অনুপ্রাণিত করে, এগিয়ে
নিয়ে যায়। তবে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভেতরের
ইচ্ছাশক্তি এবং বিশ্বাস। সম্মিলিত
মানুষ কখনও পরাজিত হয়
না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে
বিজয় তার প্রমাণ।
তারুণ্য এমন
একটা জিনিস এটা সব
সময় তাড়া করে ফেরে। হৃদয়ে
তরুণ না হলে কখনও
এগোনো সম্ভব নয়। ক্রীড়াঙ্গনের
জীবনে এটি প্রমাণিত। তারুণ্য
নিজের শক্তিতে সব সময়
জ্বলে ওঠে। এরাই দেশে দেশে
ক্রীড়াঙ্গনে চিহ্নিত ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে। তরুণরা ক্রীড়াঙ্গনে
ভবিষ্যতের পথ খুঁজে নিচ্ছে।
এদের সৃষ্টিশীলতা তো ছক
মেনে চলে না। এদের
প্রাণশক্তি অনিঃশেষ। এরা থামতে
জানে না। এদের গুরুত্ব
এবং আবেদন অন্য রকম। তরুণরা
জীবনতরীকে ঝড়ের বিপরীতে চালাতে
ভয় পায় না। তরুণরা
আমাদের এগিয়ে চলায় প্রেরণা
জোগায়। আর তাই সুন্দর
তারুণ্যের দিকে আমাদের মনোযোগ
দিতে হবে। এদের ওপর
আস্থা এবং বিশ্বাস রাখতে
হবে। তরুণদের বার্তা দিতে
হবে দেশের ক্রীড়াঙ্গন তাদের
পাশে আছে। তাদের নিয়ে
ভাবছে। ক্রীড়াঙ্গনে তরুণদের সম্পৃক্ত
করার চিন্তাকে বড় করে
দেখার কোনো বিকল্প নেই।
ক্রীড়াই পারবে দেশের উদ্যম
তারুণ্য যুবশক্তিকে একত্রিত করার
মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সুশৃঙ্খল
জাতি গঠনের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে
দেশের পরিচিতি এবং সুনাম
প্রতিষ্ঠিত করতে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই
বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের উজ্জ্বল
দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বয়সভিত্তিক কয়েকটি
দলীয় এবং একক খেলায়
বাংলাদেশের ছেলে ও মেয়েরা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য
প্রদর্শনের মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছে।
এর স্বীকৃতিও মিলেছে এই
স্তরে যদি সম্ভব হয়Ñ তাহলে পরের স্তরে
অনেক পেছনে হটে যাওয়া
দেখতে হবে কেন। এখানেই
প্রয়োজন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিন্তাশীল
বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার আওতায় সামর্থ্যের
মধ্যে কাজ করতে পারলে
সাফল্যকে ধারাবাহিকতার সঙ্গে ধরে
রাখা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক
ক্রীড়াঙ্গন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
কঠিন হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে
হবে। এখানে কোনো ধরনের ‘শর্টকাট’ পদ্ধতি নেই।
সমস্য আছে। সমস্যা থাকবে।
ক্রীড়াঙ্গনে বিরাজমান কাঠামোর মধ্যে
সমাধান খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের
রয়েছে বিশাল এক সম্ভাবনাময়
তরুণ সমাজ, যেটি অনেক
বড় সম্পদ। অনেক দেশের
এই সম্পদ নেই যা আছে আমাদের।
আর এই সম্পদকে কাজে
লাগানোর এখনই সময়।
ক্রীড়াঙ্গনে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসছে।
সামাজিক বাধা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে
জীবনকে সফল ও সুন্দর করছে। এদের পরিশ্রম
ও সাধনায় এগিয়ে চলেছে
বিভিন্ন খেলায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। এসব ছেলে
ও মেয়ের জীবনকাহিনি গল্প-উপন্যাসকেও হার মানায়।
এদের অধিকাংশের শৈশব ও
কৈশোর কেটেছে চরম দুঃখ
ও দারিদ্র্যের মধ্যে। এরপরও
এরা দমে যায়নি। মনোবল
হারায়নি। প্রত্যয়ের সঙ্গে পরিশ্রম
অনুশীলনের মাধ্যমে নিজকে যোগ্য
হিসেবে তৈরি করে এগিয়ে
এসেছে। এরা গোটা সমাজের
জন্য প্রেরণা। এ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পাশে
দাঁড়ানো সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের
ক্রীড়া ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে
সব সময় চিহ্নিত হয়ে
থাকবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ফলদায়ক, সময়ের প্রয়োজনীয়তা পড়তে পেরে
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে
উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় খেলার
ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ক্রীড়া সংগঠকদের
সম্পৃক্ত করে তাদের সর্বাত্মক
সহযোগিতায় দেশজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ে
থেকে আয়োজিত প্রথম বাংলাদেশ
যুব গেমস-২০১৮। ২১টি খেলা নিয়ে (দলীয় ও একক)
আয়োজিত এই গেমসে অংশগ্রহণকারী
ছেলে ও মেয়ে খেলোয়াড়
ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তা, মিট ও ট্যাকটিক্যাল অফিসিয়াল
এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সহসম্পৃক্ত
ছিলেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার
মানুষ। দেশজুড়ে যুব গেমস
আয়োজনের চিন্তা এবং পরে
গেমস যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত
হয় এর জন্য ক্রীড়ানুরাগী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বাত্মক
সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা এবং
উৎসাহ স্মরণীয় হয়ে আছে।
যুব গেমস
আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোÑ তৃণমূল পর্যায়ে থেকে
তরুণ ও তরুণীদের খেলাধুলায়
আরও অধিক অংশগ্রহণ করার
জন্য উৎসাহিত করা। গেমসের
মাধ্যমে বিভিন্ন খেলায় সম্ভাবনাময়
ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় ও
ক্রীড়াবিদ খুঁজে বের করা।
যারা একটি পর্যায় থেকে
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে
দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
প্রথম গেমস থেকে প্রাপ্তি
খুব উৎসাহব্যঞ্জক। প্রথম পর্যায়
থেকে ৩৬ জন মেয়ে
ও ছেলে খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াবিদ
বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছে।
গত চার বছরে পর্যবেক্ষণে
উঠে এসেছে প্রথম যুব
গেমসে যারা দলীয় এবং
একক খেলায় অংশ নিয়েছিল, এদের
কেউ কেউ এখন স্ব
স্ব খেলায় আগামীর আশাসঞ্চারী
হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তঃউপজেলা
এবং জেলা পর্যায়ে প্রতিটি
ডিসিপ্লিনে (দলীয় এবং
এককে) ইতিবাচক প্রাপ্তি
মিলেছে বলে দাবি করেছেন
গেমসের সঙ্গে সংযুক্ত একজন
ট্যাকনিক্যাল কর্মকর্তা। শেখ কামাল
দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসে
স্থান হয়েছে ২৪টি খেলার
ডিসিপ্লিনের।
বাংলাদেশ অলিম্পিক
অ্যাসোসিয়েশন সবার সম্মতিতে দ্বিতীয়
যুব গেমস থেকে এর
নামকরণ করেছে ‘শেখ
কামাল বাংলাদেশ যুব গেমস’। দ্বিতীয়বারের মতো এই
প্রতিযোগিতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ
থেকে শুরু করে প্রথম
পর্ব আন্তঃউপজেলা, দ্বিতীয় পর্ব
আন্তঃজেলা কম্পিটিশন ইতোমধ্যেই শেষ
হয়েছে। চূড়ান্ত পর্ব বিভাগ
নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ২৬
ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ ঢাকায়। অলিম্পিকের দায়িত্বশীল
সূত্র জানিয়েছেন চূড়ান্ত পর্বের
প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। শেখ কামাল
দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুবক গেমস-২০২৩ প্রথমবারের বিভিন্ন
ধরনের অভিজ্ঞ থেকে শিক্ষা
নেওয়ায় এবার ভালোভাবেই এ
পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা
যায়, এবারের গেমসে
খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ, সংগঠক, গেমসের বিভিন্ন
ধরনের অফিসিয়াল এবং অন্যরা
নিয়ে প্রায় ষাট হাজার
মানুষ গেমসের সঙ্গে জড়িত
হয়েছেন।
লেখক : ক্রীড়া বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি, এআইপিএস এশিয়া