× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দ্য ডন এর বিশ্লেষণ

পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান বিতর্ক

ইসমাইল খান

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

পেশোয়ার শহরের ইতিহাসে এমন বীভৎস ঘটনার নজির বোধ হয় আর নেই। ঘটানাটি ঘটেছেও এমন এক জায়গায়, যেখানে নগর পুলিশের হেডকোয়ার্টারসহ আরও ছয়টি নিরাপত্তা বাহিনীর দপ্তর অবস্থিত। মাত্র একটি পথেই সেখানে যাতায়াত করা যায়। সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা এতটাই কঠোর, কেউ গেলেই তার পরিচয়পত্র দেখা হয়। নিয়মিত যানবাহনে তল্লাশি করা হয়। সেখানে একজন জঙ্গি, তাও কি-না বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করেছেÑ এটি বিস্ময়কর। কাজটি দুঃসাহসিকও বটে, কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হলো তাও একটি রহস্য। খোদ তদন্তকারী সংস্থাও স্বীকার করে নিয়েছে, এই ঘটনার তদন্তের কাজটি কঠিন। কারণ ওই জায়গায় যতগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনী রয়েছে তাদের সদস্যের সংখ্যা আনুমানিক ২ হাজার। তাদের গতিবিধি বাদেও জায়গাটিতে রোজ ২শ থেকে ৩শ বহিরাগতও আসেন। প্রত্যেকের পরিচয় শনাক্ত করার পাশাপাশি একটানা সিসিটিভি ফুটেজে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খুঁত শনাক্ত করার কাজটি সময় ও শ্রমসাধ্য হবে। অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপের আড়াল থেকে ফরেনসিক তথ্য-প্রমাণ খুঁজে বের করাও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এ ঘটনা থেকে বেশকিছু প্রশ্ন দাঁড় হয়েছে যার উত্তর অনুসন্ধান জরুরি।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) পেশোয়ারে জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, আত্মঘাতী ওই বোমা হামলা করেছে ২৫ বছর বয়স্ক যুবক হুজাইফা। এটি যে তার আসল নাম নয় তা সহজেই অনুমেয়। কারণ জঙ্গি সংগঠনগুলো সদস্যদের আলাদা নাম দিয়ে থাকে। পুলিশ ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটো ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপের আড়ালে তা এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে নাদরা ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা দুরূহ কর্ম। আপাতত ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করার কঠিন কাজটি সম্পন্ন করা গেলে তদন্তের পথ কিছুটা সুগম হবে। সংগত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, ওই জঙ্গি এমন নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর প্রবেশ করল কী করে? উঁচু দেয়াল বেষ্টিত স্থানটিতে নিরাপত্তাকর্মীরা দিন-রাত টহল দেন। ওই জঙ্গির পক্ষে কোনো নিরাপত্তাকর্মীর মুখোমুখি না হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এমনকি কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়েও দিয়েও ঢোকা অসম্ভব। তবে এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না, একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা কাঠামো না থাকলে ৭-৮ জন নিরাপত্তা প্রহরীর পক্ষে রোজ ২ হাজারেরও বেশি মানুষের পরিচিতি শনাক্তের কাজ করা কঠিনই বটে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ঘাটতির বিষয়টি আইজিপি মোয়াজ্জেম ঝা-ও মেনে নিয়েছেন। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই হামলা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। খাইবার পাখতুনখাওয়ার জেলার অনেক জায়গাতেই জঙ্গি হামলার ঘটনা ক্রমে বেড়েই চলেছে। তাদের পুরো মনোযোগও সেখানেই ছিল। ঘটনাটির তদন্তে নিযুক্ত এক পুলিশ অফিসার বলেন, জঙ্গিরা এ সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল। তাদের তৎপরতার কিছু বিষয় হয়তো আমরা অত গুরুত্ব দিয়ে বিচার করিনি।

সব মিলিয়ে তদন্তকারীরা একটি প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবেন, এ হামলার মূলহোতা কে বা কারা; হামলাটিই বা কীভাবে সম্ভব হলো? ওই জঙ্গি কি মূল ফটক দিয়েই প্রবেশ করেছে? প্রবেশের সময় তার কাছে কি বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল? নাকি ভেতরের কেউ তাকে সহযোগিতা করেছে? পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সন্দেহ এমন কাজ ভেতরের সাহায্য ছাড়া করা সম্ভব নয়। কাকতালীয়ভাবে সাম্প্রতিক এই জঙ্গি হামলার সঙ্গে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সংঘটিত আরেকটি মর্মন্তুদ ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। পেশোয়ারেই আর্মি পাবলিক স্কুলে গণহত্যার ঘটনাটি স্মরণ করছি। তখনও তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গি সংগঠন হামলা করলেও এই হামলার মূলহোতা ছিলেন এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ঘটনাটি এতটাই বর্বরোচিত যে, সে সময়কার নৃশংস জঙ্গি সংগঠনগুলোও এর দায় স্বীকার করেনি। ওই ধারণাও বদলে গেল ৩০ জানুয়ারির ঘটনায়। হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিটিপির মোহমান্দ অংশ (পূর্বে জামাতুল আহরার বলে পরিচিত) দায় স্বীকার করে জানায়, তাদের নেতা উমর খালিদ খুরাসানির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা পরিচালনা করা হয়। স্মর্তব্য, ২০২২ সালের আগস্টে উমর খালিদ খুসারাসানি আফগানিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। কিছুক্ষণ পরই টিটিপির কেন্দ্রীয় অংশ থেকে দায় না নেওয়ার ঘোষণাও আসে। তারা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়, তারা আদর্শিক অবস্থান থেকে মসজিদে কখনই হামলা পরিচালনা করবে না। তবে এই বক্তব্যের মাধ্যমে তারা মূলত তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে চান বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বোমা হামলার দায় যে জঙ্গি নেতা স্বীকার করেছেন, তাকে সম্প্রতি বেলুচিস্তানের জোব বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় টিটিপির কেন্দ্রীয় অংশ।

ওই হামলার পর প্রাদেশিক সভার মন্ত্রীরা আফগানিস্তানে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা খুঁজে পাচ্ছেন। অবশ্য আফগানিস্তানও পাল্টা প্রত্যুত্তর দিয়েছে। দেশটির ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি পরামর্শ দিয়েছেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থার দিকে নজর দিতে। অর্থাৎ ওই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা না খুঁজে দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা জানা বেশি প্রয়োজন। তার বক্তব্য অনুসারে, আফগানিস্তানকে জঙ্গিবাদের মূল কেন্দ্র ভেবে নিজেদের দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে পাকিস্তানের মন্ত্রীদের বের হয়ে আসতে হবে। এ বিষয়টিও অস্বাভাবিক নয়। কয়েক বছর ধরেই খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পেশোয়ার পুলিশও তাদের আউটপোস্টে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। তারপরও প্রদেশটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতেই ছিল। সেই শান্তি বিঘ্নিত হলো একটি বিস্ফোরণে। দেয়াল বেষ্টিত হওয়ায় বিস্ফোরণের দমকে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ ঘটনা থেকে অভ্যন্তরীণ জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার গুরুত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুধাবন করতে পারছে। কারণ ঘটনার সুলুকসন্ধান করতে গিয়েই তাদের অবস্থা কাহিল হওয়ার মতো।

 

লেখক : রেসিডেন্ট এডিটর, দ্য ডন

দ্য ডন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত; ভাষান্তর : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা